‘শাস্তি’ দিতে খুন্তির ছ্যাঁকা

নদিয়ার অরবিন্দনগর প্রাথমিক স্কুলের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী শ্রাবন্তী মল্লিক। বাবা প্রবীর মল্লিক মারা গিয়েছেন বছর দশেক আগে। মা বাসন্তী মল্লিক কাজ করেন দিল্লিতে। কোতোয়ালি থানার শিমুলতলা এলাকায় মামাবাড়িতে শ্রাবন্তী ও তার দাদা নয়ন থাকে দিদিমা সন্ধ্যা বিশ্বাস ও মাসি ডলি মহান্ত-র সঙ্গে। পাড়ার লোকের অভিযোগ, কথায়-কথায় ভাইবোনের উপর অত্যাচার চালাতেন দিদিমা ও মাসি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ৩০ জুলাই ২০১৮ ০৯:০০
Share:

পায়ে ছ্যাঁকার দাগ। নিজস্ব চিত্র।

বাবা মারা গিয়েছেন। মা পরিচারিকার কাজ করেন দিল্লিতে। নিজের দুই সন্তানকে রেখে গিয়েছেন গ্রামে নিজের মা আর বোনের কাছে। বছর আটেকের সেই বোনঝিকে ‘শাস্তি’ দিতে তার সারা গায়ে গরম খুন্তির ছ্যাঁকা দিয়ে দগদগে ঘা করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে মাসির বিরুদ্ধে। দিদিমা-র বিরুদ্ধেও উঠেছে দু’টি শিশুর উপর নির্যাতন চালানোর অভিযোগ। একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ও শিশুর ঠাকুমার করা অভিযোগের ভিত্তিকে মাসি ও দিদিমাকে রবিবার গ্রেফতার করেছে পুলিশ। চিকিৎসার জন্য শিশুটিকে ভর্তি করা হয়েছে কৃষ্ণনগর সদর হাসপাতালে।

Advertisement

প্রসঙ্গত, দিন কয়েক আগেই বেলুড়ে এই রকম একটি ঘটনা ঘটে। পড়া না-পারার জন্য সেখানে শিশুকে গরম খুন্তির ছ্যাঁকা দিয়েছিলেন গৃহশিক্ষিকা।

নদিয়ার অরবিন্দনগর প্রাথমিক স্কুলের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী শ্রাবন্তী মল্লিক। বাবা প্রবীর মল্লিক মারা গিয়েছেন বছর দশেক আগে। মা বাসন্তী মল্লিক কাজ করেন দিল্লিতে। কোতোয়ালি থানার শিমুলতলা এলাকায় মামাবাড়িতে শ্রাবন্তী ও তার দাদা নয়ন থাকে দিদিমা সন্ধ্যা বিশ্বাস ও মাসি ডলি মহান্ত-র সঙ্গে। পাড়ার লোকের অভিযোগ, কথায়-কথায় ভাইবোনের উপর অত্যাচার চালাতেন দিদিমা ও মাসি। নয়ন ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ত। কিছু দিন আগে তাকে জোর করে স্কুল থেকে ছাড়িয়ে নেওয়া হয়। শ্রাবন্তীর পড়াশোনা, খাওয়াদাওয়ার দিকেও দিদিমা বা মাসি বিন্দুমাত্র খেয়াল রাখতেন না বলে অভিযোগ।

Advertisement

শুক্রবার প্রতিবেশীরা শ্রাবন্তীর চিৎকার শুনে ছুটে আসেন। এসে দেখেন শিশুটির শরীরে একাধিক জায়গায় পুড়ে দগদগে ফোস্কা পড়ে গিয়েছে। হাতে গরম খুন্তি নিয়ে দাঁড়িয়ে বকাবকি করছেন ডলি। কী হয়েছে জানতে চাওয়া হলে শ্রাবন্তী জানায়, স্কুলে খাতা কিনতে হবে বলে মাসির কাছে ১০ টাকা চেয়েছিল। মাসি তা দেননি। তাই মাসির ব্যাগ থেকে সে ১০ টাকা নেয়। তার জন্য মাসি তাকে খুন্তির ছ্যাঁকা দিয়েছেন। প্রতিবেশীরা প্রতিবাদ করতে গেলে ডলি তাঁদের গালাগাল দেন
বলেও অভিযোগ।

এর পর স্থানীয় এক যুবক গোটা বিষয়টির ছবি তুলে সোস্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেন। সেই ছবি দেখে খোঁজ করতে-করতে রবিবার গ্রামে শিশুটির বাড়ি আসেন কৃষ্ণনগরের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সদস্যরা। তাঁরাই পুলিশে খবর দেন। পুলিশ এসে শিশুটিকে উদ্ধার করে জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। মাসি ও দিদিমাকে প্রথমে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে আসে পুলিশ, পরে শিশুটির ঠাকুমা উমা মল্লিকের দায়ের করা অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ মাসি ও দিদিমাকে গ্রেফতার করেছে। শ্রাবন্তী ও নয়নের কাকা অভিজিৎ মল্লিক বলছেন, “আমাদের কিছু না জানিয়েই বৌদি বাচ্চা দু’টোকে ওদের কাছে রেখে গিয়েছিলেন। ওরা এমন নিষ্ঠুর কাজ করবে ভাবতেই পারিনি।” পুলিশ টেলিফোনে বাসন্তীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা চালাচ্ছে, কিন্তু এখনও তাঁকে পাওয়া যায়নি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন