প্রসূতিকে ভুল রক্ত, হুলস্থুল হাসপাতালে

পুলিশ এসে পরিস্থিতি সামলায়। দু’-পক্ষই পরস্পরের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছে। 

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ২৩ অগস্ট ২০১৯ ০০:১১
Share:

গর্ভস্থ সন্তানের মৃত্যুর পর। শক্তিনগর হাসপাতালে। ছবি: প্রণব দেবনাথ

আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা ভুল গ্রুপের রক্ত দেওয়ার কথা অবশেষে স্বীকার করে নিলেন শক্তিনগর জেলা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ঘটনার জেরে বৃহস্পতিবার সকালে হাসপাতালে গোলমাল শুরু হয় নিরাপত্তারক্ষীদের সঙ্গে মারপিট শুরু হয় মহিলার আত্মীয়স্বজনের। পুলিশ এসে পরিস্থিতি সামলায়। দু’-পক্ষই পরস্পরের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছে।

গত বুধবার চাপড়ার এলেমনগরের বাসিন্দা জেসমিনা মল্লিক নামে ওই মহিলাকে হাসপাতালে ভর্তির পর রক্ত দেওয়া হয়। তাঁর রক্তাল্পতা ছিল বলে জানা গিয়েছে। এর পরই তাঁর পরিবারের তরফে লিখিত ভাবে ভুল গ্রুপের রক্ত দেওয়ার অভিযোগ জানানো হয়েছিল। প্রথমে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তা মানতে চাননি। তদন্ত শুরু করেছিলেন। মহিলার রক্ত ফের পরীক্ষা করা হয়েছিল। বৃহস্পতিবার কর্তৃপক্ষ মেনে নেন, ‘ও পজিটিভ’ এর জায়গায় মহিলাকে ‘এ পজিটিভ’ রক্ত ভুলবশত দেওয়া হয়েছে।

ঘটনাচক্রে এর পরেই মহিলা মৃত সন্তান প্রসব করেন। ভুল রক্ত দেওয়াই শিশুর মৃত্যুর জন্য দায়ী কিনা তা ময়নাতদন্তের আগে নিশ্চিত ভাবে বলা সম্ভব নয় বলে দাবি করেছেন হাসপাতালের চিকিৎসকেরা। শিশুর দেহ ময়নাতদন্তের জন্য কলকাতার নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজে পাঠানো হয়েছে। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক তাপস রায় বলছেন, “ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক। রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পরই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে।” কর্তৃপক্ষের দাবি, ব্লাড ব্যাঙ্কের টেকনিশিয়ান পরীক্ষার পরে রক্তের গ্রুপ লেখার সময় ভুল করে অন্য গ্রুপ লিখে ফেলেন। তাতেই এই বিপত্তি। শক্তিনগর জেলা হাসপাতালের সুপার শচীন্দ্রনাথ সরকার বলছেন, “টেকনিশিয়ান ভুল করে ‘ও পজিটিভ’ এর জায়গায় ‘এ পজিটিভ’ লিখে ফেলায় গোলমাল হয়েছে। আমরা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে রিপোর্ট দিয়েছি।’’

হেমাটোলজিস্ট বা রক্ত বিশেষজ্ঞদের একাংশের বক্তব্য, ‘‘ও-পজিটিভ রক্ত যাঁদের থাকে তাঁরা হলেন ‘ইউনিভার্সাল ডোনার। তাঁরা সমস্ত গ্রুপের রক্তের অধিকারীকে রক্ত দিতে পারেন কিন্তু তাঁদের অন্য গ্রুপের রক্ত দেওয়া যায় না। ‘এ পজিটিভ’ গ্রুপের রক্তে কোনও অ্যান্টিজেন নেই। তাতে ‘এ’ ও ‘বি’ অ্যান্টিবডি থাকে। তাঁদের ‘এ পজিটিভ’ গ্রুপের রক্ত দিলে অ্যান্টিবডি-এ সেই এ-পজিটিভ রক্তকে ভেঙে দেয়। রক্ত তখন অক্সিজেন বহন করতে পারে না।’’ তাঁরা আরও জানান, এই অবস্থায় সবচেয়ে ক্ষতির আশঙ্কা রক্ত গ্রহিতা বা এ ক্ষেত্রে মায়ের। তাঁর কিডনি নষ্ট হতে পারে। অন্য অঙ্গ প্রত্যঙ্গ বিকল হতে পারে। তুলনায় শিশুর ক্ষতির আশঙ্কা কম। মায়ের শরীরে কতটা ক্ষতি হয়েছে তার উপর শিশুর স্বাস্থ্য নির্ভর করবে। জেসমিনার স্বামী ইমরান মল্লিকের অভিযোগ, “চাপড়ার একটা প্যাথলজিক্যাল ল্যাবরেটরি থেকে আমি আগেই ওর রক্ত পরীক্ষা করিয়েছিলাম। সেখান দেখা যাচ্ছে, আমার স্ত্রীর রক্তের গ্রুপ ‘ও পজিটিভ’। কিন্তু হাসপাতাল থেকে দেওয়া হয়েছে ‘এ পজেটিভ’। সেই কারণে আমার স্ত্রী আরও অসুস্থ হয়ে পড়ে।” ইমরান বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় শুরু করার পর জেসমিনা মল্লিকের রক্ত ফের পরীক্ষার জন্য ব্লড ব্যাঙ্কে পাঠানো হয়। রাতেই রিপোর্ট আসে যে, ইমরানের আশঙ্কাই ঠিক। এরই মধ্যে প্রসূতির মারাত্মক প্রসব যন্ত্রণা শুরু হয়ে যায়। তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় সদর হাসপাতালের প্রসূতি বিভাগে। সেখানে গভীর রাতে তিনি মৃত সন্তান প্রসব করেন। এর পরই ক্ষেপে ওঠেন পরিবারের লোকেরা। বৃহস্পতিবার সকালে সদ্য প্রসূতিকে আবার শক্তিনগর জেলা হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগে নিয়ে আসা হয়। তখনই নিরাপত্তারক্ষীদের সঙ্গে পরিবারের গোলমাল শুরু হয়ে যায়। অভিযোগ, জেসমিনার আত্মীয়েরা হাসপাতালের ভিতরে ঢুকতে গেলে বাধা দেন নিরাপত্তারক্ষীরা। তাঁরা তখন নিরাপত্তারক্ষীদের উপরে চড়াও হন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন