Aadhar Card Deactivation

আধার কার্ড বাতিল ঘিরে ছড়াচ্ছে আতঙ্ক

শুধু সীমান্ত এলাকা নয়, জেলার ভিতরে বিভিন্ন ব্লকে আধার কার্ড বাতিলের চিঠি আসতে শুরু করেছে।

Advertisement

সুস্মিত হালদার

শেষ আপডেট: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৯:১৬
Share:

—প্রতীকী চিত্র।

সেই কবে বাংলাদেশে ভিটেমাটি ছেড়ে নিঃস্ব হয়ে এপারে চলে এসেছিলেন। সবেমাত্র কৈশোরে পা দিয়েছেন। তারপর থেকে ভারতের মাটিতেই তাঁর সবকিছু। বিয়ে থেকে সংসার, সন্তানসন্ততি। ওপারে পিতৃপুরুষের ভিটের কথা আর মনে পড়ে না বাবলাবনের বাসিন্দা বছর আশির বীণারানি মণ্ডলের। দিন দশেক হল এই বয়সে আবার নতুন করে দেশ হারা হওয়ার আতঙ্কে ঘুম উড়েছে বৃদ্ধার।

Advertisement

সেভাবে হাঁটাচলার ক্ষমতা নেই। চোখেও তেমন দেখতে পান না। কানে শোনার শক্তিও ক্ষীণ। গিয়েছে। বীণারানি শুধু জেনেছেন তাঁর আধার কার্ড বাতিল হয়ে গিয়েছে। সেই থেকে তিনি কার্যত আতঙ্কে।

ঘুরতে ফিরতে তাঁর একটাই প্রশ্ন, “এই বয়সে সন্তান, নাতি-নাতনিদের ছেড়ে কি আবার ফিরে যেতে হবে?” বলেন, “এখান থেকে তাড়িয়ে দিলে কোথায় যাব? ওপারে তো আর কিছুই নেই। আর এদের ছেড়ে যাবই বা কোথায়?” শুধু বীণারানিই নন, আতঙ্ক ভুগতে শুরু করেছেন জেলায় আধার বাতিলের চিঠি পাওয়া কয়েকশো বাসিন্দা। যাঁদের বেশিরভাগই বিভিন্ন সময়ে ওপার বাংলা থেকে আসা। কেউ এসেছেন সাত বছর আগে তো কেউ ৩০-৩৫ বছর আগে। এঁদের বেশিরভাগই সীমান্ত এলাকার বাসিন্দা মতুয়া ও নমঃশূদ্র সম্প্রদায়ের। অনেক তপশিলি জাতি এবং ওবিসি সম্প্রদায়ের মানুষও আছেন। শান্তিপুর ব্লকের নবলা, আড়বান্দী-১, আড়বান্দী -২, ফুলিয়া টাউনশিপ পঞ্চায়েতের অনেকে এরকম নোটিস পেয়েছেন। বীরনগর শহরে অনেকের কাছেই এসেছে এই ধরনের নোটিস। সব চাইতে বড় কথা, যাঁদের আধার কার্ড বাতিল হয়েছে তাঁদের পরিবারের বাকি সদস্যদের আধার কার্ড অবশ্য ঠিক আছে। ফলে অনেকের মনেই পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার ভয় দানা বাঁধতে শুরু করেছে।

Advertisement

শুধু সীমান্ত এলাকা নয়, জেলার ভিতরে বিভিন্ন ব্লকে আধার কার্ড বাতিলের চিঠি আসতে শুরু করেছে। চরমাজদিয়া-চরব্রহ্মনগর, মাজদিয়া-পানশিলা পঞ্চায়েতের একাধিক বাসিন্দা তাঁদের আধার নিষ্ক্রিয় হওয়ার চিঠি পেয়েছেন। এঁদেরই একজন সুব্রত নাথ বছর পঞ্চাশ আগে বাংলাদেশ থেকে ভারতে চলে এসেছেন। তাঁর কথায়, “এখন কী করতে হবে কিছুই বুঝতে পারছি না। কে কোনও দিশা দেখাতে পারছেন না।”

আধার কার্ড বাতিল নিয়ে সীমান্ত এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে কার্যত আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। একের পর এক ব্যক্তির নামে আধার কার্ড বাতিলের চিঠি আসতে শুরু করেছে। যাঁদের মধ্যে বেশিরভাগই হয় মতুয়া না হয় নমঃশূদ্র সম্প্রদায়ের মানুষ। যাঁরা বাংলাদেশ থেকে ভারতে এসে আশ্রয় নিয়েছেন।নিধিরপোতা এলাকার বাসিন্দা মতুয়া সম্প্রদায়ের মানুষ বছর পঞ্চাশের চয়ন মণ্ডল বলেন, “আমরা নাগরিকত্ব চাই। আমাদের নাগরিকত্ব না দিয়ে আধার কার্ড কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। এদেশ থেকে ফিরিয়ে দেওয়া হলে তো সন্তানদের নিয়ে আত্নঘাতী হওয়া ছাড়া উপায় থাকবে না।”

তথ্য সহায়তা: দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়, সম্রাট চন্দ

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন