হাতে ছাত্রীর, জুজু নীল তিমির

রানাঘাটের এই মেয়েটি একা নয়। ক’দিন আগে চাকদহ রামলাল অ্যাকাডেমির অষ্টম শ্রেণির এক ছাত্রও একই কাণ্ড ঘটিয়েছিল। জলঙ্গির নওদাপাড়ায় নবম শ্রেণির এক ছাত্র সম্প্রতি ঘরের খাটে আগুন ধরিয়েছে। কিন্তু কোনও ক্ষেত্রে পুলিশ মারণ গেমের কোনও প্রমাণ পায়নি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

রানাঘাট শেষ আপডেট: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০২:৪৭
Share:

প্রতীকী ছবি।

কয়েক দিন ধরে বাড়ির লোকজনকে প্রায় এড়িয়েই চলছিল মেয়েটি। মাঝে-মধ্যে খাওয়া-দাওয়াও করছিল না ঠিক মতো। অবসাদ আর ভয় পেয়ে বসেছিল অষ্টম শ্রেণিতে পড়া মেয়েটিকে।

Advertisement

শেষে বাড়ির লোকজন ‘আবিষ্কার’ করেন, নীল তিমির খপ্পরে পড়েছে সে। অর্থাৎ ‘ব্লু হোয়েল চ্যালেঞ্জ’ বা ওই জাতীয় কোনও মারণ গেমে সে আসক্ত। নিজের বাঁ হাতে সে কয়েকটি আঁচড় কেটেছে। বাবা-মা এলাকার কাউন্সিলরকে জানিয়েছেন। তাঁর কাছ থেকে খবর পেয়ে পুরপ্রধান মেয়েটির কাউন্সেলিং করার ব্যবস্থা করেছেন। কিন্তু সোমবার রাত পর্যম্ত পুলিশে খবর দেওয়া হয়নি। পরিবার সূত্রের খবর, রানাঘাট লালগোপাল বালিকা বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণিতে পড়া ছাত্রীটির বাবা হাওড়ায় বেসরকারি সংস্থায় কাজ করেন। সকালে বেরোন, রাতে ফেরেন। মা রানাঘাট পুরসভার অস্থায়ী কর্মী। ওই ছাত্রী ও তার দাদা অনেকটা সময় বাড়িতে একাই থাকে। মেয়েটির নিজের মোবাইল নেই, কিন্তু বাড়িতে একটি স্মার্টফোন থাকে। ইদানীং সেটি সে ঘাঁটাঘাঁটি করছিল প্রায়ই। তার জন্য বাড়িতে বকুনিও খেয়েছে।

শনিবার মেয়ের বাঁ হাতে আঁচড় নজরে আসে মায়ের। তাঁর কথায়, ‘‘ও এমনিতে খুব শান্ত মেয়ে। বেশির ভাগ সময় লেখাপড়া নিয়েই থাকে। কয়েক দিন ও ফোন নিয়ে স্কুলে গিয়েছিল। সম্ভবত ওখান থেকেই কিছু শিখে এসেছে।’’ যদিও ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা রুমা ভদ্র সিকদার বলেন, ‘‘এমন কিছু আমরা জানি না। স্কুলে ফোন নিয়ে আসাই তো নিষেধ!’’ যিনি ওই ছাত্রীর কাউন্সেলিং করছেন, তিনিও স্পষ্ট করে বলতে পারেননি, কী কারণে সে হাতে আঁচড় কেটেছে।

Advertisement

ঘটনা হল, রানাঘাটের এই মেয়েটি একা নয়। ক’দিন আগে চাকদহ রামলাল অ্যাকাডেমির অষ্টম শ্রেণির এক ছাত্রও একই কাণ্ড ঘটিয়েছিল। জলঙ্গির নওদাপাড়ায় নবম শ্রেণির এক ছাত্র সম্প্রতি ঘরের খাটে আগুন ধরিয়েছে। কিন্তু কোনও ক্ষেত্রে পুলিশ মারণ গেমের কোনও প্রমাণ পায়নি।

রাশিয়া থেকে ছড়িয়ে পড়া ‘ব্লু হোয়েল চ্যালেঞ্জ’ কিন্তু আর পাঁচটা গেম-এর মতো নয় যে কম্পিউটার বা স্মার্টফোনে ডাউনলোড করে নেওয়া যাবে। সে অর্থে এটা কোনও ‘গেম’ই নয়। বরং ফেসবুকের মতো সোশ্যাল নেটওয়ার্কে চালু কোনও গ্রুপ থেকে গোপনে নানা বিপজ্জনক কাজ করার নির্দেশ দেওয়া হয় খেলুড়েদের, যার শেষ ধাপ আত্মহত্যা। এই ধরনের গ্রুপ চালানো বা তার সন্ধান পাওয়া, কোনওটাই সহজ নয়। ফেসবুকে যে আদৌ এমন কোনও গ্রুপ সক্রিয়, তার প্রমাণও মেলেনি। কিন্তু এই অছিলায় একটা হিড়িক চলছে।

জলঙ্গি বালিকা বিদ্যালয়ে একটি একাদশ শ্রেণির ছাত্রী শৌচালয়ে ঢুকে ব্লেড দিয়ে হাত কেটে প্রথমে ‘ব্লু হোয়েল’ খেলার কথা বললেও পরে স্বীকার করে, সম্পর্কের টানাপড়েনের জেরেই সে ওই কাণ্ড ঘটিয়েছে। তবু কাছাকাছি কয়েকটি এলাকায় কেন বারবার এমন কাণ্ড ঘটছে, কোনও চক্র সক্রিয় রয়েছে কি না, তা পুলিশেরও অজানা। এমন তার একটা বড় কারণ, বহু ক্ষেত্রেই পরিবারের লোকজন পুলিশকে এড়িয়ে যাচ্ছেন। নওদাপাড়ার ছাত্রটি থেকে এই ছাত্রী, সেটাই ঘটেছে।

রানাঘাট থানা জানাচ্ছে, এ রকম কোনও ঘটনার কথা তাদের জানাই নেই। বাবা-মা হয়তো ভয় পাচ্ছেন, পুরসভা পুলিশকে জানাল না কেন? রানাঘাটের পুরপ্রধান পার্থসারথী চট্টোপাধ্যায়ের ব্যাখ্যা, “আমরা চাইছি আগে মেয়েটিকে সুস্থ করে তুলতে। তাই পুলিশকে জানানোর বদলে কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা করেছি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন