ক্ষমতায় এলে সকলেরই চোখ রাঙা, গলায় সক্কলেরই হুঙ্কার।
পঞ্চায়েত নির্বাচনে যে তাণ্ডবের আঙুল উঠেছিল শাসক দলের দিকে, খান কয়েক পঞ্চায়েতে জয়ী হয়েই বিজেপি’র গলায় সেই তর্জন-গর্জন টের পাচ্ছে এ বার তৃণমূল। দলের এক জেলা নেতা কবুল করছেন, ‘‘ক্ষমতা সত্যিই বড় আজব ব্যাপার!’’
বেলডাঙা ১ ব্লকের মহুলা ১ গ্রাম পঞ্চায়েত দখল করে বিজেপি তেমনই হুঙ্কার ছাড়ছে বলে অভিযোগ করেছে তৃমমূল। তাদের অভিযোগ, বিজেপি একার জোরে এই পঞ্চায়েত দখল করার পর থেকেই এলাকায় সন্ত্রাস শুরু করেছে।
গত ১৫ সেপ্টেম্বর ওই পঞ্চায়েতের তৃণমূলের সদস্য সমীর মণ্ডলকে মারধর করে বিজেপির স্থানীয় নেতৃত্ব। আহত সমীরকে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। ওই ঘটনায় পুলিশ দু’জনকে গ্রেফতারও করেছে।
অগষ্টের ২৮ তারিখ মহুলা ১ গ্রাম পঞ্চায়েতে বোর্ড গঠন হয়। সেখানে ১৮ টি আসনের মধ্যে ১৪ টি দখল করে তারা জেলায় বোর্ড গঠন করে। ঘটনার সূত্রপাত, বঙ্গীয় আবাস যোজনায় বাড়ি তেরি নিয়ে দুর্নীতি। আর তার জেরেই হাতাহাতি।
বোর্ড গঠন নিয়ে গন্ডগোলের সিংহভাগের জন্য অবশ্য দায়ী তৃণমূলের গোষ্ঠী কাজিয়া। জেলা পুলিশের কর্তারাই অকপটে স্বীকার করছেন, ‘‘বিজেপি গর্জাচ্ছে বটে তবে দলের কাজিয়ার জেরে বর্ষাচ্ছে বেশি তৃণমূলই!’’
বুধবার যেমন, এই গোষ্ঠী বিবাদের জেরে দিনভর বোমাবাজি দেখল শমসেরগঞ্জের তিনপাকুড়িয়া। মুড়ি মুড়কির মত ঘন্টা দুয়েক ধরে চলল বোমা-পতন। পুলিশ অবশ্য এ দিন বোমাবাজি থামাতে কড়া পদক্ষেপ নেওয়ায় অবস্থা আয়ত্তের বাইরে যায়নি। গ্রেফতার করা হয়েছে ১৪ জনকে। উদ্ধার হয়েছে ৩৫টি তাজা বোমা।
তৃণমূলের জেলা সভাপতি সুব্রত সাহা বলেন, “১৮ জন সদস্যের সকলেই তৃণমূলের। তা সত্বেও বোর্ড গঠনে ভোটাভুটি যখন হয়েছে তখন দলের মধ্যে দুটি গোষ্ঠী যে রয়েছে তা অস্বীকার করি কি করে!’’
তিন পাকুড়িয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের আঠের জন সদস্যের সকলেই শাসক দল তৃণমূলের সদস্য। জয়ী হয়েছেন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়। শমসেরগঞ্জে তৃনমূল মূলত দুটি গোষ্ঠীতে বিভক্ত। এক গোষ্ঠী বিধায়ক আমিরুল ইসলামের অনুগত। অন্যরা তৃণমূলের জেলা পরিষদ সদস্য আনারুল হকের দিকে। মনোনয়ন পত্র দাখিলের সময় থেকেই বহুবার দুই গোষ্ঠীর সংঘর্ষে উত্তপ্ত হয়েছে ধুলিয়ান। এ দিন তারই বহিঃপ্রকাশ ঘটল। বিধায়ক আমিরুল বলছেন, “তিন পাকুড়িয়ায় ১১-৭ ভোটে জয়ের পর প্রধান ও উপ প্রধান নির্বাচন শেষ হতেই আমার অনুগত সমর্থকেরা সকলেই এলাকা ছেড়ে চলে আসে। জানি না কে গম্ঢদোল করেছে।’’ আনারুল পাল্টা বলছেন, “আমি কাঞ্চনতলা গ্রাম পঞ্চায়েতে বোর্ড গঠনে দলীয় কর্মীদের নিয়ে এ দিন ব্যস্ত ছিলাম। তাই তিন পাকুড়িয়ায় কি ঘটেছে আমার জানা নেই।’’
এ দিকে, গোষ্ঠী বিবাদের ছায়া পড়েছে লালগোলাতেও। লালগোলা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি নির্বাচনের নির্দিষ্ট দিনের আগে লালগোলা ব্লক তৃণমূলের যুযুধান দু’পক্ষই নিজেদের পক্ষের সদস্যদের লালগোলার বাইরে নিয়ে গিয়ে দু’টি গোপন আস্তানায় রেখে দিয়েছে বলে দলের অন্দরের খবর। দু’ পক্ষই সে কথা স্বীকারও করেছে।
লালগোলা ব্লক সভাপতি শুভরঞ্জন রায়ের দাবি, ‘‘সদস্যরা স্বেচ্ছায় গোপন ডেরায় আছেন’’ লালগোলা ব্লক কমিটির অন্যতম সম্পাদক জাহাঙ্গির মিঞার কট্টর অনুগামী সারজেমান শেখ বলেন, ‘‘শুভরঞ্জন রায়ের দেখানো পথ ধরে মঙ্গলবার গভীর রাত থেকে আমাদের সঙ্গে গোপন ডেরায় রয়েছেন সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্য।’’
(তথ্য: সেবাব্রত মুখোপাধ্যায়, বিমান হাজরা, অনল আবেদিন)