পুজো সামলান জাহানারা, মাতমে নিরঞ্জনেরা

দুগ্গা প্রতিমাকে লালপেড়ে সস্তার শাড়ি, একজোড়া শাঁখা ও লোহার বালা হতদরিদ্র এক মুসলিম মহিলা পরিয়ে না দিলে বোধনই শুরু হত না।

Advertisement

অনল আবেদিন

বহরমপুর শেষ আপডেট: ১৮ অক্টোবর ২০১৬ ০১:০৯
Share:

দুর্গামণ্ডপের সামনে দিয়ে চলেছে মহরমের তাজিয়া। —ফাইল চিত্র

দুগ্গা প্রতিমাকে লালপেড়ে সস্তার শাড়ি, একজোড়া শাঁখা ও লোহার বালা হতদরিদ্র এক মুসলিম মহিলা পরিয়ে না দিলে বোধনই শুরু হত না। আগে সেই মুসলিম মহিলা দিতেন কচুর শাক আর কোদা ঘাসের বীজ সেদ্ধ করা ভোগ। তারপরে ভোগ দিতেন ব্রাহ্মণ।

Advertisement

জনশ্রুতি, শতবর্ষ আগে জঙ্গিপুরের জোতকমলের বাঁড়ুজ্জে জমিদার বাড়ির পুজোর জন্য স্বপ্নে নাকি এমনই বিধান দিয়েছিলেন দু্র্গা নিজেই। মৃত্যুর আগে পর্যন্ত সেই বিধান পালন করতেন লোকমান শেখের স্ত্রী ফুলবতী বেওয়া।

ওই জমিদার পরিবারের বর্তমান বংশধর মিলন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বর্তমানে কোদাঘাসের বীজ আর কচুর শাক দেন চর নাড়ুখাকির ইসমাইল শেখ। শাড়ি, শাঁখা, সিঁদুর, লোহার খাড়ু দেন জয়রামপুরের মহম্মদ শেখ।’’

Advertisement

মুসলিম পরিবারের কোদাঘাসের ভোগ ছাড়া পুজো না হওয়ায় দেবীর নামটাই হয়ে গিয়েছে ‘কোদাখাকি দুগ্গা’। ফুলবতী বেওয়ার মৃত্যুর পরে সেই প্রথা পালন করেছেন তাঁর নাতনি কোদবানু বিবি। মিলনবাবু বলেন, ‘‘হিন্দু-মুসলমান দুই সম্প্রদায়ের লোকজন নদীতে প্রতিমা বিসর্জন দেন।’’

লালবাগের ‘সাহানগর ওমরাহগঞ্জ মহিলা দুর্গোৎসব কমিটি’র সহ-সভাপতি জাহানারা বেগম ও সহ-সম্পাদক ইদি বেগম। কেবল পদ অলঙ্কৃতই নয়, তাঁরা সারা বছর পুজো কমিটির মাসিক চাঁদা দেন। পুজোর সময় ভোগ রান্না, প্রসাদের ফল কাটা, নবমীতে পুজো মণ্ডপ প্রাঙ্গণে সপরিবার পাত পেড়ে খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থাও করেন তাঁরা। ‘মুর্শিদাবাদ সি়টি ব্যবসায়ী সমিতি’র সম্পাদক স্বপন ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘২৫ বছরের পুজো। কোনও কোনও বার রোজার মাসে দুর্গোৎসব হয়। বরাবরের মতো তখনও রোজার উপবাসের পাশাপাশি পুজোর কাজে হাত লাগানা ইদি বেগম ও জাহানারা বেগমেরা।’’

সম্প্রতির বাঁধনে পিছিয়ে নেই বছর পঁচিশের যুবক, লালবাগের নবীন ঘোষ। মুর্শিদাবাদ এস্টেটের ‘রিলিজিয়াস সুপার’ নবাব জামিল মির্জা বলেন, ‘‘আরব মুলুকে ফেরাত নদীর পাড়ে কারবালা প্রান্তরে মহম্মদের নাতি ইমাম হুসেইন ইসলামের পতাকা (আলাম) তুলে দিয়েছিলেন তাঁর এক ভাই-এর হাতে। স্মারক হিসাবে তাই শোকযাত্রায় ‘আলাম’ বহন করা হয়।’’

এ বারের মহরমে সেই আলাম বহন করেছেন নবীন ঘোষ। স্বপন ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘কেবল আলাম বহনই নয়, প্রৌঢ় নিরঞ্জন সাহা, বিজয় ঘোষের মতো অনেকেই উপবাস করে মহরমের মাতমে যোগ দেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন