‘এক’ নম্বরের কমলেশ ‘দুই’ নম্বরের মন পাচ্ছেন না, ক্ষোভ

প্রার্থী পচ্ছন্দ নয়। তা নিয়ে বৈঠকও বসেছিল। কিন্তু সেই বৈঠকে কোনও সমাধানসূত্র বার হল না। উল্টো দলের যুযুধান দুই পক্ষের সম্পর্কের ফাটল আরও চওড়া হল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কান্দি শেষ আপডেট: ২৫ মার্চ ২০১৬ ০৩:২২
Share:

প্রার্থী পচ্ছন্দ নয়। তা নিয়ে বৈঠকও বসেছিল। কিন্তু সেই বৈঠকে কোনও সমাধানসূত্র বার হল না। উল্টো দলের যুযুধান দুই পক্ষের সম্পর্কের ফাটল আরও চওড়া হল।

Advertisement

বৃহস্পতিবার বিকেলে ভরতপুর-১ ব্লকের পঞ্চায়েত স্তরের সদস্য ও এলাকার কংগ্রেস নেতারা প্রার্থী বদলের বিষয়ে আলোচনার জন্য বৈঠকে বসেন। কিন্তু বৈঠকের মাঝেই দলীয় নেতাদের একে অপরের বিরুদ্ধে কোন্দলে জড়িয়ে পড়েন। ফলে কোনও সিদ্ধান্ত হওয়ার আগেই ভেস্তে গেল বৈঠক।

ভরতপুর কেন্দ্রে বামেদের তরফে প্রার্থী হয়েছেন আরএসপি বিদায়ী বিধায়ক ঈদ মহম্মদ। কিন্তু গত কয়েকটি ভোটের ফলের নিরিখে ওই কেন্দ্রে বামেদের থেকে কংগ্রেস বেশি শক্তিশালী। এই যুক্তিতে ক‌ংগ্রেস ঈদ মহম্মদের বিরুদ্ধে প্রার্থী ঘোষণা করেছে। প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি অধীর চৌধুরী গত মঙ্গলবার ওই কেন্দ্রে জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ কমলেশ চট্টোপাধ্যায়কে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেছেন।

Advertisement

তারপর থেকেই শুরু হয়েছে কং‌গ্রেসের অর্ন্তদ্বন্দ্ব। ভরতপুর-১ ও ২ ব্লক মিলিয়ে ভরতপুর বিধানসভা কেন্দ্র। কমলেশবাবুকে প্রার্থী করা নিয়ে ভরতপুর-২ ব্লকের নেতাদের কোনও ক্ষোভ নেই। কিন্তু ভরতপুর- ১ ব্লকের সিংহভাগ নেতাই কমলেশবাবুকে মানতে নারাজ। তাঁদের দাবি, স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে কোনওরকম আলোচনা ছাড়াই প্রদেশ নেতৃত্ব কমলেশবাবুকে প্রার্থী করেছে। এ বিষয়ে আলোচনার জন্য এ দিন ব্লক কংগ্রেসের সভাপতি আব্দুল বারি ও কান্দি মহকুমা কংগ্রেসের সভাপতি দেবাশিস চট্টোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে বৈঠকে বসে। আলোচনা চলাকালীন আচমকা আব্দুল বারি সভা থেকে চলে আসেন। তিনি বলেন, “প্রার্থীকে নিয়ে কোনও সমস্যা নেই। অধীর চৌধুরী যাঁকে দাঁড় করিয়েছেন, আমরা সেই প্রার্থীকেই সমর্থন করব।’’ কিন্তু দেবাশিসবাবু এখনও দলীয় প্রার্থীকে মেনে নিতে নারাজ। অসমাপ্ত বৈঠক থেকে বেরিয়ে তিনি কোনও রাখঢাক না করেই বলেন, ‘‘স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে কোনওপ্রকার আলোচনা ছাড়াই কমলেশ চট্টোপাধ্যায়কে প্রার্থী করা হয়েছে। এ নিয়ে দলের অনেকের মধ্যেই অসন্তোষ রয়েছে। তা নিয়েই এ দিন বৈঠক ডাকা হয়। কিন্তু তা মাঝ পথে ভেস্তে গেছে। ফলে এ ব্যাপারে পরবর্তী কোনও পদক্ষেপ স্থির করা যায়নি।’’ সরাসরি দলের নেতাদের প্রতি ক্ষোভ উগরে দিয়ে দেবাশিসবাবু জানান, তিনি মহকুমা কংগ্রেসের সভাপতি। অথচ তাঁর সঙ্গে কোনও আলোচনা না করেই প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। ফলে পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন। যদিও জেলা কংগ্রেসের মুখপাত্র অশোক দাস বলেন, “দেবাশিস চট্টোপাধ্যায়ের ইস্তফাপত্র হাতে পাইনি।”

এ দিকে এ দিনই জেলা কংগ্রেসের কার্যালয়ে ভরতপুর-২ ব্লকের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন অধীর চৌধুরী। ওই ব্লকের পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ বিশ্বজিৎ ঘোষ বলেন, “প্রার্থী নিয়ে আমাদের কোনও ক্ষোভ নেই। আমাদের দাবি ছিল বামেদের সঙ্গে অন্যত্র জোট হলেও ভরতপুরে কংগ্রেস পৃথক ভাবে প্রার্থী দিক। অধীর চৌধুরী তা মেনে কমলেশকে প্রার্থী করেছেন। এতে আমরা খুশি।’’ প্রসঙ্গত, ভরতপুরে বিধানসভা ভোটে প্রার্থী নিয়ে ক‌ংগ্রেস নেতা-কর্মীদের মধ্যে এর আগেও ক্ষোভ দেখা দিয়েছিল। ২০১১ সালে ওই কেন্দ্রে কংগ্রেসের তরফে ডালিয়া বেগমকে প্রার্থী করা হয়। সে দফাতেও দলের একাংশ তাঁকে মেনে নিতে পারেননি। সে বারও মূলত দেবাশিসবাবুর নেতৃত্বে দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে ক্ষোভ জানান স্থানীয় নেতাদের একাংশ। পরে কান্দির বিধায়ক অপূর্ব সরকারকে মহকুমা কংগ্রেসের সভাপতির পদ থেকে সরিয়ে স্থলাভিষিক্ত করা হয় দেবাশিসবাবুকে। ফলে বিলম্ব হলেও রণে ভঙ্গ দেন তিনি। জেলা কংগ্রেসের এক নেতা বলছেন, ‘‘ভরতপুরে প্রতি বার প্রার্থী নিয়ে সমস্যা হচ্ছে। তবে দ্রুত বিক্ষোভ মিটে যাবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন