কমিউনিস্টদের আবার বয়স হয় নাকি

তেভাগা আন্দোলনের সঙ্গে পারিবারিক সূত্রে জড়িয়ে থাকা সরজুবালা দলের দুর্দিনে ঘরে বসে থাকতে পারেননি।

Advertisement

সুস্মিত হালদার

ভীমপুর শেষ আপডেট: ০৯ মে ২০১৮ ০২:২০
Share:

প্রচারে সরজুবালা বিশ্বাস। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য

গলির এ মাথা থেকে ও মাথা, ঈষৎ পা টেনে হাঁটছেন বটে, তার পরেই কারও দাওয়ায় ঝুপ করে বসে পড়ে বলছেন, “কই গো একটু জল দাও দেখি বৌমা!’’

Advertisement

তিরাশি বছরের সরজুবালা বিশ্বাস, সিপিএমের পঞ্চায়েত প্রার্থী। দলের কর্মীরা বলেন ‘আমাদের মাতঙ্গিনী ঠাকুমা’।

তেভাগা আন্দোলনের সঙ্গে পারিবারিক সূত্রে জড়িয়ে থাকা সরজুবালা দলের দুর্দিনে ঘরে বসে থাকতে পারেননি। তিরাশি তো কি হয়েছে, গলা ভিজিয়ে বলছেন, “কমিউনিস্টদের আবার বয়স কি? দলের প্রয়োজন। এটাই বড় কথা।”

Advertisement

দলের প্রস্তাব পেয়ে তাই এক মুহুর্তও ভাবেননি। বলে দিয়েছিলেন, “কর্মীদের প্রয়োজন হলে আমি সবসময় তৈরি। বয়স বাধা হবে না।”

জেলা পরিষদের প্রাক্তন সভাধিপতি তথা রানাঘাট (দক্ষিণ) কেন্দ্রের বিধায়ক রমা বিশ্বাসের মা সরযূবালা আবিভক্ত বাংলায় ১৯৪৬ সালে কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য পদ পেয়েছিলেন। স্বামী ছিলেন, ছিন্ন মুল মানুষের নেতা দু-দুবারের বিধায়ক জ্ঞানেন্দ্রনাথ বিশ্বাস। ভোটের প্রার্থী হয়ে ঠাঠা রোদ্দুরে প্রচারে বেরিয়ে বলছেন, ‘‘এত তাড়াতাড়ি ভুলে যাব সব!’’

এখন তাই, দু’বেলা হেঁটে চলেছেন মাটির রাস্তা ধরে। এ বাড়ি ও বাড়ি, হাত জোড় নয়, ‘‘কই কে আছ গো, দাঁড়িয়ে পড়লান আবার, ভোটটা দিও।’’

কাঁপাকাঁপা হাতে তিনি যখন মনোনয়নপত্রে সই করছিলেন তখন কিছুটা যেন চমকেই গিয়েছিলেন ভোটকর্মীরাও।

এই আসাননগর গ্রাম পঞ্চায়েত টানা চারবার ক্ষমতায় আছে তৃণমূল। সিপিএমের সংগঠন ক্রমশ দুর্বল হয়েছে। সরজুবালা প্রার্থী করেও ৬টি আসনে তারা এ বার প্রার্থী দিতে পারেনি। এই পঞ্চায়েত এলাকার প্রথমে তিনটির মধ্যে মাত্র একটি আসনে প্রার্থী দিতে পেরেছিল সিপিএম। শেষ পর্যন্ত এগিয়ে এলেন বিধায়ক রমা বিশ্বাস। পরে কৃষ্ণনগর-১ পঞ্চায়েত সমিতির ৯ নম্বর আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিলেন।

আর সুদুর দিল্লি থেকে ডেকে এনে বোন সোমা বিশ্বাসকে দাঁড় করালেন পাশের ৬ নম্বর আসনে। কিন্তু এক কিছুর পরও কি সিপিএমের কোন লাভ হল? কর্মীরা বলছেন, শুধু যে নিজের বুথেই প্রচার করছেন তা নয় পাশের বুথেও প্রার্থীদের হয়েও প্রচারে বেরোচ্ছেন বৃদ্ধা। এই দুর্দিনে দলের ঝান্ডা কাঁধে প্রচারে বের হচ্ছে।

দলীয় কর্মীরা বলছেন, “তৃণমূলের অত্যাচারে সকলেই তো ভয়ে কুঁকড়ে গিয়েছেল। মাসিমা ঝান্ডা হাতে বের হতেই অনেকে সাহস পেয়ে রাস্তায় নামতে শুরু করেছে।”

কিন্তু এত কিছুর পরও কি জিততে পারবেন? তিরাশি বছরের কিশোরা বলেন, “কমিউনিস্টরা ভোটে জোতার জন্য রাস্তায় নামে না। নামে লড়াই করার জন্য।” ঘিরে থাকা কর্মীরা মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকেন তার মুখের দিকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন