চৈত্রের রোদ এড়াতে ভরসা ডাব-বডি স্প্রে

শেষ বিশ বছরে, গরম-বিনে ভোট দেখেনি দেশ। তা হলে এত তক্কাতক্কি কেন? রংচটা লালচে গামছায় গলাপিঠ সাপটে মুছে কংগ্রেস কর্মী বলছেন, ‘‘দু-পাঁচ বছর আগে, মে মাসের বোটেও এমন ঝলসে যেত না দাদা, খেয়াল আছে?’’ এ বার বোশেখের ভোটেই ঝলসে-হেজে-ঘামে ভিজে একেবারে থসথসে হয়ে গিয়েছেন, প্রার্তী-কর্মী সকলেই।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১২ এপ্রিল ২০১৬ ০২:২৫
Share:

শেষ বিশ বছরে, গরম-বিনে ভোট দেখেনি দেশ। তা হলে এত তক্কাতক্কি কেন?

Advertisement

রংচটা লালচে গামছায় গলাপিঠ সাপটে মুছে কংগ্রেস কর্মী বলছেন, ‘‘দু-পাঁচ বছর আগে, মে মাসের বোটেও এমন ঝলসে যেত না দাদা, খেয়াল আছে?’’ এ বার বোশেখের ভোটেই ঝলসে-হেজে-ঘামে ভিজে একেবারে থসথসে হয়ে গিয়েছেন, প্রার্তী-কর্মী সকলেই। আর তাই, যে সন্ধেগুলো দলীয় কার্যালয়ে স্ট্র্যাটেজি ঠি করার জন্য তুলে রাখতেন দলীয় কর্মীরা, এখন সেগুলোই গলা ফাটিয়ে প্রার্থীর সঙ্গে প্রচারে কেটে যাচ্ছে তাঁদের। দিনের মধ্য-চল্লিশ চাঁদি ফাটা রোদ্দুরে প্রচার এ বার উঠেই গিয়েছে প্রায়। তৃণমূলের এক ক্রিকেটপ্রেমী প্রার্থী তো বলেই ফেলছেন, ‘‘আফসোস হচ্ছে দাদা, নো আড্ডা, নো আইপিএল, সন্ধে মানেই প্রচার।’’

বহরমপুরের জোট প্রার্থী কংগ্রেসের মনোজ চক্রবর্তী যেমন বলেন, ‘‘বিচ্ছিরি গরম পড়েছে। প্রচারে এখন সন্ধেই ভরসা। চেষ্টা করছি সকালের দিকে কর্মীদের নিয়ে এলাকায় ঘুরতে। পরে বিকেল-সন্ধেটা কাজে লাগাচ্ছি। নাহলে, ভোটের আগে কর্মীরা অসুস্থ হয়ে পড়বেন যে!’’

Advertisement

তা, সেই ‘সাঁঝ-হারা’ ভোটে এ বার ঢালাও বিকোচ্ছে একটা জিনিস বডি স্প্রে! নদিয়ার এক তৃণমূল প্রার্থী তো রাখঢাক না রেখেই বলছেন, ‘‘ওটা সঙ্গী-সাথীদের সঙ্গেই রাখছি। ঘামে সপসপে জামায় তেকেই স্প্রে করে নিচ্ছে।’’ আর মুর্শিদাবাদে কংগ্রেসের এক শৌখিন নেতা বলেছেন, ‘‘ওটা মাস্ট। না হলে লোকের সামনে হাত জোড় করে দাঁড়াবো আর দুর্ঘন্ধ ছড়াবে, তা হয় নাকি!’’

বিকোচ্ছে আরও একটা জিনিস, মিনারেট জলের বোতল। প্রচারের পথে, আশপাশের দোকান থেকে তো বটেই অনেক সময়ে রীতিমতো বরাত দিয়ে নিয়ে আসা হচ্ছে পেটি বোঝাই মিনারেল ওয়াটার। কৃষ্ণনগরের এক তৃণমূল নেতা বলছেন, ‘‘এতে লজ্জার কী আছে, জল খেলেও দুর্নীতি?’’ প্রান্তিক শহর করিমপুরেও এখন মিনারেল ওয়াটারের বড় চাহিদা। সাসক দলের এক নেতা জানাচ্ছেন, প্রচারে শুধু জল নয়, লাগছে, গ্লুকন-ডি কিংবা হেলথ্ ড্রিঙ্কও। বহরমপুররের ঠাণ্ডা পানীয়ের এক ডিলার জানিয়েছেন, গত এক মাসেখোলা বাজারে য়ে পরিমাণ নরম পানীয়ের বিক্রি, তার ঢের বেশি বিক্রি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের বৈঠক, প্রচারসভা, পথে প্রচারে। যেমন? নমুনা দিচ্ছেন তিনি, ‘‘গত এক সপ্তাহে কংগ্রেসের মিছিল আর বৈঠক মিলিয়ে মাল গিয়েছে ১৩টা বড় পেটি (বড় পেটি ২৪টা বোতল)। আর তৃণমূলের এক একটা জনসভার জন্যই য়াচ্ছে ১৫ থেকে ১৫ পেটি ঠাণ্ডা পানীয়, ভাবতে পারেন!!’’

তবে, এত কিছু করেও রোদে ঘুরে বেশ কয়েক জন প্রার্থী অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। রোদ-গরমের মধ্যে ঠাণ্ডা জলে গলা ভিজিয়ে গলা বসেও গিয়েছে বেশ কয়েক জনের। মুর্শিদাবাদ কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী অসীম ভট্ট রোদ মাথায় প্রচার করে বেশ অসুস্থ। বলছেন, ‘‘ভাবা যায় না! রোদে-গরমে হেঁটে একের পর এক গ্রাম ঘুরে প্রচার করে দফারফা অবস্থা। এখন তাই সন্ধে ছাড়া বেরোচ্ছি না।’’

গরম থেকে রেহাই পেতে মুর্শিদাবাদ কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী গৌরীশঙ্কর ঘোষ আবার সঙ্গে রাখছেন রাতে ভিজিয়ে রাখা ছোলা। জল তেষ্টা পেলেই গলা ভেজানোর আগে খেয়ে নিচ্ছেন ভেজানো ছোলা। তিনি বলেন, ‘‘এতে শরীর ঠাণ্ডী থাকে।’’ নবদ্বীপের জোট প্রার্থী সিপিএমের সুমিত বিশ্বাস দুপুরের দিকে কোনও প্রচার রাখছেন না। তিনি জানান, তাঁর রোদে ঘুরতে অসুবিধে নেই। তবে, যাদের কাছে ভোট চাইতে যাওয়া, তাঁরাই রোদে-গরমে ঘর ছেড়ে বের হতে পারছেন না।

তবে আচমকা দাবদাহ শুরু হওয়ায় প্রার্থী ও কর্মীরা বিপাকে পড়লেও খুশি ডাবওয়ালারা। গরমের চোটে কাহিল হয়ে পড়ার হাত থেকে রেহাই পেতে দেদার বিক্রি হচ্ছে ডাব। দাম, সাইজ ভেদে ২০, ৩০ কোথাও বা ঝোপ বুঝে ৩০ টাকার কোপ পড়ছে। নদিয়ার এক প্রার্থী ভিতু ভিতু গলায় জানাচ্ছেন, ডাবের দিকে হাত বাড়িয়েও চোখের কোণ দিয়ে দেখে নিচ্ছেন, কমিশন দেখছে না তো! বলছেন, ‘‘কী বলব বলুন তো, ডাব খাচ্ছি কিন্তু গিলছি না!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন