জেলা জুড়ে জখম প্রায় ৫০

খুশির ইদে মোটরবাইক ছুটিয়ে দুর্ঘটনা, মৃত দুই

খুশির ইদ বদলে গেল বিষাদে! দুই গ্রামের মধ্যে ব্যবধান বড়জোড় পাঁচ কিলোমিটার। দৌলতাবাদের সেই ছয়ঘরি পশ্চিমপাড়া ও ঘাসিপুর এ দিন এক হয়ে গেল শোকের আবহে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৮ জুলাই ২০১৬ ০০:৩৯
Share:

দুর্ঘটনায় জখম খড়গ্রামের আজমির শেখ। —নিজস্ব চিত্র

খুশির ইদ বদলে গেল বিষাদে!

Advertisement

দুই গ্রামের মধ্যে ব্যবধান বড়জোড় পাঁচ কিলোমিটার। দৌলতাবাদের সেই ছয়ঘরি পশ্চিমপাড়া ও ঘাসিপুর এ দিন এক হয়ে গেল শোকের আবহে। বৃহস্পতিবার সকালে ছয়ঘরি পঞ্চায়েত কার্যালয়ের ঠিক সামনে বহরমপুর-জলঙ্গি রাজ্য সড়কের উপরে দুটি মোটরবাইকের সংঘর্ষে মারা যান ঘাসিপুরের ইসাকুল শেখ (২৪) ও ছয়ঘরি পশ্চিমপাড়ার রাজিবুল ইসলাম (২০)। মোটরবাইকের দু’জন আরোহী ওই দুই গ্রামের জামিরুল শেখ ও মনিরুল শেখ গুরুতর জখম হয়ে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ইদের সকালে পরিবারের সকলের সঙ্গে গ্রামের ইদগাহতে নমাজ পড়তে যায় স্থানীয় হাজিডাঙা যোগমায়া বিদ্যানিকেতনের নবম শ্রেণির ছাত্র মনিরুল। পরে নমাজ শেষে বাড়িতে ফিরে এসে মায়ের হাতের বানানো সেমুই-ক্ষীর-হালুয়া খেয়ে পড়শি রাজিবুল ইসলামের মোটরবাইকের পিছনে বসে ছোট দিদির সঙ্গে দেখা করার জন্য ইসলামপুর থানার নলবাটা গ্রামের যাওয়ার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। গ্রামের রাস্তা পেরিয়ে বহরমপুর-জলঙ্গি রাজ্য সড়কে উঠতেই ছয়ঘরি পঞ্চায়েত কার্যালয়ের ঠিক সামনেই উল্টো দিক থেকে দ্রুত গতিতে আসা মোটরবাইকের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়।

Advertisement

ওই দু’টি মোটরবাইকে দু’জন করে চার জন আরোহী ছিলেন। দুর্ঘটনায় গুরুতর জখম চার জনকেই দ্রুত মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। কিন্তু বহরমপুরে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসার পথে মৃত্যু হয় ইসাকুল শেখের। হাসপাতালে ভর্তির কিছু ক্ষণের মধ্যে মারা যান রাজিবুল ইসলাম।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ইসাকুল ও জামিরুল দু’জনেই গুজরাতের সুরাতে শাড়ির নকশা তৈরির কাজ করেন। ইদ উপলক্ষে সাত দিন আগে দু’জনে এক সঙ্গে গ্রামের বাড়িতে আসেন। এখানে আসার পরেই জামিরুল মোটরবাইক কেনেন। তার পরেই ইদের নমাজ শেষে দুই বন্ধু নতুন বাইক নিয়ে ইসলামপুর বেড়াতে যান। পরে ইসলামপুর থেকে ফেরার পথে ওই বিপত্তি ঘটে। ইসাকুলের দাদা কয়েস শেখ বলেন, ‘‘ওর দেড় মাসের শিশুপুত্র রয়েছে। পরিবারের সকলের সঙ্গে ইদে আনন্দ করবে বলে সাত দিন আগে বাড়ি চলে আসে। কিন্তু এ সব কী হয়ে গেল বলুন তো!’’

অন্য দিকে মনিরুলের দিদির বাড়ি ইসলামপুরের নলঘাটা গ্রামে যাওয়ার পথে ওই দুর্ঘটনায় মারা যান রাজিবুল। ওই খবর পেয়ে ইসলামপুর থেকে বহরমপুরের হাসপাতালে চলে আসেন দিদি বীণা। তিনি বলেন, ‘‘ইদের দিন আমার সঙ্গে দেখা করতে আসার পথে ওই ঘটনা ঘটল। এখন এই শোক আমাকে সারা জীবন বয়ে বেড়াতে হবে।’’

ঘাসিপুরের বাসিন্দা সারিয়ার রহমান ওরফে পিন্টু বলেন, ‘‘লরিকে পাশ কাটাতে গিয়ে একটি মোটরবাইকের সামনে অন্য মোটরবাইক চলে আসার ফলে দুর্ঘটনাটি ঘটে বলে শুনেছি। তবে দু’টি মোটরবাইক দ্রুত গতিতে আসছিল। কারও মাথায় হেলমেট ছিল না।’’

ইদ উপলক্ষে ছয়ঘরি পশ্চিমপাড়ায় দু’দিন ধরে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। ওই দু’জনের মৃত্যুর পরে তাও বন্ধ হয়ে গিয়েছে। অন্য দিকে, এ দিনই খড়গ্রামের নগর, বড়ঞা, ভরতপুর, সালার ও কান্দি এলাকায় প্রায় ২৫টি মোটরবাইক দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে পুলিশ সূত্রে খবর। সব মিলিয়ে জখমের সংখ্যা প্রায় ৫০ জন। জখমদের কারও মাথাতেই হেলমেট ছিল না বলে পুলিশ জানিয়েছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement