জমিজটে আটকে সেতু তৈরি

বছর সাতেক আগে ছাড়ি গঙ্গার বুকে কংক্রিটের সেতু তৈরির কাজ শুরু হয়েছিল। ওই সেতু দুই জেলা—নদিয়া ও বর্ধমানের মধ্যে সং‌যোগ রক্ষা করবে, এমনটাই ভেবেছিলেন এলাকার মানুষ। কিন্তু তা আর হয়ে উঠল না। নাকাশিপাড়ার আড়পাডার ওই সেতু আজও নির্মীয়মান অবস্থাতেই পড়ে রয়েছে। গোটা চারেক পেল্লাই সাইজের পিলার মাথা উঁচু করে রয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নাকাশিপাড়া শেষ আপডেট: ০৮ জুন ২০১৬ ০২:০৬
Share:

কোটি টাকা ব্যয়ে তৈরি স্তম্ভ পড়ে রয়েছে। যাতায়াত বাঁশের সেতু ধরেই। —নিজস্ব চিত্র

বছর সাতেক আগে ছাড়ি গঙ্গার বুকে কংক্রিটের সেতু তৈরির কাজ শুরু হয়েছিল। ওই সেতু দুই জেলা—নদিয়া ও বর্ধমানের মধ্যে সং‌যোগ রক্ষা করবে, এমনটাই ভেবেছিলেন এলাকার মানুষ। কিন্তু তা আর হয়ে উঠল না। নাকাশিপাড়ার আড়পাডার ওই সেতু আজও নির্মীয়মান অবস্থাতেই পড়ে রয়েছে। গোটা চারেক পেল্লাই সাইজের পিলার মাথা উঁচু করে রয়েছে। এই পর্যন্ত। সেতুর কাজ আর শেষ হল না। বছর দু’য়েক ধরে কাজ পুরোপুরি থমকে রয়েছে। জেলা প্রশাসনের বক্তব্য, সেতুর অ্যাপ্রোচ রোডের জন্য বিঘে তিরিশেক জমি দরকার। তা না মেলার জন্যই আটকে রয়েছে কাজ। ফলে লোকজনকে ঝুঁকি নিয়ে পাশের কাঠের অপ্রশস্ত নড়বড়ে সেতু দিয়েই যাতায়াত করতে হচ্ছে।

Advertisement

আড়পাড়ার একদিকে রয়েছে বর্ধমান, অন্যদিকে নদিয়া। প্রতিদিন ছাড়ি গঙ্গা পেরিয়ে নানা প্রয়োজনে এক জেলার মানুষ অন্য জেলায় আসেন। ছাড়ি গঙ্গায় এক প্রান্তে রয়েছে নাকাশিপাড়া ব্লকের মাঝেরগ্রাম পঞ্চায়েত। ওই পঞ্চায়েতের বেশ কয়েকটি গ্রামের লোককে আড়পাড়া পেরিয়ে বেথুয়াডহরি বাজার ও ব্লক অফিসে আসতে হয়। ওই এলাকার উপর দিয়ে কৃষ্ণনগর-অগ্রদ্বীপ ঘাটের বাসও চলাচল করে। দুই জেলার মানুষের যোগাযোগের মধ্যে ব্যবধান ছাড়ি গঙ্গা। তাই তার উপর কংক্রিটের সেতু বানানোর কাজ শুরু হয়। কিন্তু তা আজও সম্পূর্ণ হল না।

পূর্ত দফতর অবশ্য যোগাযোগের বিকল্প একটা ব্যবস্থা করেছে। তৈরি করে দিয়েছে দুর্বল কাঠের সেতু। ওই সেতুর শুরুতেই আবার লেখা রয়েছে: ‘‘এটি একটি দুর্বল সেতু। ভারী যান চলাচল নিষিদ্ধ।’’ কিন্তু কে শোনে কার কথা। কারণ, ওই সেতুর পার হয়েই যে মাঝেরগ্রাম পঞ্চায়েতের একাধিক গ্রামের লোকজনকে ব্লক সদরে আসতে হয়। ফলে ওই সব গ্রামের মালবাহী গাড়ি হামেশাই সেতুর উপর দিয়ে পার হয়। যাত্রীবাহী কৃষ্ণনগর-অগ্রদ্বীপ ঘাটের বাসও ওঠে ওই কাঠের সেতু।

Advertisement

অতিরিক্ত চাপে শীর্ণ কাঠের সেতু মাঝেমধ্যেই বিগড়ে যায়। দিনকয়েক আগেও সেতুর একাংশ ভেঙে গিয়েছে। মাস সাতেক আগে বন্যার সময় তো জল কাঠের সেতু ছাপিয়ে গিয়েছিল। ফলে মানুষের দুর্দশার সীমা থাকে না। আবার ওই সেতু পার না হয়ে বেথুয়াডহরিতে আসার সহজ কোনও বিকল্প রাস্তাও নেই।

এই অবস্থায় চোখের সামনে নির্মীয়মান কংক্রিটের সেতু দেখে ফুঁসছে এলাকার লোকজন। সুলতানপুরের বাসিন্দা কফিলুইদ্দিন শেখ জানালেন, কংক্রিটের সেতু তৈরি হলে মালবাহী গাড়ি চলত। বাসও চলত নিশ্চিন্তায়। কিন্তু তা আর হল না। কয়েক বছর ধরে কাজ থমকে রয়েছে। কুবিরডাঙ্গার নাসিরুদ্দিন শেখেরও একই বক্তব্য। তিনি বলেন, ‘‘ফি বছর অগ্রদ্বীপের মেলার সময় ছাড়ি গঙ্গা পেরিয়ে হাজার হাজার মানুষ বর্ধমানে যান। সেই চাপে কাঠের সেতু ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কংক্রিটের সেতু থাকলে এ সব সমস্যা হত। কিন্তু আজও শক্তপোক্ত সেতু তৈরি করল না প্রশাসন।’’

এত দিনেও কেন এত গুরুত্বপূর্ণ সেতুর কাজ শেষ হল না? জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, আড়পাড়া সেতুর অ্যাপ্রোচ রোডের জন্য প্রায় সাড়ে নয় একর জমি অধিগ্রহন করতে হবে। ওই জমি জোগাড় না করে‌ই সেতুর কাজ শুরু হয়েছিল। তাই আপাতত সেতুর কাজ থেমে রয়েছে।

নদিয়ার জেলাশাসক বিজয় ভারতী জানান, অ্যাপ্রোচ রোডের জন্য এলাকার বাসিন্দাদের কাছ থেকে সরাসরি জমি কেনা হবে। ইতিমধ্যে জমিদাতাদের সঙ্গে বেশ কয়েক দফা বৈঠক হয়েছে। জমি কেনার কাজ অনেকটাই এগিয়েছে। আশা করি শীঘ্রই জমিজট কাটবে।

সেতুটি পূর্ত দফতরের (সড়ক) তত্ত্বাবধানে তৈরি হচ্ছে। দফতরের জেলার এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার রঞ্জন কুমার বলেন, “অ্যাপ্রোচ রোডের জন্য জমি কেনার প্রক্রিয়া চলছে। আশা করি শীঘ্রই সমস্যার সমাধান হবে।’’ নাকাশিপাড়ার বিধায়ক তৃণমূলের কল্লোল খান বলেন, ‘‘বাম আমলে অ্যাপ্রোচ রোডের জমি জোগাড়ানা করেই সেতুর কাজ শুরু হয়েছিল। যার ফলে মাঝপথে কাজ থেমে রয়েছে। জেলা প্রশাসন এবং জমির মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জমিজট অনেকটাই মিটিয়েছি।’’ বামেরা অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

রাজনৈতিক তরজা চলতেই থাকে। কিন্তু ছাড়ি গঙ্গার উপর কংক্রিটের সেতু আর তৈরি হয় না। এলাকার মানুষের সমস্যাও মেটে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন