কীসের আকাল!

রক্ত না নিয়ে আগ্রহীদের আবার ফেরাল ব্লাডব্যাঙ্ক

জেলা জুড়ে ব্লাড-ব্যাঙ্কের ফ্যাকাসে মুখ দেখে উৎসাহী রক্তাদাতাদের লম্বা লাইন পড়েছিল ঠিকই, কিন্তু একশো ব্যাগ রক্ত নেওয়ার পরেই ফের হাত গুটিয়ে নিলেন হাসপাতালের ব্লাডব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ।

Advertisement

শুভাশিস সৈয়দ

বহরমপুর শেষ আপডেট: ১০ অগস্ট ২০১৬ ০১:৫৪
Share:

আমরা রক্ত দিতে চাই।— নিজস্ব চিত্র

জেলা জুড়ে ব্লাড-ব্যাঙ্কের ফ্যাকাসে মুখ দেখে উৎসাহী রক্তাদাতাদের লম্বা লাইন পড়েছিল ঠিকই, কিন্তু একশো ব্যাগ রক্ত নেওয়ার পরেই ফের হাত গুটিয়ে নিলেন হাসপাতালের ব্লাডব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ।

Advertisement

নির্বিকার মুখে জানিয়ে দিচ্ছেন— ব্যাগের ঘাটতি রয়েছে কিংবা ‘টেকনিশিয়ান নেই’ গোছের দায়সারা উত্তর।

সোমবারের শাসক দলের যুব সংগঠনের রক্তদান শিবিরে দু’শোর বেশি মানুষ ঠায় দাঁড়িয়ে ছিলেন রক্ত দেওয়ার জন্য। ঘণ্টা দুয়েক পরে তাঁদের শুনতে হয়েছিল, ব্লাডব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ ব্যাগ আনেননি বলে আর নেওয়া যাবে না রক্ত।

Advertisement

অভিজ্ঞতাটা প্রায় একইরকম বহরমপুর কংগ্রেসের। চব্বিশ ঘণ্টাও কাটেনি, মঙ্গলবার, বহরমপুর শহর কংগ্রেসের পক্ষ থেকে তাদের জেলা কার্যালয়ে রক্তদান শিবির করেও শেষ বিকেলে শুনতে হল—‘‘আর তো ব্যাগ নেই, টেকনিশিয়ানও নেই।’’যা শুনে ম্লান মুখেই ফিরতে হল প্রায় শ’দেড়েক ইচ্ছুক রক্তদাতাকে।

এ দিন, বহরমপুরে জেলা কংগ্রেস কার্যালয়ে রক্ত দেওয়ার জন্য দুপুর গড়িয়ে গেলেও লাইন ছিল দীর্ঘ। কিন্তু একশো ব্যাগের বেশি রক্ত নিতে চাননি ব্লাডব্যাঙ্ক কর্তারা। চাপাচাপিতে শেষ পর্যন্ত ব্লাডব্যাঙ্ক থেকে আরও ৩০টি ব্যাগ আনানো হলেও বাকিদের ফিরে যেতে হয়েছে রক্ত না দিয়েই।এ ক্ষেত্রে অভিযুক্ত লালবাগ মহকুমা হাসপাতালের ব্লাডব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ।

রক্তাল্পতায় ভুগতে থাকা ব্লাডব্যাঙ্কগুলির এই মনোভাবের কথা শুনে বেজায় চটেছে স্বাস্থ্য ভবন। স্বাস্থ্য দফতরের এক শীর্য কর্তা জানিয়েছেন, এ ব্যাপারে মুর্শিদাবাদের ওই দুই ব্লাডব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের কাছেই কারণ জানতে চাওয়া হবে।

জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক শুভাশিস সাহা অবশ্য বলছেন, ‘‘ব্লাডব্যাঙ্কগুলিতে টেকনিশিয়ানের ঘাটতির কথা বহু দিন ধরেই আমরা স্বাস্থ্যভবনে জানিয়ে আসছি। আসলে এক জন টেকনিশিয়ান ৫০ জনের বেসি রক্ত নিতে পারেন না। ওদিকে শিবিরগুলিতে দু’জনের বেশি টেকনিশিয়ান পাঠানো সম্ভব হচ্ছে না। তাই এই সমস্যা।’’

কিন্তু রক্তাল্পতায় ভোগা ব্লাডব্যাঙ্কগুলি এই সামান্য সরকারি নিয়মের বাইরে বেরোতে পারছে না? তার কোনও সদুত্তোর অবশ্য শুভাশিসবাবুর কাছে মেলেনি।

বহরমপুর শহর কংগ্রেস সভাপতি অতীশ সিংহ বলেন, ‘‘আমরা মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ব্লাডব্যাঙ্ককে জানিয়ে ছিলাম প্রায় দু’শো বোতল রক্ত তুলে দেব। কিন্তু ওঁরা জানিয়ে দিয়েছিলেন, একশো ব্যাগের বেশি রক্ত নেওয়া যাবে না।’’

বাধ্য হয়ে যোগাযোগ করা হয়েছিল লালবাগ মহকুমা হাসপাতালের ব্লাডব্যাঙ্ক কর্তপক্ষের সঙ্গে। অতীশ জানান, সংখ্যাটা শুনে সেখানেও একই উত্তর পেয়েছিলেন তাঁরা। চাপাচাপি করায় ৩০টি বাড়তি ব্যাগ নিয়ে এলেও বাকিদের এ দিনও ফিরে যেতে হয়েছে।

যুব তৃণমূলের জেলা সভাপতি অশেষ ঘোষের অভিজ্ঞতাও প্রায় একইরকম। সোমবার তাঁদের আয়োজন করা রক্তদান শিবিরেও একই যুক্তি দেখিয়ে ফিরে গিয়েছিলেন ব্লাডব্যাঙ্ক কর্তারা।

এ দিনের শিবিরে লালবাগ মহকুমা হাসপাতালের ব্লাডব্যাঙ্কের দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক অপূর্বকুমার চট্টরাজ বলেন, ‘‘২০১১ সাল থেকে লালবাগ মহকুমা হাসপাতালের ব্লাডব্যাঙ্কে সাকুল্যে এক জন টেকনিশিয়ান রয়েছেন। নিয়ম অনুয়ায়ী এক জন টেকনিশিয়ানের পক্ষে ৩০-৪০ জনের রক্তদাতার শরীর থেকে রক্ত টানা সম্ভব নয়। তাই বাধ্য হয়ে অবসরপ্রাপ্ত এক কর্মীকে অনুরোধ করে নিয়ে এসেছি, কী করব বলুন!’’

তিনি জানাচ্ছেন, বিষয়টা স্বাস্থ্যভবনে জানানো হয়েছে। তবে, এখন কড়া কথা শোনালেও এ ব্যাপারে আশ্বাস ছাড়া আর কিছুই মেলেনি স্বাস্থ্য ভবনের কাছে।

এমন ঘটনা অবশ্য নতুন নয়। মাস কয়েক আগে, বহরমপুর ক্লথ মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে আয়োজিত রক্তদান শিবির থেকেও একই ভাবে ফিরে গিয়েছিলেন বেশ কিছু ইচ্ছুক রক্তদাতা। তাঁদের অভিজ্ঞতাও বলছে, ‘‘আমরাও শ’দেড়েক বোতল রক্তের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম। কিন্তু একশো জনের রক্ত নেওয়ার পরেই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল শিবির। ফিরে গিয়েছিলেন অনেকেই।’’

সেই ট্রাডিশন সমানে চলছে!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
আরও পড়ুন