রাসের মাঠে তিনি নেই।
শান্তিপুরের মাঝ বয়সী কংগ্রেস কর্মী প্রথম শীতের মাফলারটা গলায় জড়িয়ে বেশ চিন্তিত মুখেই বলে ফেলছেন, ‘‘স্থানীয় বিধায়ক তো, এই সময়ে মাঠে থাকাটা খুব জরুরি ছিল!’’
তাঁর গলায় উদ্বেগ।
আর, তিনি?
একটু থেমে বলছেন, ‘‘রাসের সময়ে থাকাটা জরুরি ছিল জানি, তবে আমাদের কর্মীরা আছেন। তাঁরা নিশ্চয়ই মানুষকে বুঝিয়ে বলছেন, না-থাকাটা আমার হাতে নেই।’’
তিনি অরিন্দম ভট্টাচার্য, শান্তিপুরের কংগ্রেস বিধায়ক।
আদালত তাকে আগেই মাঠের বাইরে বের করে দিয়েছে। শান্তিপুরের শ্রেষ্ঠ উৎসব, যেখানে সাধারনের পাশে থাকাটা যে কোনও রাজনৈতিক দলের কাছেও বাড়তি পাওনা, রাসের সেই ময়দানেই তাঁকে পাচ্ছে না কংগ্রেস। অথচ এই রাসেই তিনি মাঠ জুড়ে খেলতে পারতেন। বিভিন্ন মন্ডপে ফিতে কাটা থেকে নানা ভাবে জনসংযোগের একটা বড় সুযোগ ছিল স্থানীয় বিধায়কের, এমনই মনে করছে জেলা কংগ্রেস। এ যাবত যে সুযোগটা কাজে লাগিয়ে এসেছেন দলেরই প্রাক্তন তথা সদ্য দলত্যাগী বিধায়ক অজয় দে।। তিনি বলছেন, ‘‘এই সময়ে বরাবর আমি মানুষের পাশে থাকি। থাকাটা খুব জরুরিও। কার কখন কী প্রয়োজন লাগে সব দেখতে হয় যে।’’
কালনাঘাটের নৌকা ডুবির পরে পোড়ানো হয়েছিল নৌকা। সেই ঘটনায় কালনা পুরসভা বিধায়ক অরিন্দমের বিরুদ্ধে পুলিশ অভিযোগ দায়ের করে। ৭ সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট অরিন্দমবাবুকে জামিন দিলেও ছ’মাস শান্তিপুর থানা এলাকায় ঢুকতে পারবে না বলে নির্দেশ জারি হয়।
তারপর থেকে অরিন্দম আর শান্তিপুরে ঢুকতে পারেন নি। কখনও রানাঘাট আবার কখনও কৃষ্ণনগরে বসে তাকে নিজের বিধানসভা এলাকার কাজ করতে হয়েছে। দেখা করতে হয়েছে কর্মীদের সঙ্গে। ফলে বিভিন্ন সার্টিফিকেটের জন্য হয়রানির শিকার হতে হয়েছে সাধারণ মানুষকে। সেটাই হাতিয়ার করতে চেয়েছে বিরোধীরা।
কিন্তু শান্তিপুরে শ্রেষ্ট উৎসব রাসেও তার অনুপস্থিতি বিরোধীদের কাছে একটা বড় সুযোগ করে দিয়েছে বলেই মনে করছেন অনেকে। আর এই সুযোগ কাজে লাগাতে তৃণমূলের অজয় দে তো বটেই সিপিএমও মরিয়া হয়ে উঠেছে।
এত কিছুর মধ্যেও মাঠের বাইরে থেকেও খেলে যাচ্ছেন বিধায়ক। শহরের বিভিন্ন প্রান্তে তার মুখের ছবির বড় বড় ফ্লেক্স টাঙানো হয়েছে। বিধায়ক কোটায় বিলি করা হচ্ছে কম্বল আর চাদর। কিন্তু তারপরও যে ফাঁক থেকে যাচ্ছে সে কথা স্বীকারও করে নিচ্ছেন দলের নেতারা।
আর অরিন্দম? বলছেন, ‘‘আসলে অনেকে ফাউল করে আমাকে মাঠের বাইরে বের করে দিয়ে ভাবছেন জিতে যাবেন। মাঠের বাইরে থেকেও কি ভাবে দলকে জিতিয়ে নিয়ে এল রোনাল্ডো দেখেছেন, আমিও ঠিক সেই ভাবেই শান্তিপুরের মানুষের মনে আছি, ঠিক জয় এনে দেব, দেখবেন।”