রানাঘাট-কাণ্ডে পলাতক চার সন্দেহভাজন বাংলাদেশি নাগরিকের বিরুদ্ধে লুক আউট নোটিস জারির তোড়জোড় শুরু করল সিআইডি। এ ব্যাপারে বিদেশ মন্ত্রকের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে তারা। গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, ওই চার জনেরই বৈধ পাসপোর্ট রয়েছে। কাজেই এরা যদি ভারতের কোনও বিমানবন্দর, সমুদ্র বা নদী-বন্দর কিংবা স্থলসীমান্ত দিয়ে পাসপোর্ট ব্যবহার করে অন্য দেশে ঢুকতে যায়, সে ক্ষেত্রে লুক আউট নোটিস জারি থাকলে তাদের ধরা যেতে পারে। ইতিমধ্যে শনিবার দিল্লিতে নির্যাতিতা সন্ন্যাসিনীর সঙ্গে দেখা করে তাঁর রক্তের নমুনা সংগ্রহ করেছে কলকাতা থেকে যাওয়া সিআইডি-র দল।
গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, ধর্ষণ মামলার তদন্তের নিয়ম মেনেই সন্ন্যাসিনীর রক্তের নমুনা নেওয়া হয়েছে। অত্যাচারের ফলে মহিলার শরীর থেকে রক্ত যেমন ঘটনাস্থলে পড়তে পারে, তেমনই রক্ত লেগে যেতে পারে ধর্ষকের জামাকাপড়ে। অভিযোগকারিণীর রক্তের গ্রুপের সঙ্গে ওই সব রক্তের দাগের গ্রুপ মিললে তা তদন্তে সহায়ক হয়। রানাঘাটের কনভেন্টে ১৩ মার্চের ডাকাতি ও ধর্ষণের ঘটনায় ছ’জন সন্দেহভাজনকে এখনও পর্যন্ত গ্রেফতার করেছে পুলিশ। কিন্তু তদন্তকারীদের একাংশই জানাচ্ছেন, বৃদ্ধা সন্ন্যাসিনীকে যে দুষ্কৃতী ধর্ষণ করেছিল, ধৃতদের মধ্যে সে নেই। বস্তুত, ধর্ষকের নাগাল পেতে হলে এই ঘটনায় পলাতক আরও ছয় সন্দেহভাজনকে হাতে পেতে হবে বলে মনে করছেন গোয়েন্দারা। লুক আউট নোটিসের ভাবনা সেখান থেকেই।
সিআইডি-র এক শীর্ষ কর্তা এ দিন বলেন, ‘‘সোমবারের মধ্যেই এই নোটিস জারি হয়ে যাবে বলে আশা করছি।’’ তবে গোয়েন্দারা মেনে নিচ্ছেন, ওই চার জন ইতিমধ্যেই বিদেশে পালিয়ে গিয়ে থাকলে লুক আউট নোটিস আর কাজে আসবে না। এই চার জন বাদে রানাঘাট-কাণ্ডে পলাতক অন্য দু’জনের পাসপোর্ট নেই বলে জেনেছেন গোয়েন্দারা। এরা হল, ঘটনার মূল চক্রী বাংলাদেশের নাগরিক মিলন সরকার এবং আরও এক দুষ্কৃতী। পাসপোর্ট না থাকায় এদের নামে লুক আউট নোটিস জারি করার সুযোগ নেই। তবে তদন্তকারীদের একাংশের ধারণা, ঘটনার পরেই তড়িঘড়ি পশ্চিমবঙ্গের আন্তর্জাতিক সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়ায় সন্দেহভাজনরা সকলে হয়তো দেশ ছেড়ে পালাতে পারেনি। হতে পারে, অন্য কোনও রাজ্যে তারা গা ঢাকা দিয়ে রয়েছে।
ইতিমধ্যেই পলাতক দুষ্কৃতীদের কয়েক জনের স্কেচ আঁকিয়েছে পুলিশ। সেই সব স্কেচ, রানাঘাট কনভেন্টের সিসিটিভি ফুটেজ এবং ধৃতদের ফটোগ্রাফ সিআইডি দেখাতে চায় ওই সন্ন্যাসিনীকে। গোয়েন্দারা জানতে চান, এদের মধ্যে কেউ তাঁর উপরে নির্যাতন চালিয়েছিল কি না। এ দিন অবশ্য ঘটনার ব্যাপারে সন্ন্যাসিনীকে কিছু জিজ্ঞাসা করা হয়নি। পরে তাঁর সঙ্গে বিস্তারিত ভাবে কথা বলতে চায় সিআইডি। তারা জানিয়েছে, ভবিষ্যতে সন্ন্যাসিনী রাজি হলে বিচারকের কাছে তাঁর গোপন জবানবন্দির জন্য আদালতে আবেদনও জানানো হবে।
সিআইডি জানায়, ওই সন্ন্যাসিনী এখন দিল্লির যে জায়গায় আছেন, সেটি মন্দির মার্গ থানার অন্তর্গত। শুক্রবার কলকাতা থেকে রওনা হওয়া এক মহিলা অফিসার-সহ সিআইডি-র দলটি মন্দির মার্গ থানার সহায়তা চাইলে সেখানকার পুলিশ এক চিকিৎসকের ব্যবস্থা করে দেয়। এ রাজ্যের গোয়েন্দাদের উপস্থিতিতে এ দিন বিকেলে ওই চিকিৎসক সন্ন্যাসিনীর রক্তের নমুনা সংগ্রহ করেন। তার পর সেই নমুনা তুলে দেওয়া হয় সিআইডি-র হাতে।
রানাঘাট কাণ্ডের তদন্তে নেমে গত ২৫ মার্চ রাতে মুম্বই থেকে মহম্মদ সালিম শেখ ও হাবরা থেকে গোপাল সরকারকে গ্রেফতার করে সিআইডি। এর পর মোবাইল ফোনের সূত্র ধরে লুধিয়ানায় ধরা পড়ে চার জন। সিআইডি-র একটি দল আগেই লুধিয়ানায় গিয়েছে। এ দিন সংস্থার এক কর্তা জানান, লুধিয়ানায় ধৃত এই চার জনের সঙ্গে রানাঘাট কাণ্ডের অন্যতম মূল চক্রী মিলন সরকারের যোগাযোগ রয়েছে। রানাঘাটের ঘটনার তিন দিন পরেও মিলন ওই চার জনের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছিল। একটি সূত্রের দাবি, বালুরঘাট ও খড়্গপুরের দু’টি ডাকাতির ঘটনায় মিলনের এই ডাকাত দলের যোগ মিলেছে। তবে রানাঘাটে ওই চার জন হাজির ছিল বলে এখনও প্রমাণ মেলেনি।