ডাঁটার জন্য ঘরছাড়া দুই পরিবার

সাকুল্যে কয়েকটি সজনের ডাঁটা। তা নিয়ে বিবাদ, গণ্ডগোল, হাসপাতাল, থানা, পুলিশ—বাদ যায়নি কিছুই। নিট ফল, রানিনগরের তেজসিংহপুর গ্রামের দুই পরিবারের পুরুষ সদস্যেরা এক মাস ধরে ঘরছাড়া।

Advertisement

সুজাউদ্দিন

ডোমকল শেষ আপডেট: ২১ এপ্রিল ২০১৭ ০২:৩০
Share:

সাকুল্যে কয়েকটি সজনের ডাঁটা। তা নিয়ে বিবাদ, গণ্ডগোল, হাসপাতাল, থানা, পুলিশ—বাদ যায়নি কিছুই। নিট ফল, রানিনগরের তেজসিংহপুর গ্রামের দুই পরিবারের পুরুষ সদস্যেরা এক মাস ধরে ঘরছাড়া। এক পক্ষের অভিযোগ, বাড়ি ঢুকলেই তাঁদের খুন করে দেবে। সেই ভয়েই তাঁরা পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। অভিযোগ অস্বীকার করে অন্য পক্ষের পাল্টা দাবি, ওঁরাই তো পুলিশের কাছে ‘কেস’ করে বসে আছে।

Advertisement

ঘটনার সূত্রপাত মাসখানেক আগে। দুই পরিবারের জমির মাঝখানে লিকলিকে একটা সজনে গাছ। সেই গাছেরই ডাঁটা কোন পরিবার পাবে তা নিয়েই শুরু হয় বিবাদ। তা নিয়ে দুই পরিবারের সদস্যদের মধ্যে গণ্ডগোলও হয়। উভয় পক্ষের মোট পাঁচ জন জখমও হন। তাঁদের প্রথমে ভর্তি করানো হয় রানিনগরের গোধনপাড়া প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। পরে সেখান থেকে নিয়ে যাওয়া হয় মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে।

প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসকদের কেউ কেউ অবাক হয়ে মন্তব্য করেছিলেন, ‘‘তিলকে তাল করার কথাটা শুনেছি মশাই। কিন্তু গোটা কয়েক সজনে ডাঁটার জন্য দু’টো পরিবার যে এ ভাবে লাঠি, ধারাল অস্ত্র নিয়ে লড়াই করতে পারে তা নিজে চোখে না দেখলে বিশ্বাসই করতাম না।’’

Advertisement

ঘটনার পরে এন্তাজুল হক থানায় অভিযোগ করেন, নিয়ামত মণ্ডল ও তাঁর ছেলেরা মারধরের পাশাপাশি বাড়ি ভাঙচুর করে লুঠপাট চালিয়েছে। নিয়ামতের ছেলে জহির মণ্ডলের পাল্টা অভিযোগ, এন্তাজুল ও তাঁর ছেলেরা জহিরের বৃদ্ধ বাবা ও মাকে খুনের চেষ্টা করে। কোনও মতে তাঁরা প্রাণে বেঁচে গিয়েছে। এরপরেও এন্তাজুল তাঁদের নামে মিথ্যে অভিযোগ করেছেন।

ওই ঘটনায় পুলিশ এন্তাজুলের দুই ছেলেকে গ্রেফতারও করেছিল। কিন্তু ১৪ দিন পরে তাঁরা জামিনও পেয়ে যান। কিন্তু তার পরেও বাড়িতে ঢুকতে পারছেন না দুই পরিবারের পুরুষ সদস্যরা। পুলিশের দাবি, ওঁদের বা়ড়িতে ঢোকার ক্ষেত্রে কোনও সমস্যা নেই। এক পক্ষ ধরা পড়ার ভয়ে বাড়ি ঢুকছে না। অন্য পক্ষ ক্ষতিপূরণের দাবি তুলে বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র ডেরা বেঁধেছে।

তবে তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে ডোমকল মহকুমা এলাকায় গণ্ডগোল কিংবা খুন অত্যন্ত চেনা ঘটনা। শম্ভুনগরে বেড়া টপকে মুরগি চলে গিয়েছিল পড়শির বাড়িতে। তাড়া খেয়ে পালাতে গিয়ে মুরগির পায়ে চোট লাগে। সেই নিয়ে খুন হন এক জন। নসিপুরেও এক বাড়ির মুরগি গিয়ে ডিম পেড়েছিল পাশের বাড়িতে। তা নিয়েও তুলকালাম। শেষতক খুন। কুপিলাতেও জমির আলে পড়া এক সজনে গাছের দখলকে কেন্দ্র করে খুন হন এক প্রৌঢ়।

জেলা পুলিশের এক কর্তার কথায়, ‘‘সামান্য ক’টা সজনে ডাঁটার জন্য আমরাও কম বিব্রত হচ্ছি না। সে ডাঁটাও চোখে চোখে রাখতে হচ্ছে।’’ এ দিকে দুই বাড়ির জমির মাঝখানে দিব্যি দাঁড়িয়ে আছে সেই সজনে গাছ। কালবৈশাখীর ঝড় সামলেও ডাঁটাগুলি রয়েছে বহাল তবিয়তে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন