তর্জনি উঁচিয়ে গোপাল বলছেন, ‘উঁহু, ওখানে নয়’

পালা করে পাহারা। মাঠে শৌচকর্ম নৈব নৈব চ! কখনও ধমকে কখনও গাঁধীগিরি করে, ‘না বাবা এখানে নয়, বড় বাজে কাজ!’

Advertisement

সেবাব্রত মুখোপাধ্যায়

বেলডাঙা শেষ আপডেট: ১৭ জানুয়ারি ২০১৯ ০০:১২
Share:

জেলাকে স্বচ্ছ করছেন গোপাল ভাঁড় ও কালিয়া। বেলডাঙায়। ছবি: সঞ্জীব প্রামাণিক

ঠান্ডায় ঘুম গিয়েছে উড়ে। ভোর একটু আলোময় হতেই তাই চাদর সরিয়ে হিহি করে কাঁপতে কাঁপতেই মাঠে। অভিযানে যেতে হবে না!

Advertisement

শীতের কুয়াশা পিঠে নিয়ে ছুটছেন বিডিও পিছনে থানার বড়বাবু, মুখে ক্রমাগত ফুঁকে চলেছেন বাঁশি। পিছনে পিলপিল করে গ্রামের অঙ্গনওয়ারি কর্মী, স্বাস্থ্যকর্মীও, সেপাই, সামন্ত।

পালা করে পাহারা। মাঠে শৌচকর্ম নৈব নৈব চ! কখনও ধমকে কখনও গাঁধীগিরি করে, ‘না বাবা এখানে নয়, বড় বাজে কাজ!’

Advertisement

আর সেই ভোরের দৌড়ে এ বার ডাক পড়েছে রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের সভা থেকে গোপাল ভাঁড়েরও। সটান এ বার তিনি নবাবের জেলার ময়দানে।

সেকা‌লে (অষ্টাদশ শতাব্দীতে) তিনি জেলায় এসেছেন কি না তা জানে না ইতিহাস। কিন্তু নতুন বছরের গোড়ায় এ জেলায় এসে তিনি যে ভোর থেকে গুরুদায়িত্ব সামলাচ্ছেন তা চাক্ষুষ দেখছেন মানুষ।

বেলডাঙা ১ ব্লক প্রশাসন তাঁকে নির্মল বাংলার প্রচারে প্রায় হাতে পায়ে ধরে এনেছে! ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক লাগোয়া বেলডাঙা ১ ব্লক প্রশাসনের দফতর। দফতরে ঢুকে ডান হাতে তাকালেই চোখ পড়বে দেওয়াল জুড়ে তিনি। তর্জনি তুলে বলছেন, ‘শোন বলছি, আমি গোপাল ভাঁড়, বাড়িতে বানাও শৌচাগার। নইলে করবে হাহাকার।’

তিনি দাঁড়িয়ে আছেন হলুদ ফতুয়া গায়ে, পরনে সেই চেনা লাল ধুতি। মোটা মোটা চোখ। গলায় লাল উত্তরীয়। এমন নজরদারি যে চোখের পলক পড়ছে না। পাশের দেওয়ালে দাঁড়িয়ে তাঁর সাগরেদ হয়েছে কালিয়া। আদুল গায়ে, ছাই রঙের ছোট প্যান্টে। কোমরে হাত দিয়ে তারও জোরদার হুমকি— ‘বাইরে কেউ শৌচকর্ম করবে না। আমি কিন্তু সব দেখতে পাচ্ছি।’

বলা হচ্ছে, ‘মোবাইল ব্যবহার করছ, কিন্তু মাঠে ঘাটে মলত্যাগ? ছি লোকে কী বলবে।’ সম্প্রতি বেলডাঙা ১ ব্লক প্রশাসন এলাকার নানা দেওয়ালে মাঠে শৌচ কাজ রুখতে ওঁদের শাসন চলছে।

বেলডাঙা ১ বিডিও বলছেন, ‘‘এ কাজ মেখলিগঞ্জে থাকতে বেশ কাজে দিয়েছিল।’’ সেই চেষ্টাই তিনি ফিরিয়ে এনেছেন বেলডাঙায়।

স্থানীয় শিল্পী আব্দুল কাদের’কে দিয়ে ছবি আঁকিয়ে শুরু হয়েছে প্রচার। সে ছবি আঁকড়েই ব্লক জুড়ে চলেছে প্রচার।

জেলা প্রশাসনের কাছে পুরস্কারও মিলেছে আব্দুলের। বেলডাঙা ১ বিডিও বিরূপাক্ষ মিত্রের অনুরোধে বেলডাঙায় এসে ‘গোপাল’ এঁকে তাঁর রোজগার বেড়েছে দিব্যি। বিডিও বিরূপাক্ষ মিত্র বলছেন, ‘‘আব্দুল কাদেরের পরিকল্পনা রূপ পেয়েছে বেলডাঙার মতিউর রহমানের হাত ধরে। মতিউর রহমান পেশাদার শিল্পী। তাঁকে সাহায্য করেছেন কাদের।’’

বিরূপাক্ষ-কাদের-মতিউর-কালিয়া আর গোপাল ভাঁড় এখন বেলডাঙার বুকে ভোরের মাঠ স্বচ্ছ করতে চলেছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন