বায়োস্কোপে বদলে গিয়েছে শুধু অন্তরটা

আশির দশকের মাঝামাঝি পর্যন্ত গাঁয়ের ছেলেপুলেদের এটাই ছিল মন মাতানো ঘটনা। বলছিলেন নবদ্বীপ পুরাতত্ত্ব পরিষদের প্রবীণ সম্পাদক শান্তিরঞ্জন দেব।

Advertisement

দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়

নবদ্বীপ শেষ আপডেট: ১৫ মার্চ ২০১৮ ০৬:২০
Share:

উৎসুক। নিজস্ব চিত্র

ডুগ ডুগ... ডুগ ডুগ। নির্জন দুপুরে শব্দটা এক বার ভেসে উঠেই হারিয়ে গেল। কিন্তু তাতেই কানখাড়া গোটা গ্রামের। এ বাড়ির সদর, ও বাড়ির খিড়কি থেকে উঁকিঝুঁকি। অতি উৎসাহী কেউ কেউ আবার সটান বাড়ির চিলেকোঠায়।

Advertisement

কিন্তু সে গেল কোথায়?

উত্তেজনায় সকলের নিঃশ্বাস বন্ধ হওয়ার উপক্রম। কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর ফের বেজে উঠল ডুগডুগি। কে যেন টেনে টেনে সুর করে বলছে “দেখো দেখো লাহোর দেখো, দেখো দেখো দিল্লি দেখো। প্যারেলালের খোয়াব দেখো...” এতক্ষণে সকলের নজরে এসেছে রঙবেরঙের পোশাক পড়া একটা লোক। গ্রামের মেঠো পথ বেয়ে এগিয়ে আসছে। পড়নে রঙবেরঙের পোশাক। তাঁর মাথায় একটা প্রকান্ড বাক্স। সবাই খুশিতে চিৎকার করে উঠত ‘উপেনটি বায়োস্কোপ’।

Advertisement

আশির দশকের মাঝামাঝি পর্যন্ত গাঁয়ের ছেলেপুলেদের এটাই ছিল মন মাতানো ঘটনা। বলছিলেন নবদ্বীপ পুরাতত্ত্ব পরিষদের প্রবীণ সম্পাদক শান্তিরঞ্জন দেব। সময়টা পঞ্চান্ন-ছাপান্ন সাল। নবদ্বীপের বিখ্যাত রাসের মেলার অন্যতম আকর্ষণই ছিল ওই বায়োস্কোপ পুতুলনাচ, নাগরদোলা আর বায়োস্কোপের টানে জমে উঠত যে কোন মেলা মোচ্ছব। তা সে কৃষ্ণ নগরের বারোদোল নবদ্বীপের রাস কিংবা মুর্শিদাবাদের নবাবীউৎসব হোক।

বায়োস্কোপের প্রকান্ড কাঠের বাক্সটার গায়ে থাকত চার থেকে ছটা ফুটো। তাতে চোখ লাগালেই ভিতরে এক অদ্ভুত মায়াবী জগত। অবাক চোখের সামনে তখন চলমান তাজমহল, কুতুবমিনার, দিল্লি, কলকাতার ট্রাম কিংবা আশ্চর্য সুন্দরী নারী। বায়োস্কোপওয়ালা হাতের টানে ঘুরে চলে বাক্সের উপরের হ্যান্ডেল। আর ডুগডুগি বাজিয়ে গান গেয়ে সে সব ছবির অনর্গল বর্ণনা শুনতে শুনতে কল্পনার জগতে হারিয়ে যায় আট থেকে আশি। শান্তিবাবুর কথায়, “ছয়ের দশক থেকেই আস্তে আস্তে হারিয়ে যায় বায়োস্কোপ।”

ফের এক মেলার মাঠেই খোঁজ মিলল হারিয়ে যাওয়া বায়োস্কোপ ওয়ালার। বহরমপুরের ফ্রেন্ডস ইউনিয়ন ক্লাবের মাঠে বহরমপুর মেলায় তাঁর উদ্ভাবিত ‘ডিজিটাল বায়োস্কোপ’ নিয়ে হাজির হয়েছেন ছোটন সরকার। মেলার মাঠে তাঁর সেই বায়োস্কোপ ঘিরে জমছে নতুন প্রজন্মের ভিড়। তেমনই বায়োস্কোপে চোখ রেখে হারানো স্মৃতি উসকে উঠছে প্রবীণদের।

গোরাবাজারের বাসিন্দা ছোটন সরকার এমনিতে বিদ্যুৎ দফতরের কল সেন্টারের অস্থায়ী কর্মী। নতুন কিছু করার ভাবনা থেকেই গড়েছেন হারিয়ে যাওয়া বায়োস্কোপ। আপাত দৃষ্টিতে সেই একই রকম বাক্সে গায়ে ফুটোয় চোখ রেখে চলমান ছবি। কিন্তু হাতে হাতে স্মার্টফোনের জমানায় বায়োস্কোপ আর নতুন কি দেখাবে?

ছোটন বাবু বলেন, “ভিতরের কারিগরিটা অনেকটাই বদলে দিয়েছি। এই ডিজিটাল বায়োস্কোপের ভিতরে আছে একটা এলসিডি টিভি। ছবি একটা চিপে ভরা আছে। দর্শকেরা সেই ছবিই দেখছেন।” এক একটা শো পাঁচ মিনিট করে। মাথা পিছু দশ টাকা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন