কলেজ চত্বরে কর্তার সামনে যুযুধান দু’পক্ষ

ওই কলেজে শাসক দলের ছাত্র সংগঠনের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে বিবাদ দীর্ঘদিনের। এর আগেও একাধিক বার দু’পক্ষের গন্ডগোল হয়েছে। গুলি-বোমা চলেছে। মাঝে কিছু দিন বন্ধ থাকার পরে মাসখানেক আগে থেকে ফের উত্তেজনা তৈরি হতে থাকে।

Advertisement

নিজস্ব  সংবাদদাতা

কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ০৯ মার্চ ২০১৯ ০১:৪৯
Share:

গোলমাল থামলেও পাহারায় পুলিশ। শুক্রবার কৃষ্ণনগর গভর্নমেন্ট কলেজে। নিজস্ব চিত্র

ভিতরে-ভিতরে উত্তেজনা ছড়াচ্ছিল কিছু দিন ধরে। তাল ঠুকছিল দু’পক্ষই। শুক্রবার জেলাশাসক ও জেলা পুলিশ সুপারের উপস্থিতিতেই কৃষ্ণনগর গভর্নমেন্ট কলেজে গন্ডগোলে জড়িয়ে পড়ল টিএমসিপি-র দুই গোষ্ঠী।

Advertisement

ওই কলেজে শাসক দলের ছাত্র সংগঠনের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে বিবাদ দীর্ঘদিনের। এর আগেও একাধিক বার দু’পক্ষের গন্ডগোল হয়েছে। গুলি-বোমা চলেছে। মাঝে কিছু দিন বন্ধ থাকার পরে মাসখানেক আগে থেকে ফের উত্তেজনা তৈরি হতে থাকে।

এই গোলমালের এক দিকে টিএমসিপি-র ইউনিট সভাপতি সুজয় হালদার, অন্য দিকে বনমালী মোদক ও সায়ন নন্দীরা। দুই পক্ষেরই অভিযোগ, বহিরাগতেরা আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে কলেজে ঘুরে বেড়াচ্ছে। সাধারণ পড়ুয়াও আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। ভারপ্রাপ্ত শিক্ষককে একাধিক বার জানিয়েও লাভ হয়নি বলে তাঁদের অভিযোগ। বুধবারই বেশ কিছু পড়ুয়া জেলাশাসককে গোটা বিষয়টি জানিয়ে নিরাপত্তার দাবি জানান। তার পরেও পুলিশ-প্রশাসনকে হস্তক্ষেপ করতে দেখা যায়নি বলে অভিযোগ করছেন শিক্ষকদের একটা অংশ।

Advertisement

আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে ওই কলেজে স্ট্রং রুম হবে। ডিসি-আরসি হিসাবেও এই কলেজ ব্যবহার করা হবে। তাই শুক্রবার পুলিশ সুপারকে সঙ্গে নিয়ে কলেজ পরিদর্শনে যান জেলাশাসক সুমিত গুপ্ত। তাঁদের দেখেই এক পক্ষ স্লোগান দিতে থাকে। তাঁদের পরিদর্শনের মধ্যেই দু’পক্ষ মারামারিতে জড়িয়ে পড়ে। পুলিশ দুই পক্ষের ছাত্রদেরই কলেজ চত্বর থেকে বার করে দেয়।

গোটা ঘটনায় আতঙ্কিত সাধারণ পড়ুয়ারা। প্রথম বর্ষের সুজাতা চৌধুরী, সুমনা সাহারা বলেন, “আমাদের তো কলেজে আসতেই ভয় করচ্ছে। জোর করে সংসদে ডেকে নিয়ে যাচ্ছে। রাজনীতি করতে বলছে!” তাঁদের অভিযোগ, ‘‘এ দিন ক্লাস চলাকালীন সায়নদারা এসে আমাদের মিটিং-এ যেতে বলে। বাইরের ছেলেরা এসে আমাদের নানান ভাবে উত্ত্যক্ত করে। খারাপ কথা বলে।”

দুই পক্ষই সশস্ত্র বহিরাগতদের কলেজে আনার অভিযোগ তুলছে। সুজয় হালদারের কথায়, “আমরা বাধ্য হয়েই জেলাশাসককে জানিয়েছি। বনমালী-সায়নেরা সমাজবিরোধীদের কলেজে নিয়ে আসছে। এখনই নজর না দিলে ভবিষ্যতে খারাপ কিছু ঘটে যেতে পারে।” বনমালী মোদকের পাল্টা অভিযোগ, “সুজয়দের সঙ্গে যারা কলেজে ঢুকছে, তাদের সঙ্গে আগ্নেয়াস্ত্র থাকছে। আমরা ভারপ্রাপ্ত শিক্ষককে বারবার লিখিত ভাবে জানিয়েছি। কোনও লাভ হয়নি।”

এ সব ক্ষেত্রে সাধারণত যা বলা হয়, টিএমসিপির জেলা সভাপতি সৌরিক মুখোপাধ্যায়ও বলেন, “এই ধরনের ঘটনা কোনও ভাবেই মেনে নেওয়া হবে না। অভিযোগ যদি সত্যি হয়, যারা জড়িত তাদের সকলের বিরুদ্ধেই সংগঠনগত ভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” শিক্ষকদের অনেকেই বলছেন, ‘‘ওই ছাত্রদের কথা থেকে একটা বিষয় স্পষ্ট, কলেজের ভিতরে বহিরাগতেরা আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে ঢুকছে।’’ ভারপ্রাপ্ত শিক্ষকের উদাসীনতা দেখে তাঁদের বেশির ভাগই ক্ষুব্ধ। ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক শোভন নিয়োগী অবশ্য দাবি করেন, “লিখিত ভাবে আমাকে কেউ কিছু জানায় নি।” কিন্তু কলেজের সর্বময় কর্তা হিসাবে তিনি সাধারণ পড়ুয়াদের লিখিত অভিযোগের জন্য অপেক্ষা করবেন কেন? কেন নিজে থেকে ব্যবস্থা নেবেন না? জবাব এড়িয়ে শোভন পাল্টা বলেন, “এর উত্তর আপনাদের কেন দিতে যাব!”

পদাধিকার বলে জেলাশাসক সুমিত গুপ্ত এই কলেজের পরিচালন সমিতির সভাপতি। তিনি বলেন, “বিষয়টা কানে এসেছে। পুলিশের সঙ্গে কথা বলব, যাতে এমনটা আর না হয়।” পুলিশ সুপার রূপেশ কুমার এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন