ডিপোতে দাঁড়িয়ে রয়েছে বাস। ডান দিকে, এ ভাবেই ঝুঁকি নিয়ে চলছে যাতায়াত। জঙ্গিপুরে অর্কপ্রভ চট্টোপাধ্যায়ের তোলা ছবি।
কোনও আগাম ঘোষণা ছাড়াই শনিবার সকাল থেকে অনির্দিষ্ট কালের জন্য জঙ্গিপুর মহকুমা জুড়ে বাস ধর্মঘটের ডাক দিলেন বাস মালিকেরা। যার নিট ফল দিনভর বাস না পেয়ে হয়রান হলেন নিত্যযাত্রী থেকে সাধারণ মানুষ সকলেই। শুক্রবার ছোট গাড়ির মালিকদের সঙ্গে বাস মালিক সংগঠনের কর্তাদের বচসা ও হাতাহাতির ঘটনার জেরেই বাস মালিকদের এমন পদক্ষেপ বলে জানা গিয়েছে।
এই ধর্মঘটের জেরে জঙ্গিপুরে বাস মালিকদের তিনটি সংগঠনের বিভিন্ন রুটের প্রায় ১৩০টি বাস চলাচল বন্ধ ছিল। বাস মালিক সংগঠনের সম্পাদক মনিরুদ্দিন মণ্ডলের অভিযোগ, বাস মালিক হিসেবে তাঁদের কোনও নিরাপত্তা নেই। শুক্রবার দুপুরে বাসস্ট্যান্ডের কাছে ছোট গাড়ি থামিয়ে যাত্রী তোলা হচ্ছিল। বাস মালিক সংগঠনের সভাপতি রমিউল ইসলাম তার প্রতিবাদ করলে তাঁকে গালিগালাজ ও মারধ করা হয়। পুলিশকে জানানো সত্ত্বেও তারা কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। বিকেলে ফের ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে দু’পক্ষের মধ্যে গণ্ডগোল হয়।
পুলিশ দু’জন বাস মালিক ও দু’জন ছোট গাড়ির মালিককে থানায় নিয়ে যায়। রাতে ব্যক্তিগত জামিনে তাঁদের ছেড়েও দেওয়া হয়। বাস মালিক সংগঠনের অভিযোগ, বেআইনি ভাবে যে সব ছোট গাড়ি চলছে তা বন্ধের জন্য পুলিশ ও পরিবহণ দফতর কিছুই করছে না। কারণ তাদের মালিক তৃণমূলের ছত্রছায়ায় আছে। বাস মালিকদের অভিযোগ, এর আগে জুন ও জুলাই মাসেও বাস ধর্মঘট করার পরে প্রশাসনের তরফে আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল বেআইনি সমস্ত গাড়ি বন্ধ করা হবে। কিন্তু তারপরে কিছুই হয়নি। এ দিন বাস মালিকেরা জেলার আরটিওকে জানিয়েই ধর্মঘট শুরু করেন বলে দাবি করেছেন।
তৃণমূল নিয়ন্ত্রিত ছোট গাড়ির মালিক সংগঠনের সভাপতি আজামুল শেখ জানান, শুক্রবার জঙ্গিপুর মহকুমা হাসপাতাল থেকে এক রোগী ও তাঁর পরিজনদের নিমতিতা নিয়ে যাচ্ছিলেন এক ছোট গাড়ির মালিক। রাস্তার পাশে একটি জলের বোতল কিনতে গাড়িটি দাঁড় করায় রোগীর পরিবার। বোতল নিয়ে তিনি যখন গাড়িতে ফের উঠছেন তখনই স্থানীয় এক বাস মালিক ভাবেন যে, রাস্তা থেকে যাত্রী তোলা হচ্ছে। এরপরেই ঝামেলা শুরু হয়। অভিযোগ, গাড়ির সামনের কাচ ভেঙে দেওয়া হয়। কোনও কথা না শুনে ওই বাস মালিক গাড়ির মালিককে চড় মারেন। গোলমাল শুরু হতেই রোগীকে নিয়ে তাঁর পরিজনরাও নেমে যান।
কিন্তু কাউকে না জানিয়ে শনিবার সকাল থেকে এ ভাবে বাস বন্ধ হয়ে যাওয়ায় হয়রান হয়েছেন যাত্রীরা। তাঁরা ট্রেকার, লছিমন ও ম্যাজিক গাড়িতেই যাতায়াত করেছেন এ দিন। জেলার আঞ্চলিক পরিবহণ অধিকর্তা এহেসান আলি বলেন, ‘‘বাস বন্ধের ব্যাপারে বাস মালিক সমিতি আমাকে আগাম কিছুই জানায়নি। এ ভাবে বাস বন্ধ হলে যাত্রীদের অসুবিধে তো হবেই।’’ জঙ্গিপুরের এসডিও প্রিয়াঙ্কা সিংলা বলেন, ‘‘বাস ধর্মঘটের কথা আমাকেও মালিকেরা জানাননি। কেন ধর্মঘট তাও জানি না। আমি বাস মালিকদের সঙ্গে কথা বলছি।’’