জন্মদিনের অনুষ্ঠানে প্রতিভা। — নিজস্ব চিত্র
দেখতে দেখতে তিনি বৃদ্ধা হলেন। বনস্পতির ছায়া দিলেন। আগলে রাখলেন আস্ত সংসার।
সোমবার তাঁর শততম জন্মদিনে ছেলে, মেয়ে, নাতি, নাতনিরা আবদার করে বসলেন, ‘‘এ ভাবে যেন আরও একশো বছর তুমি আমাদের সবাইকে আগলে রেখো।’’
যা শুনে হাসছেন কৃষ্ণনগরের কাঁঠালপোঁতার প্রতিভা মোহান্ত, ‘‘আরও একশো বছর? যাঃ, তা আবার হয় নাকি!’’
নাতি-নাতনিরাও একবগ্গা, ‘‘হবে না কেন? তুমি তো এখনও সুস্থ-সবল।’’
প্রতিভাদেবী কিছু একটা বলতে যাচ্ছিলেন।
কিন্তু সমস্বরে ‘হ্যাপি বার্থ ডে টু ইউ’-এর গুঁতোয় সে কথা আর কারও কানে গেল না। সে না যাক। প্রতিভাদেবী হাসছেন।
কেক কেটে, মোমবাতি জ্বেলে, প্রায় সাড়ে সাতশো লোকজনকে নেমন্তন্ন করে ঘটা করে পালিত হল প্রতিভাদেবীর জন্মদিন। আর হবে না-ই বা কেন! সেঞ্চুরি কি মুখের কথা?
তিনি কোনওদিনই মাংস মুখে তোলেননি। মাছ ছেড়ে দিয়েছেন সেই কবে। স্রেফ নিরামিশ খেয়েই কাটিয়ে দিয়েছেন এতগুলো বছর। তবে তাঁর শততম জন্মদিনে আয়োজনের কোনও ত্রুটি রাখেননি তাঁর ছেলেমেয়েরা।
কৃষ্ণনগর বাসস্ট্যান্ডের কাছে পুরসভার লজে আয়োজন করা হয়েছিল অনুষ্ঠানের। মেনু ছিল ভাত, আলু ভাজা, সর্ষে ইলিশ, কাতলা, ডালনা, পায়েস, মিষ্টি। তবে এ দিনও রেকর্ড ভাঙেননি বৃদ্ধা। সকলের অনুরোধে মুখে দিয়েছেন নিরামিশ কেকের একটি টুকরো। খেয়েছেন বাড়িতে রান্না করা সব্জি ভাত।
১৯১৭ সালের ৩ অক্টোবর কলকাতার কালীঘাটে জন্ম প্রতিভাদেবীর। ১৩ বছর বয়সে কৃষ্ণনগরে বিয়ে। স্বামী শিবনারায়ণ মোহান্ত মারা যান ১৯৮৭ সালে। সাত ছেলে ও পাঁচ মেয়ের মধ্যে বড় মেয়ে মারা গিয়েছেন। এক ছেলে নিখোঁজ। বাকি সব ছেলেমেয়ে ও তাঁদের সন্তানেরা এ দিন জন্মদিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
প্রতিভাদেবীর ছোট ছেলে ৬১ বছরের উজ্জ্বলকুমার মোহান্তের কথায়, “প্রতি বছরই মায়ের জন্মদিন পালন করি। তবে এবার একশোয় পা দিচ্ছে বলে একটু ঘটা করেই আয়োজন করলাম।’’
এই দীর্ঘ যাত্রাপথের রহস্য কী?
‘‘সকালে এককাপ দুধ চা, দুটো বিস্কুট। দুপুরে একটু ভাত ও ফলের রস। সন্ধ্যায় এক গ্লাস দুধ আর দু’টো বিস্কুট। আর সকলের অনেক অনেক ভালবাসা।’’ হাসছেন প্রতিভাদেবী।
শতবর্ষ পূর্তি হতে মোটে তো আর একটা বছর!