মেলা দেখে বাড়ি ফেরার সময় পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হল তিন মোটরবাইক আরোহীর। রবিবার গভীর রাতে ঘটনাটি ঘটেছে হরিণঘাটার শিমুলতলায়। পুলিশ জানিয়েছে মৃতেরা হলেন আনারুল মণ্ডল (২৫), জিয়ারুল মণ্ডল (২০) ও জামসেদ মণ্ডল ওরফে মিঠুন (১৮)। তিন জনেরই বাড়ি হরিণঘাটার গাঙ্গুরিয়া এলাকায়।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, হরিণঘাটার বৈকারা গ্রামে ওই দিন এক মেলা বসে। এ দিন কয়েক জন বন্ধু মিলে সেই মেলা দেখতে যান। পরে বাড়ি ফেরার সময় তাঁরা তিনটি মোটরবাইকে চেপে ফিরছিলেন। এর মধ্যে মৃত তিন জন একটি মোটরবাইকে ছিলেন। জিয়ারুল বাইকটি চালাচ্ছিলেন। খানিকটা যাওয়ার পর পেছনে জিয়ারুলদের আসতে না দেখে তাঁদের সন্দেহ হয়। ঘুরে গিয়ে তাঁরা দেখেন রাস্তার পাশে পাঁচিলের গায় জিয়ারুলদের মোটরবাইকটি উল্টে পরে রয়েছে। ঘটনাস্থলে মৃত্যু হয়েছে আনারুল এবং জিয়ারুলের। গুরুতর আহত অবস্থায় জামসেদকে প্রথমে হরিণঘাটা গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে কল্যাণী জহরলাল নেহেরু মেমোরিয়াল হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। সেখানেই মৃত্যু হয় তাঁর। প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিশ জানিয়েছে, বেপরোয়া গাড়ি চালানোর জন্যই ওই দুর্ঘটনা ঘটেছে। ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।
প্রসঙ্গত, চলতি মাসে এই নিয়ে মৃত্যু হল চার মোটরবাইক আরোহীর। গত ৫ মার্চ দোলের দিন বিরোহীর কাছে মোটরবাইক দুর্ঘটনায় এক যুবকের মৃত্যু হয়েছিল। এ দিকে, তিন যুবকের এমন মর্মান্তিক পরিণতিতে শোকের আবহ গোটা এলাকায়। তবে অনেকেই কিন্তু এ ধরনের ঘটনার জন্য বেপরোয়া মোটরবাইক চালানোকে দায়ি করছেন। তাঁদের কথায়, এক শ্রেণির যুবক রয়েছেন যাঁরা এক বার হাতে মোটরবাইক পেলে হুঁস থাকে না। অধিকাংশই মাথায় হেলমেট না পরে নিয়মের তোয়াক্কা না করে ঝড়ের গতিতে মোটরবাইক চালান। ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক এবং রাজ্য সড়কগুলিতে এই ধরনের ঘটনা বেশি চোখে পড়ে। অভিযোগ, ওই সব রাস্তার গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলিতে ট্রাফিক পুলিশের দেখা মেলে না। তার পরিবর্তে সিভিক ভলান্টিয়ারদের দিয়ে যানবাহন নিয়ন্ত্রণের কাজ করানো হয়। যদিও পুলিশ কর্তাদের একাংশের দাবি, ফাঁকা এবং ভাল রাস্তায় ওই ধরনের দুর্ঘটনা ঘটছে। আর শুধু সিভিক ভলান্টিয়ার নয়, যানবাহন নিয়ন্ত্রণের জন্য ট্রাফিক পুলিশের সঙ্গে সিভিক ভলান্টিয়াররা থাকেন।
তবে দুঘর্টনার জন্য শুধু মাত্র আরোহীরাই দোষী তা নামতে নারাজ মোটরবাইক আরোহী তাপস দাস। তিনি বলেন, ‘‘রাতের বেলায় বড় গাড়িগুলো ছোট গাড়িকে পাত্তা দিতে চায় না। বাধ্য হতে রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে পড়তে হয়। অনেক সময় রাস্তার ধার ঘেঁসে গেলেও এক রকম গায়ের উপর দিয়ে বড় গাড়িগুলো চলে যায়।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘অনেক সময় বাড়ি তৈরির জন্য অথবা ব্যবসার জন্য রাস্তার ধারে বালি ফেলে রাখা হয়। যা খুবই বিপজ্জনক।’’
কল্যাণীর এসডিপিও কৌস্তুভদীপ্ত আচার্য বলেন, ‘‘আরোহীদের সচেতন করার জন্য পথ নিরাপত্তা সপ্তাহ পালন করা হয়। গাড়িগুলির গতি নিয়ন্ত্রণ করতে বিশেষ ব্যবস্থাও নেওয়া হয়। তা সত্ত্বেও, এ ধরনের ঘটনা দুর্ভাগ্যজনক।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘সকলকে কী করে আরও বেশি সচেতন করা যায়, সেটা ভাবা হচ্ছে।’’