চিনা-রহস্য

প্রশ্নের মুখে পাটকাঠি

স্থানীয় লোকজন জানাচ্ছেন, কিছু ব্যবসায়ী গাড়ি করে গাঁ-গঞ্জ থেকে পাটকাঠি কিনে নিয়ে যান। কিন্তু সেই চাহিদা আচমকাই বেড়ে যায় বছর তিনেক। পাটকাঠির কারবারিরা জানান, ২০১৫ সালে মধুপুরে ‘চিনা কারখানা’ হওয়ার পর থেকেই কাঠির জোগান দিতে হিমশিম খেতে হত।

Advertisement

শুভাশিস সৈয়দ

নওদা শেষ আপডেট: ০৭ জুলাই ২০১৮ ০৫:০০
Share:

হাতে রইল পাটকাঠি! ক’দিন ধরে ছাই উড়িয়ে এ বার সিআইডি কর্তাদের নজরে পাট কাঠি। নওদার মধুপুরের ওই ‘চিনা কারখানা’য় মাসে ষাট-সত্তর টন পাটকাঠি আসত বলে

Advertisement

জানা গিয়েছে। এই বিপুল পরিমাণ পাটকাঠি ঠিক কী কাজে লাগত তা ভাবাচ্ছে সিআইডিকে। বুধবার কলকাতা থেকে সিআইডি-র কর্তারা ধৃত পাঁচ চিনা নাগরিককে নিয়ে ওই কারখানা ঘুরে দেখেন। সে দিন পর্যন্ত কারখানার ছাদে রাখা ছিল পাটকাঠি।

মুর্শিদাবাদের বেলডাঙা, নওদা, রেজিনগর তো বটেই পড়শি জেলা নদিয়াতেও এখনও পর্যন্ত অন্যতম অর্থকরী ফসল পাট। ফলে পাটকাঠির জোগানও আছে ভালই। কিন্তু সেই পাটকাঠি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে জ্বালানি হিসেবেই কাজে লাগত। ব্যবহার করা হত পানের বরজে। বছর দশ-পনেরো থেকে পাটকাঠির চাহিদা বেড়েছে।

Advertisement

স্থানীয় লোকজন জানাচ্ছেন, কিছু ব্যবসায়ী গাড়ি করে গাঁ-গঞ্জ থেকে পাটকাঠি কিনে নিয়ে যান। কিন্তু সেই চাহিদা আচমকাই বেড়ে যায় বছর তিনেক। পাটকাঠির কারবারিরা জানান, ২০১৫ সালে মধুপুরে ‘চিনা কারখানা’ হওয়ার পর থেকেই কাঠির জোগান দিতে হিমশিম খেতে হত।

পাটকাঠির মহাজন, বেলডাঙার বড়ুয়ার আনসার শেখ জানান, প্রতি মাসে দশ থেকে পনেরো টন পাটকাঠি সরবরাহ করতেন। কারখানার লোক টনের হিসেবে পাটকাঠি কিনতেন। তাঁরা কিনতেন ৩২ টাকা কেজি দরে। আনসার হরিহরপাড়ার রুকুনপুর, নওদার ত্রিমোহিনী ও সর্বাঙ্গপুরের দুধসর এলাকা থেকে পাটকাঠি কিনে কারখানায় বিক্রি করতেন। আনসারের মতো অনেকেই গঙ্গাধারীঘাট পেরিয়ে ডোমকল পাড়দিয়ার এবং তেহট্ট-১ ব্লকের বিভিন্ন জায়গা থেকে পাটকাঠি নিয়ে এসে কারখানায় বিক্রি করতেন। নওদার বাসিন্দা রাকেশ অধিকারী বলছেন, ‘‘পাটপাঠির এমন দাম আগে কখনও মেলেনি।’’ পাটকাঠির আর এক কারবারি খুরশেদ মোল্লা জানাচ্ছেন, খোলা বাজারে কুইন্টাল পিছু সাড়ে তিনশো টাকা দরে পাটকাঠি কিনে তিনি কারখানায় বিক্রি করতেন পাঁচশো টাকা দরে। আনসার জানান, পাটকাঠি সরবরাহের পরে টাকা পেতে সপ্তাহ খানেক লেগে যেত। পঞ্চাশ জন শ্রমিক পাটকাঠি পোড়ানোর কাজ করতেন। তাঁরা দৈনিক ৩০০ টাকা করে মজুরি পেতেন। রাতের কর্মীদের মজুরি ছিল দৈনিক পাঁচ হাজার টাকা।

সিআইডি-র এক কর্তা জানান, পাটকাঠি থেকে স্রেফ ছাই, নাকি সেই ছাইয়ের আড়ালে ঠিক কী অমূল্য রতন তৈরি হত তা জানার চেষ্টা চলছে। নওদার ব্লক তৃণমূলের সভাপতি মোশারফ হোসেন বলছেন, ‘‘পাটকাঠি বেচে গ্রামের কিছু লোকের দু’পয়সা বাড়তি আয় হত। তবে কারখানায় ঠিক কী হত, তা অবশ্য আমরা জানি না। তবে পুলিশ তো সব খতিয়ে দেখছে। আশা করছি, তদন্তে আসল ঘটনা বেরিয়ে আসবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন