জোড়া চাষ। মাচায় পটল, মাটিতে বেড়ে উঠছে একাঙ্গি। নিজস্ব চিত্র
পটলের খেত। এত দিন ধরে তাতে পটলই ফলত। চাষিরা তেমনই জানতেন। গত কয়েক বছরে হিসেবটা বদলেছে বিলকুল। পটলের জমিতে ফলছে ওষধি গাছ একাঙ্গিও। পটলের সঙ্গে সঙ্গে একাঙ্গি বেচেও বেশি উপায় হচ্ছে চাষিদের।
কৃষি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দিনদিন চাষের জমি কমছে। ফলে পরোক্ষে কৃষি জমি বাড়াতে হলে মিশ্র চাষ ছাড়া আর গতি নেই। গত কয়েক বছর ধরে তারা লাগাতার প্রচার করেছে গ্রামে গ্রামে। তাতে কাজও হয়েছে। নদিয়া-মুর্শিদাবাদ জেলায় বহু চাষি একই জমিতে সাথী ফসল চাষের দিকে ঝুঁকছেন। ফলে আর্থিক দিক থেকে অনেকটাই লাভবান হচ্ছেন তাঁরা।
তেহট্ট মহকুমার করিমপুর ১, ২ ও তেহট্ট ১, ২ ব্লকের অনেক চাষি গত কয়েক বছরে এই সাফল্য পেয়েছেন বলে মহকুমা কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে। জমিতে কলা কিংবা পেঁপের চারা বেড়ে ওঠার পাশাপাশি এক সাথে সেই জমিতেই সময়মতো রসুন, পেঁয়াজ, আদা, হলুদ, সরষে-সহ অনেক রকম আনাজ চাষ করে যে অতিরিক্ত পয়সা ঘরে তোলা যায় তা করে দেখিয়েছেন হোগলবেড়িয়ার আলাহিম মণ্ডল ও শ্যামল মণ্ডলরা।
প্রান্তিক চাষি আলাহিম তার সাত কাঠা জমিতে পটলের সঙ্গে পেঁপে ও বরবটি চাষ করছেন। তিনি বলেন, “প্রতি বছর যে জমিতে শুধু পটল চাষ করতাম, এ বার সেই জমিতে বরবটি চাষ করে এক মাসে প্রায় সাড়ে ন’ হাজার টাকার বরবটি বিক্রি করেছি। পেঁপেও বিক্রি হয়েছে পাঁচ হাজার টাকার। ফলে পটলের একই জমি থেকে বাড়তি পনেরো হাজার বেশি আয় হয়েছে। এ ছাড়াও সাথী ফসলের কথা ভেবে দু’ বছর আগে পাঁচ বিঘা জমিতে একসাথে ২৫০০ সেগুন চারা, ১০০ নিম গাছ ও ২৫০ শিমুল চারার সাথে ৮৫০ টি লেবু গাছ লাগিয়েছিলাম। সেগুন ও শিমুল গাছ বৃদ্ধির সাথে সাথে এক মরসুমে সত্তর হাজার টাকার লেবু বেচেছি।” তেহট্ট মহকুমার কৃষি অধিকর্তা (প্রশাসন)মহম্মদ জাহিদ জানান, জেলা জুড়ে চলা কৃষি মেলায় কৃষি দফতরের পক্ষ থেকে চাষিদের এমন সাথী ফসলের বিষয়ে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। পাট চাষ করে চাষিরা লাভ পাচ্ছেন না। সেই জন্য পাট খেতে মুগ ডাল চাষ করার জন্য দফতর থেকে চাষিদের সবসময় বোঝানোর চেষ্টা চলছে। মিশ্র চাষ করে অতিরিক্ত লাভের মুখ দেখছেন মুর্শিদাবাদের চাষিরাও। একই জমিতে পটলের সঙ্গে একাঙ্গী, কিংবা মসুর বা ছোলার সঙ্গে তিসি চাষ করছেন। মুর্শিদাবাদের উপ কৃষি অধিকর্তা (প্রশাসন) তাপস কুণ্ডু বলছেন, “মিশ্র চাষ খুব লাভদায়ক। এ ধরনের চাষে একটি ফসল মার গেলে অন্যটি পুষিয়ে দেয়।” ডোমকলের কুপিলার সাবুল মণ্ডল ৩ বিঘা জমিতে লিচু বাগান করেছেন। ওই জমিতে তিনি গত দু’বছর পাট চাষ করেছেন। এ বারে ফুলকপি ও বাঁধাকপি চাষ করেছেন। সাবুল বলেছেন, “এ বছর থেকে লিচু ধরতে শুরু করবে। ফলে এক দিকে আনাজ চাষে লাভ হচ্ছে। আবার লিচু বেচেও লাভ হবে।’’