বঙ্গবিজয়ই যে তাঁদের লক্ষ্য, বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ তা পরিষ্কার করেই দিয়েছেন। কিন্তু এ ব্যাপারে তারা কতটা মরিয়া, তা স্পষ্ট হয়ে গেল প্রায় ৯০ শতাংশ মুসলিম ভোটারের ডোমকলে।
নবগঠিত ডোমকল পুরসভার প্রথম ভোটে ২১টি আসনের ২০টিতে প্রার্থী দিয়েছে বিজেপি। তার মধ্যে ৬ জন প্রার্থী মুসলিম। মনোনয়ন পর্বে নিজেদেরই ভুলে একটি আসনে তাঁরা প্রার্থী দিতে পারেননি বলে দাবি বিজেপি নেতাদের। বিজেপির জেলা সভাপতি গৌরীশঙ্কর ঘোষের দাবি, ‘‘ডোমকলে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বহু মানুষ আমাদের সঙ্গে আছেন।’’
ডোমকল যখন পঞ্চায়েত এলাকা ছিল, তখনও কিছু আসনে প্রার্থী দিত মুসলিম লিগ। পুরভোটেও তারা ১৪টি আসনে প্রার্থী দিয়েছে। নতুন দল মূলনিবাসী লড়ছে সাতটি আসনে। কিন্তু মূল লড়াইটা হচ্ছে মুর্শিদাবাদে ক্রমশ ফুলে-ফেঁপে ওঠা তৃণমূল এবং সিপিএম-কংগ্রেস জোটের মধ্যে। গত বৃহস্পতিবার মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন পেরিয়ে যেতেই পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল, সব আসনেই তৃণমূলের সঙ্গে মুখোমুখি টক্কর নিতে চলেছে জোট। গত বছর বিধানসভা নির্বাচনের সকালে এক সিপিএম কর্মী খুনের পরে যে অঘোষিত সমঝোতা হয়ে গিয়েছিল, সেটাই এ বার সামনে চলে এসেছে। গত ভোটে সমঝোতার জেরে হেরে গিয়েছিলেন যুব তৃণমূল নেতা সৌমিক হোসেন। পুরভোটে তিনিই তৃণমূলের প্রধান মুখ। এবং ৫ নম্বর ওয়ার্ডে তাঁর জয়ের পথে সেই একই কাঁটা।
ডোমকলের ২১টি ওয়ার্ডে এ বার প্রার্থীর সংখ্যা ১১১ জন। এর মধ্যে বামফ্রন্টের ১১ জন আর কংগ্রেসের ১০ জন প্রার্থীও রয়েছেন। ১১২ জন প্রার্থী মনোনয়ন জমা দিয়েছিলেন। একটি ওয়ার্ডে বাম ও কংগ্রেস দুই পক্ষই মনোনয়ন জমা দিয়েছিল। পরে কংগ্রেস মনোনয়ন তুলে নেয়। ফলে সার্বিক জোট হয়েছে। তা হলে, বিজেপি কোন আশায় ২০টি কেন্দ্রে প্রার্থী দিল?
তৃণমূল বা জোট, কেউই তাদের আমল দিতে রাজি নয়। সৌমিকের দাবি, ‘‘প্রার্থী দেওয়াটা তো কোনও বড় কথা নয়! যে কেউ প্রার্থী হতে পারে। সকলের অধিকার আছে প্রার্থী হওয়ার। ভোটের পরেই ওরা বুঝতে পারবে, কত ধানে কত চাল!’’ সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য নারায়ণ দাসের মতে, ‘‘ওই মোদী ঝ়ড়-টড় বাংলায় চলে না। আর ডোমকলে ঝড় দূরের কথা, হাওয়াই বইবে কি না সন্দেহ।’’ এরই কথা বলছেন কংগ্রেসের নেতারাও। কোনও ত্রিমুখী লড়াইয়ের বিন্দুমাত্র সম্ভাবনা আছে বলেও কেউ মনে করছেন না।
বিজেপি নেতারা অবশ্য ঠারেঠোরে বলছেন, ভোটে জয়-পরাজয় বড় কথা নয় তাঁদের কাছে। বরং প্রায় সব ওয়ার্ডে যে প্রার্থী দিতে পেরেছেন, এটাই এক কদম এগিয়ে যাওয়া।