ভাঙা ঘরেই চলছে ইতিহাসের ক্লাস 

স্কুলে ক্লাসঘর ৩০টি। তবে, ‘বিপজ্জনক’ বলে আপাতত বন্ধ ঘরের সংখ্যা এগারো। ঘরের সামনে বড় হরফে লেখা— ‘যে কোনও সময়ে বিপদ ঘটতে পারে, সাবধান’।

Advertisement

আব্দুুল হাসিম 

রানিনগর  শেষ আপডেট: ১২ অগস্ট ২০১৮ ০১:২৬
Share:

বিপজ্জনক। রানিনগরে। নিজস্ব চিত্র

স্কুলে ক্লাসঘর ৩০টি। তবে, ‘বিপজ্জনক’ বলে আপাতত বন্ধ ঘরের সংখ্যা এগারো। ঘরের সামনে বড় হরফে লেখা— ‘যে কোনও সময়ে বিপদ ঘটতে পারে, সাবধান’।

Advertisement

বাকি ১৯টি ঘরে চলছে পঞ্চম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির ক্লাস। গাদাগাদি করে। বেঞ্চ পর্যাপ্ত নেই। স্কুলের নোনা ধরা দেওয়ালে পিঠ ঠেকিয়েই তাই ক্লাস করছে পড়ুয়ারা।

ক্লাসের শেষ প্রান্তে দেওয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় বলে ছাত্রদের অনেকে স্কুল মুখো হওয়ার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। ক্লাসে বসার সুযোগ না পেয়ে সটান ধরছে বাড়ির পথ। নবিপুর সরলাবালা হাইস্কুলে প্রতি দিন যেন তাদের সংখ্যাই বেড়ে চলেছে বলে জানাচ্ছেন শিক্ষকেরা।

Advertisement

ক্লাস ঘরের সামনে ঝুলছে সতর্ক বার্তা। ‘ছাত্র ছাত্রীরা প্রবেশ করবে না, যে কোনো সময়ে বিপদ ঘটতে পারে’। এমন ছমছমে সতর্কবার্তার পরে ওই ঘরগুলোর দিকে বিশেষ পা বাড়ায় না ছেলেমেয়েরা। অতি উৎসাহী দু’এক জন সে দিকে এগোলে রে রে করে তেড়ে আসে দারোয়ান। সরলাবেলা স্কুলে এটাই দস্তুর এখন।

ওই সতর্কবার্তা অবশ্য না লিখলেও চলত। ঘরগুলোর অবস্থা চোখে দেখলেই মালুম হয়, যে কোনও সময়েই তার ভগ্নদশা নেমে আসতে পারে মাটিতে। নড়বড়ে ছাদ, জোরে হাওয়া দিলে উড়ে আসে নোনা ধরা পলেস্তরা। ঝুরঝুর করে অনর্গল পড়ে ঝুরো বালি। নবীপুর সরলাবালা হাই স্কুলের অভিবাবকেরা তাই ছেলে মেয়েকে স্কুলে পাঠানোর আগে বার বার সতর্ক করেন, ‘ও দিকে যেও না বাপু, কথা শুনো!’ রানিনগরের পুরনো স্কুলগুলির একটি এই সরলাবালা স্কুলের এই বাহ্যিক চেহারাটুকু বাদ দিলে বোর্ডের ফল কিংবা নিয়বিধি খেলাধুলা কিংবা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান— নামধাম বেশ। ছাত্রসংখ্যা সংখ্যাও যথেষ্ট, প্রায় ২৩০০। এমন একটি স্কুলের এই ভগ্নদশার দিকে শিক্ষা দফতরের নজর অবশ্য নেই?

স্কুলের প্রধান শিক্ষক নরেশচন্দ্র পাত্রের গলায় হতাশা, ‘‘স্কুল শিক্ষা দফতর থেকে প্রশাসন— কার কাছে না ছুটেছি, কিন্তু ভরসা দিলেও তা ফলপ্রসূ হল না আজও। ছেলেমেয়েগুলোর জন্য চিন্তা নিয়েই স্কুলে ঢুকি। ফিরেও যাই সেই ভাঙা মন নিয়েই।’’ এ ব্যাপারে ছবি-সহ চিঠি দেওয়া হয়েছে শিক্ষামন্ত্রীর কাছেও। সাড়া মেলেনি।

স্কুলের ছাত্র অনিক রায় বলছে, ‘‘ওই ঘরগুলোর পাশ দিয়ে যেতে সত্যি ভয় করে। যদি কিছু ঘটে য়ায়।’’ স্কুলের আর এক ছাত্র বলছে, ‘‘স্যারদের তো কাজই দাঁড়িয়ে গেছে, আমাদের সাবধান করা। ক্লাসের সংখ্যা কম হওয়ায় দাঁড়িয়ে ক্লাস করাও এক বিড়ম্বনা।’’ স্থানীয় অভিভাবক শামিম সরকার বলছেন, ‘‘কি বলি বলুন তো, মেয়েটাকে স্কুলে পাঠিয়ে চিন্তায় থাকি, ভেঙে পড়ল না তো ছাদ! ’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন