কীর্তনকে ছড়িয়ে দিতে শিষ্যদের নির্দেশ শ্রীচৈতন্যের

চৈতন্য সখা নিত্যানন্দের দ্বাদশ পুরুষ তথা বলদেব মন্দিরের প্রধান জীবনকৃষ্ণ গোস্বামী এই উৎসবের শুরুর কথা প্রসঙ্গে জানান, একটা সময় বলদেব জিউ মন্দিরের প্রধান উৎসব ছিল বলদেবের জন্মতিথি বা ঝুলন পূর্ণিমায়।

Advertisement

দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়

নবদ্বীপ শেষ আপডেট: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৮:০০
Share:

প্রতীকী ছবি।

নবদ্বীপের গৌড়ীয় বৈষ্ণব সমাজ এবং কম-বেশি দেড়শো মঠ-মন্দিরের উদ্যোগে সাড়া বছর ধরে কীর্তনকে ঘিরে নানা অনুষ্ঠান হয়। নবদ্বীপের শতাব্দী প্রাচীন বলদেব জিউ মন্দিরের কীর্তন উৎসব তার মধ্যে ভিন্নতর। পাঁচ দশক ধরে বলদেব মন্দিরে শ্রীপঞ্চমীর ঠিক আগে দশ দিন ধরে চলে এই কীর্তন উৎসব। বর্তমানে গৌড়ীয় বৈষ্ণবসমাজের কাছে বাংলার নিজস্ব কীর্তনশৈলীকে বাঁচিয়ে রাখার অন্যতম উৎসব বলে পরিচিতি লাভ করেছে।

Advertisement

চৈতন্য সখা নিত্যানন্দের দ্বাদশ পুরুষ তথা বলদেব মন্দিরের প্রধান জীবনকৃষ্ণ গোস্বামী এই উৎসবের শুরুর কথা প্রসঙ্গে জানান, একটা সময় বলদেব জিউ মন্দিরের প্রধান উৎসব ছিল বলদেবের জন্মতিথি বা ঝুলন পূর্ণিমায়। পরবর্তী কালে নিত্যানন্দ বংশের একাদশ পুরুষ মহেন্দ্রলাল গোস্বামীর মৃত্যুর পর, তাঁর নির্যান তিথিতে এই উৎসবের সূচনা হয়ে ছিল সাতচল্লিশ বছর আগে।

আশি ছুঁই ছুঁই জীবনকৃষ্ণ গোস্বামীই এই উৎসবের মূল উদ্যোক্তা। বলদেব মন্দিরের অন্যতম রতন কৃষ্ণ গোস্বামী বলেন, “আজ থেকে প্রায় একশো বছর আগে তিনি মহেন্দ্রলাল গোস্বামীর গুরুদেব কীর্তন নিয়ে ভাবনাচিন্তার কাজটি শুরু করে ছিলেন। তাঁর দূরদৃষ্টিতে ধরা পড়েছিল ঠিক ভাবে রক্ষা করতে না পারলে কীর্তনকে বাঁচিয়ে রাখা কঠিন হবে। সুগায়ক প্রাণগোপাল ‘গৌরলীলা’ বলে এক বিশেষ জনপ্রিয় কীর্তন ধারার উদ্ভাবক ছিলেন। সেই পথ অনুসরণ করে নিজের গুরুদেবের নির্যান তিথিতে এই উৎসবের সূচনা করেন জীবনকৃষ্ণ গোস্বামী।”

Advertisement

এ প্রসঙ্গে বলদেব মন্দিরের পরবর্তী প্রজন্মের কিশোরকৃষ্ণ গোস্বামী বলেন, ‘‘কীর্তন ছিল শ্রীচৈতন্যের প্রিয়। তিনি নিত্যানন্দ ও হরিদাসকে দায়িত্ব দিয়ে ছিলেন সমাজের সর্বস্তরের মানুষের তাঁদের কাছে কীর্তনকে পৌঁছে দিতে। তাই নিত্যানন্দের বংশধর হিসাবে কীর্তন-কেন্দ্রিক উৎসব আমাদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে।"

তাঁর আক্ষেপ, বাংলার আদি ও নিজস্ব সঙ্গীত ধারা হওয়া সত্ত্বেও কীর্তনের চর্চা ক্রমশ ক্ষীণ হয়ে আসছে। নির্দিষ্ট কিছু ধারার মানুষ ছাড়া কীর্তন নিয়ে সাধারণের মধ্যে আগ্রহ বড় কম। শিক্ষিত বাঙালির কাছে কীর্তনের ঠিক গুরুত্ব তুলে ধরাই এই উৎসবের লক্ষ্য।

কীর্তনের ভান্ডার যে কত সমৃদ্ধ, কত বৈচিত্র্যময় হতে পারে, তা তুলে ধরার জন্য এই আয়োজন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন