নিয়ম বন্দি নিদানেই

তেল বিনা হেলমেটে

কৃষ্ণনগরে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কে পেট্রোল পাম্পের ধারের এটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। নদিয়া ও মুর্শিদাবাদে বিভিন্ন পেট্রোল পাম্পে এ ছবি চোখ-সওয়া হয়ে গিয়েছে। তার ফলে বাইকে দুর্ঘটনায় প্রাণহানি রোখা যাচ্ছে না। প্রশ্নের মুখে পড়ছে পুলিশি নজরদারি। পাম্প মালিকরা বলছেন, ‘‘এমন হচ্ছে নাকি? দেখতে হবে তো!’’

Advertisement

সামসুদ্দিন বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ২০ অগস্ট ২০১৭ ০৩:১৬
Share:

দুই জেলার এমন ছবি চোখে পড়ে আকছারই। নিজস্ব চিত্র

তেল ভরা শেষ। কিন্তু মোটরবাইকে বসা ছোকরার খোশগল্প শেষ হয় না। মাঝবয়সী পাম্পের কর্মীর সঙ্গে গল্পের মাঝেই হাতে খৈনি ডলে চলেছে সে।

Advertisement

মাথায় টেরিকাটা চুল। হেলমেটের বালাই নেই। খানিক বাদে পাম্পের কর্মীর হাতে এক চিমটে খৈনি গুঁজে দিয়ে বাইক হাঁকিয়ে চলে যায় সে। পাম্পের মাথায় জ্বলজ্বল করতে থাকে ফ্লেক্স— ‘নো হেলমেট, নো পেট্রোল।’

কৃষ্ণনগরে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কে পেট্রোল পাম্পের ধারের এটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। নদিয়া ও মুর্শিদাবাদে বিভিন্ন পেট্রোল পাম্পে এ ছবি চোখ-সওয়া হয়ে গিয়েছে। তার ফলে বাইকে দুর্ঘটনায় প্রাণহানি রোখা যাচ্ছে না। প্রশ্নের মুখে পড়ছে পুলিশি নজরদারি। পাম্প মালিকরা বলছেন, ‘‘এমন হচ্ছে নাকি? দেখতে হবে তো!’’

Advertisement

বিনা হেলমেটে পেট্রোল না দেওয়ার নিদান খোদ মুখ্যমন্ত্রীর। বছর দেড়েক আগে পুলিশের সঙ্গে বৈঠকে তিনি এই নির্দেশ দিয়েছিলেন। রাজ্য জুড়ে পুলিশ নেমে পড়ে ময়দানে। সে সময়ে পরিস্থিতি এমনই দাঁড়ায় যে পাম্পের আশপাশে অনেকে হেলমেট ভাড়া খাটানোর কারবার খুলে ফেলে। হেলমেট বিক্রি যে কিছুটা বেড়ে গিয়েছিল, ব্যবসায়ীরাই সে কথা জানিয়েছিলেন। কিন্তু মাস পার হতে না হতেই ফের বদলাতে থাকে ছবিটা। পুলিশই বলছে, আগের থেকে অনেক বেশি সওয়ারি হেলমেট পরছেন ঠিক, কিন্তু হেলমেট পরছেন না এমন বাইক আরোহীর সংখ্যাও প্রচুর। সেই তালিকায় রয়েছেন পুলিশকর্মীরাও।

বহরমপুর ডোমকল, লালবাগ, কান্দি, কৃষ্ণনগর, কল্যাণী, করিমপুর — সর্বত্র একই চিত্র। বহরমপুর থানার এক সাব-ইনসপেক্টর হেলমেট ছাড়াই বাইকে ঘুরছিলেন বহরমপুর শহরে। বিষয়টি পুলিশ সুপারের নজরে পড়ে। তাঁর নির্দেশে ওই পুলিশ অফিসারের ২০০ টাকা জরিমানা করা হয়। তা ছাড়াও তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার মুকেশ কুমার বলেন, “পুলিশ হেলমেট ছাড়া বাইক চালালে তাদের জরিমানা করার পাশাপাশি বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এ নিয়ম আমরা প্রথম থেকেই চালু করেছি।’’

দুই জেলাতেই গত তিন মাসে একাধিক মোটরবাইক দুর্ঘটনা ঘটেছে। প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে ছ’টি। তাও হুঁশ ফিরছে কই? দুর্ঘটনার সংখ্যায় মুর্শিদাবাদের থেকে এগিয়ে নদিয়া। অথচ পুলিশের তরফ থেকে প্রচারের খামতি ছিল না। কয়েক মাসে বিনা হেলমেটের যাত্রীদের হাতে গোলাপ ধরানো থেকে শুরু করে বাড়ি-বাড়ি প্রচার, অনেক চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু, বহু আরোহীকে হেলমেট পরানো যায়নি।

কল্যাণীর বুদ্ধ পার্ক এলাকার সমর বিশ্বাসের প্রশ্ন, ‘‘পুলিশ কেন পেট্রোল পাম্পগুলিতে নজরদারি চালাচ্ছে না? বিনা হেলমেটে পেট্রোল দেওয়ার জন্য পাম্প মালিকদের বিরুদ্ধেই বা ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না কেন?’’

নদিয়া জেলা পেট্রোলিয়াম ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশন সভাপতি রবীন্দ্রনাথ মল্লিক বলেন, “এমন হওয়ার কথা নয়। আমরা খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেব।” আবার মুর্শিদাবাদ ডিস্ট্রিক্ট পেট্রোলিয়াম ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বিমলরঞ্জন চৌধুরী বলেন, “হেলমেট ছাড়া বাইকে পেট্রোল না দেওয়ার মাসুল হিসেবে এ বছরেই জেলা জুড়ে ছ’টি পাম্পের কর্মীরা আক্রান্ত হয়েছেন। বাধ্য হয়ে হেলমেট না থাকা সত্ত্বেও পেট্রোল দিতে হচ্ছে। আমাদের নিরাপত্তা কে দেবে?”

দু’জেলার পুলিশ সুপারই আশ্বাস দিয়েছেন, ‘‘ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

কথায় কি মাথা বাঁচবে?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন