আড়াইশোয় ডজন, বাজার ছেয়েছে ভড়ুই

তামাটে ঝুড়ি টানটান গামছায় ঢাকা। পড়ন্ত হাটের এক কোণায় লোকটি চুপ করে বসে। চেনা মুখ দেখলে স্বর নামিয়ে বলছে, ‘‘শেষ দাম ভাই, আড়াইশো ডজন, আর পাবে না কিন্তু।’’

Advertisement

সেবাব্রত মুখোপাধ্যায়

বেলডাঙা শেষ আপডেট: ১৮ মার্চ ২০১৭ ০১:৫০
Share:

বন্দি: বাজারে দেদার বিকোচ্ছে ভড়ুইপাখি। —ফাইল চিত্র।

তামাটে ঝুড়ি টানটান গামছায় ঢাকা। পড়ন্ত হাটের এক কোণায় লোকটি চুপ করে বসে।

Advertisement

চেনা মুখ দেখলে স্বর নামিয়ে বলছে, ‘‘শেষ দাম ভাই, আড়াইশো ডজন, আর পাবে না কিন্তু।’’

না পাওয়ারই কথা। এত দিন যে তাদের পাওয়া গিয়েছে, এটাও একটা অবাক করার মতো কথা।

Advertisement

ইঞ্চি ছয়েকের পাখিগুলো যে এখনও নদিয়া-মুর্শিদাবাদের প্রান্তিক মাঠে ফড়িংয়ের মতো দেদার চড়ে বেড়ায় কী করে, তা ভেবে অবাক হয়ে যাচ্ছেন সুকল্যাণ বসু। পরিচিত এই পক্ষীবিদ বলছেন, ‘‘এত গিয়েও ওরা যে এত রয়ে গিয়েছে এটাই ভরসার।’’

তবে সে ভরসার জায়গাও ক্রমেই বুঝি সঙ্কুচিত হয়ে আসছে। গ্রামীণ হাটেই নয়, বহরমপুর, কৃষ্ণনগরের মতো জেলা সদরে এখন মোবাইলে অর্ডার দিলেও শালপাতা মুড়ে দিব্যি বাড়ি পৌঁছে যাচ্ছে ভড়ুই। দাম কিঞ্চিৎ বেশি পড়ছে এই যা।

বছর কয়েক আগেও, বহরমপুরে সাত সকালে গলির মুখে হাঁক পড়ত, ‘ভড়ুই চাই গো-ও-ও’। কান্দি-বেলডাঙার গঞ্জে বসন্তের গোড়ায়, ছেঁড়া মশারি কিংবা ঝাঁকায় এক বিঘতের ছোট্ট পাখিগুলো নিয়ে বিক্রির রমরমা তেমন প্রকাশ্য়ে না হলেও চুপিসারে ফিরে এসেছে আবার।

চেনা চড়ুইয়ের মতো মাঠ দাপিয়ে বেড়ানো ছোট্ট ভড়ুই দেদার বিকোচ্ছে আড়াইশো থেকে সাড়ে তিনশো টাকা ডজনে। খান চারেক পাখিতে বড় জোর আড়াই-তিনশো গ্রাম মাংস। তাই সই। সাইকেলের ক্যারিয়রে রাখা ঝাঁকা হাতড়িয়ে জ্যান্ত-মৃত ভড়ুই নিয়ে বীর দর্পে বাড়ি ফিরছে বহরমপুর বেলডাঙা, কৃষ্ণনগরের বাসিন্দারা।

তবে মুর্শিদাবাদের ঘুম ভাঙেনি বন দফতরের। খবর পেয়েও গাঁয়ের হাটে পা পড়েনি বনকর্মীদের।

বেলডাঙার বড়ুয়া মোড়ে ভড়ুইয়ের খোঁজে দিন কয়েক আগে হানা দিয়েছিল স্থানীয় থানার পুলিশ। সে বার পাখি ফেলেই পালিয়েছিল বিক্রেতা। কী আর করা, পুলিশ পাখি ধরে মুক্তি দিয়েছিল খোলা আকাশে। তবে এখনও যে তাঁর এলাকায় দেদার বিকোচ্ছে ভড়ুই, মেনে নিয়েছেন বেলডাঙা থানার পুলিশ।

প্রথম বসন্ত থেকে বর্ষার প্রাক্কালে ধান জমি আর বিলের আশপাশের জলায় ঝাঁকে-ঝাঁকে ভড়ুই নামে। তাদের ধরা তেমন কঠিন নয়। জাল মায় মশারি পেতে বসলেও সকালে খান পঞ্চাশ ভড়ুই মেলা প্রায় বাঁধা।

কিন্তু প্রশ্ন, আর কত দিন?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন