বাইচে বিসর্জন, ভিড় গঙ্গাপাড়ে

ধুলিয়ানে সন্ধ্যায় শেষ বাইচ। পুড়ল বাজি, পটকা। দাহ হল রাবণের কুশপুতুল। জঙ্গিপুরে অবশ্য দশমীর সন্ধ্যায় শুরু হয়ে বাইচ চলল বুধবার একাদশীর বেলা পর্যন্ত।দু’দিনের বৃষ্টির পর দশমীর দিনভরই ছিল ঝকঝকে আকাশ। ফলে ধুলিয়ান ও জঙ্গিপুরে দশমীর বাইচ বিসর্জন দেখতে নদীর তীরে আছড়ে পড়েছিল ভিড়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

রঘুনাথগঞ্জ শেষ আপডেট: ১৩ অক্টোবর ২০১৬ ০১:৫৭
Share:

জঙ্গিপুরে বাইচ। —নিজস্ব চিত্র

ধুলিয়ানে সন্ধ্যায় শেষ বাইচ। পুড়ল বাজি, পটকা। দাহ হল রাবণের কুশপুতুল। জঙ্গিপুরে অবশ্য দশমীর সন্ধ্যায় শুরু হয়ে বাইচ চলল বুধবার একাদশীর বেলা পর্যন্ত।

Advertisement

দু’দিনের বৃষ্টির পর দশমীর দিনভরই ছিল ঝকঝকে আকাশ। ফলে ধুলিয়ান ও জঙ্গিপুরে দশমীর বাইচ বিসর্জন দেখতে নদীর তীরে আছড়ে পড়েছিল ভিড়।

দুর্গা প্রতিমার ভাসানকে ঘিরে ধুলিয়ান ও জঙ্গিপুরে বাইচ চলে আসছে বহুকাল ধরে।

Advertisement

অতীতের বাইচের কথা বলছিলেন ধুলিয়ানের সত্তোরোর্ধ্ব বিশাখা দাস। তিনি বলেন, “প্রথাটা আছে, কিন্তু ফারাকটা প্রায় আসমান-জমিন। ধুলিয়ানের কাঞ্চনতলা গঙ্গার ঘাটে দশমীর এই নৌকো বাইচ বহু দিনের উৎসব। আগে মাত্র হাতে গোনা ৪-৫টা দুর্গা প্রতিমা হত শহরে। সবচেয়ে জাঁকজমক পুজো হত কাঞ্চনতলার জমিদারবাড়িতে। বিকেলের মধ্যেই সে প্রতিমা ঘাটে বিসর্জন হত। তারপর একে একে গঙ্গা ঘাটে আসত অন্য প্রতিমাগুলি। এরপর নৌকোয় সেই সব প্রতিমা তুলে গঙ্গার এ ঘাট থেকে অন্য ঘাটে ঘুরে বেড়াত সব ক’টি প্রতিমা। তাদের ঘিরে থাকত উদ্যোক্তা ও দর্শনার্থীদের আরও বেশ কয়েকটি করে নৌকো। হ্যাজাকের আলো থাকত সব নৌকোয়। এত বেশি ভিড় হত না তখন। গঙ্গাও এত বড় ছিল না। জলও থাকত কম।

পাড়ার মহিলারা তা দেখতে আসতেন বাড়ির লোকজনের হাত ধরে। সন্ধ্যা নামতেই শেষ হয়ে যেত বাইচ। তাঁর কথায়, “যতদিন গিয়েছে প্রতিমার সংখ্যা তত বেড়েছে। এখন পাড়ায় পাড়ায় পুজো। বাইচের আড়ম্বরও বেড়েছে। দুপুর থেকেই লোক জমায়েত হয় এখন। মঞ্চ বেঁধে বাজি পটকা ফাটানো হয়।’’

ওপারে মালদহের চর। সেখান থেকেও বাইচে দুর্গা প্রতিমা আসে ধুলিয়ানের বাইচে যোগ দিতে। গঙ্গায় শতাধিক নৌকোয় ঘুরে বেড়ায় প্রতিমাগুলি। পাড়ে দাঁড়িয়ে হাজার হাজার দর্শনার্থী। ”

বাইচে জনসমাগম গত কয়েক বছরের জমায়েতকেও হার মানিয়েছে এ বারে ধুলিয়ানে। ধুলিয়ান শহরে ৩৪টি দুর্গা পুজোগুলিকে সেরা মণ্ডপ, সেরা প্রতিমা, ও সেরা পরিবেশের জন্য পুরস্কৃত করা হয়েছে পুরসভার পক্ষ থেকে। দেওয়া হয়েছে বিশেষ স্মারক। শহরের রকেট ক্লাবের পক্ষ থেকে অশুভ শক্তির বিনাশের প্রতীক হিসেবে এ বারও পোড়ানো হয়েছে রাবণের কুশপুতুল। নির্বিঘ্নেই ধুলিয়ানের বাইচ শেষ হয়েছে রাত ৯টাতেই।

আর জঙ্গিপুরের বাইচ শুরু দশমীর রাত প্রায় ১০টায়। শেষ হয়েছে বুধবার একাদশীর দুপুরে।

বছর ৬৫ বয়সের শঙ্কর মণ্ডল বাড়ির পরিজনদের নিয়ে প্রতি বছরই আসেন বাইচে। তাঁর কথায়, “রাত ১০টায় দল বেঁধে আসতাম আগে গ্রাম থেকে। সঙ্গে চটের বস্তা। সেই বস্তা পেতে ভাগীরথীর সদরঘাটে বসে থাকতাম গদাইপুরের পেটকাটি দুর্গার ভরসায়।’’

দূর থেকে মাঝ রাতে দেখা যেত মিটমিটে হ্যাজাকের আলো। নদীর দু’পাড় জুড়ে বসত মেলা। তারপর ঘণ্টা দুই ধরে নৌকো ভাড়া করে ঘুরতেন ভাগীরথীতে পেটকাটির সঙ্গে। শহর ও তার আশপাশে গোটা দশেক প্রতিমা হত তখন। সব প্রতিমা আসত সদরঘাটে। মাঝ রাতে প্রতিমা উঠত নৌকোয়। রাতের আঁধার কেটে আলো ফুটতেই একে একে বিসর্জন হত সব প্রতিমা। পেটকাটিকে নিয়ে যাওয়া হত শ্মশান ঘাটে। সেখানেই মাঝ নদীতে ভাসানো হত প্রতিমা।

তিনি জানান, এখন সে বাইচ কোথায়? মাঝ রাতে কারা পেটকাটি দুর্গার সঙ্গে আগে ঘুরবে তা নিয়ে তীব্র রেষারেষি। তা নিয়ে অশান্তিও হত শহরের পাড়ায় পাড়ায়। শেষ পর্যন্ত নৌকো বাইচের জৌলুষটাই হারিয়ে গেল। জঙ্গিপুর ও রঘুনাথগঞ্জ দুই শহরে প্রায় ৫০টি মতো প্রতিমা হয় এখন। কিন্তু বাইচ করে বিসর্জনের রেওয়াজ অনেকটাই তুলে দিয়েছেন বহু পুজো উদ্যোক্তারা নিজেরাই। হাতে গোনা কয়েকটি প্রতিমা এখন নদীতে নৌকোয় চড়িয়ে বাইচ করে বিসর্জন হয় জঙ্গিপুরে। কিন্তু জঙ্গিপুরের বাইচকে এখনও টিকিয়ে রেখেছে পেটকাটির আভিজাত্য। তাকে ঘিরে জনস্রোত আছড়ে পড়েও নদীর দুই পাড়ে। এ বারে সেই জনস্রোত ছিল আগের চেয়ে অনেক বেশি। কারণ গত দু’দিন বৃষ্টি হলেও এ দিন আকাশ ছিল পরিস্কার। বহু দর্শনার্থীই এ বারে যেতে পারেননি মাইল তিনেক দূরে পেটকাটির মণ্ডপে। তাই তারা ভিড় জমিয়েছেন নদীর পাড়েই।

তবে তুলনায় এ বারে বাইচে নৌকোর সংখ্যা ছিল কম। স্থানীয় বাসিন্দা রামানুজ দাস বলছেন, “নৌকোভাড়া ছিল মাত্রাছাড়া। উৎসব শেষে এই বাড়তি আর্থিক চাপ অনেকেই নিতে পারেননি। তাই হিড়িক ছিল কম।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন