দিন কুড়ি ধরে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে অবশেষে হার মানলেন আপ কৃষ্ণনগর লোকালে বিস্ফোরণে আহত বিএসএফ জওয়ান। শুক্রবার রাতে কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে বছর তেইশের অলোক শীল নামে ওই যুবক মারা যান।
নদিয়ার রানাঘাটের পায়রাডাঙার বাসিন্দা অলোকবাবু বছর দেড়েক ধরে সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কনস্টেবল হিসেবে গুজরাটের ভুজে কর্মরত ছিলেন। ছুটিতে তিনি বা়ড়ি ফিরছিলেন। হাওড়া স্টেশনে রাতের ট্রেনে নেমে ১২ মে ভোরে শিয়ালদহ থেকে আপ কৃষ্ণনগর লোকালে ওঠেন তিনি। টিটাগড় স্টেশন ছাড়ার পর ট্রেনের মধ্যে দুষ্কৃতীদের লুঠপাটের প্রতিবাদ করতে গিয়ে তিনি বোমার আঘাতে আহত হন। গুরুতর আহত ওই জওয়ানকে কলকাতার বিআর সিংহ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। পরে তাঁকে এসএসকেএম হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। এ দিন রাতে সেখান থেকেই তাঁর বাড়িতে মৃত্যু সংবাদ আসে।
পায়রাডাঙ্গা স্টেশন থেকে এক কিলোমিটার দূরে পায়রাডাঙা পঞ্চায়েতের প্রীতিনগর ৫ নম্বর রাস্তায় বাড়ি অলোকদের। বাড়ি বলতে দু’কাঠা জমির উপর ইটের দেওয়াল, টালির ছাউনি দেওয়া এক কামরার ঘর। বাবা রতিকান্ত শীল পেশায় নির্মান কর্মী। এক ভাই ও তিন বোনের সংসারে কষ্টেসৃষ্টে পড়াশোনা করে নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছিলেন অলোকবাবু। শনিবার মৃতের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীদের ভিড়। কান্নায় ভেঙে পড়েছেন তাঁরা। মৃতের জামাইবাবু বিশ্বজিৎ বিশ্বাস বলেন, ‘‘ও বেশ সুস্থ হয়ে উঠছিল। সকলের সঙ্গে কথা বলত। দেখা করতে গেলেই আমাকে বলত, আমি সুস্থ হয়ে গেছি, এবার বাড়ি ফিরব। শুক্রবার আর হাসপাতালে যাইনি। রাত সাড়ে আটটার পর ফোনে জানতে পারি, ও আর নেই।’’
এলাকায় পরোপকারী হিসেবে পরিচিতি ছিল অলোকবাবুর। তাঁর মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ এলাকার মানুষ। স্থানীয় বাসিন্দা সুব্রত নাগ বলেন,’ ‘‘অলোক চাকরি পাওয়ায় ওর বাড়ির লোকজন স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিলে। খুব ভাল ছেলে ছিল অলোক। পরিবারটা পথে বসে গেল। এ দিন মৃতের বাড়িতে যান জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ তৃণমূলের দীপক বসু। তিনি বলেন, ‘‘অন্যায় দেখলেই রুখে দাঁড়াত অলোক। ওঁর পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করব।’’