সপ্তাহে ছ’দিন ‘চেম্বার’, এক দিন ছুটি

বিজয় করিমপুর বাজারের ফুটপাথে দীর্ঘ দিন থেকেই জুতো সেলাই করেন। খেলার বুট ও ফুটবল সেলাই করার সুবাদে তামাম এলাকা তাঁকে এক নামে চেনে।

Advertisement

সুজাউদ্দিন ও কল্লোল প্রামাণিক

শেষ আপডেট: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০১:২৯
Share:

ফুটপাথে নিজের দোকানে বিজয় দাস। নিজস্ব চিত্র

সোমবার— মুরুটিয়া বাজার।

Advertisement

মঙ্গলবার— করিমপুর।

বুধবার— গোয়াস।

Advertisement

বৃহস্পতিবার— বন্ধ থাকবে।

এ-ফোর সাইজের কাগজে কালো কালিতে লেখা সাপ্তাহিক ফিরিস্তি। যা দেখে থমকে দাঁড়াচ্ছেন পথ চলতি অনেকেই। জানতে চাইছেন, ‘‘কী হে, তুমিও ডাক্তারদের মতো চেম্বার করতে শুরু করলে নাকি?’’ মুচকি হাসছেন বছর বাষট্টির বিজয় দাস, ‘‘ডাক্তারই বলতে পারো। আমি তো জুতো ও ফুটবলেরই অপারেশন করি।’’ কিন্তু সত্যিই ব্যাপারটা কী?

বিজয় করিমপুর বাজারের ফুটপাথে দীর্ঘ দিন থেকেই জুতো সেলাই করেন। খেলার বুট ও ফুটবল সেলাই করার সুবাদে তামাম এলাকা তাঁকে এক নামে চেনে। আঞ্চলিক ক্রীড়া সংস্থার ফুটবল লিগের সৌজন্যে করিমপুর-সহ আশপাশের বেশ কিছু এলাকা তো বটেই, মুর্শিদাবাদের ডোমকল এলাকার বহু খেলোয়াড়ও তাঁর কাছে বুট মেরামত করতে দেন।

গত বছর থেকেই বিজয়ের কাছে অনেকেই অনুরোধ জানাচ্ছিলেন, সপ্তাহে একটা করে দিন অন্তত তাঁদের এলাকায় গিয়ে বসতে। এ বারে তেমনই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বিজয়। আর কবে কোন এলাকায় তিনি বসবেন তার একটা তালিকাও তিনি টাঙিয়ে রেখেছেন করিমপুরের ফুটপাথে তাঁর অস্থায়ী দোকানের দেওয়ালে।

বিজয়ের মতো এমন তালিকা না টাঙালেও ডোমকলের পুরনো বিডিও মোড়ের শম্ভু দাসকে চেনেন না, এমন কোনও খেলোয়াড় নেই। গত কয়েক বছরে ডোমকল কিংবা করিমপুরের ফুটবলে যেন মরা গাঙে বান এসেছে। ক্রীড়া সংস্থাগুলোর তৎপরতা, ফুটবলের নাইট ও বছরভর নকআউট টুর্নামেন্টের সৌজন্যে খেলা ও খেলোয়াড়ের সংখ্যা দুই-ই বেড়েছে। একই ভাবে বেড়েছে বিজয় কিংবা শম্ভুদের কাজও।

তবে ফুটবলে জোয়ার এলেও এখন ফুটবল কিংবা বুটে বদলও হয়েছে। আগের চামড়ার দখল নিয়েছে সিন্থেটিক। কিন্তু সে সবও তো মাঝেমধ্যে বিগড়ে যায়। ডোমকলের সাইন আনসারি বলছেন, ‘‘শহরের ব্যাপার আলাদা। তাদের বুট কিংবা ফুটবল নষ্ট হলে ফেলে দিয়ে নতুন কেনে। কিন্তু আমাদের পক্ষে তো সেটা সম্ভব নয়। ফলে সেক্ষেত্রে গোটা কুড়ি-চল্লিশ টাকা দিয়ে তাপ্পি মারা কিংবা পেস্টিং করে কাজ চালাতে হয়। আর সেক্ষেত্রে বড় ভরসা শম্ভুদা ও বিজয়দারা।’’

বছর ষাটের শম্ভু দাস গত ৪০ বছর ধরে কখনও রাস্তায়, কখনও বিশ্রামাগারে বসে জুতোর পাশাপাশি সেলাই করেছেন বুট ও ফুটবল। তাঁর দক্ষ হাতে গুণে একটা সময় মধুরকুল, গড়াইমারি, টিকটিকিপাড়া থেকেও খেলোয়াড়েরা এসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধর্ণা দিয়েছেন। শম্ভু বলছেন, ‘‘চামড়ার জায়গা এখন সিন্থেটিক দখল করেছে। কিন্তু এলাকায় ফুটবলের রমরমা থাকায় টুকিটাকি কাজ নিয়মিত করতে হয়। সেটাই বা কম কী?’’

একই কথা বলছেন বিজয়ও। তাঁর কথায়, ‘‘চামড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভিড় কমেছে দোকানেও। ফলে ছেলেপুলেদের অনুরোধ ফেলতে পারলাম না। সেখানে গেলেও তো বাড়তি দু’টো কাজ পাব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
আরও পড়ুন