স্কুলে দলের পরিচয় কেন, উঠছে প্রশ্ন

ছাত্রদের সামনে স্কুলের প্রধান শিক্ষককে মারধরের ঘটনার চব্বিশ ঘণ্টা পরেও পুলিশ অভিযুক্তদের কাউকেই গ্রেফতার করতে পারল না। বৃহস্পতিবার সকালে মুর্শিদাবাদের বড়ঞা থানার কুলি কোলেশ ঘোষ স্মৃতি বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক নিয়ত হোসেনকে বেধড়ক মারধর ও স্কুলের জিনিসপত্র ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে তণমূলের বড়ঞা উত্তর ব্লক তৃণমূলের সভাপতি গোলাম মুর্শিদ ও তাঁর অনুগামীদের বিরুদ্ধে।

Advertisement

কৌশিক সাহা

কান্দি শেষ আপডেট: ২৫ জুলাই ২০১৫ ০১:০৬
Share:

শুক্রবার স্কুলের স্টাফ রুমে শিক্ষকেরা। —নিজস্ব চিত্র।

ছাত্রদের সামনে স্কুলের প্রধান শিক্ষককে মারধরের ঘটনার চব্বিশ ঘণ্টা পরেও পুলিশ অভিযুক্তদের কাউকেই গ্রেফতার করতে পারল না। বৃহস্পতিবার সকালে মুর্শিদাবাদের বড়ঞা থানার কুলি কোলেশ ঘোষ স্মৃতি বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক নিয়ত হোসেনকে বেধড়ক মারধর ও স্কুলের জিনিসপত্র ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে তণমূলের বড়ঞা উত্তর ব্লক তৃণমূলের সভাপতি গোলাম মুর্শিদ ও তাঁর অনুগামীদের বিরুদ্ধে। ঘটনার দিনই পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগও দায়ের করেছেন প্রধান শিক্ষক। জেলার পুলিশ সুপার সি সুধাকর বলেন, “অভিযুক্তেরা পলাতক থাকায় তাদের গ্রেফতার করা যায়নি।’’ প্রধান শিক্ষকের দাবি, অভিযুক্তেরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। পুলিশ তাদের ধরছে না। দোষীদের আড়াল করতেই এমনটা করা হচ্ছে বলে ওই শিক্ষকের অভিযোগ।

Advertisement

বৃহস্পতিবার ওই ঘটনার জেরে শিকেয় ওঠে স্কুলের পঠনপাঠন। দূরদুরান্ত থেকে স্কুলে এসে ফিরে যায় বহু ছাত্রছাত্রী। শুক্রবারেও স্কুলে উপস্থিতির হার ছিল খুবই কম। স্কুলে প্রায় ১১০০ ছাত্রছাত্রী আছে। এ দিন স্কুলে এসেছিল সাকুল্যে ১০০ জন। স্কুলের ওই গণ্ডগোলের কারণে এ দিন বেশিরভাগ পড়ুয়া স্কুলে আসেনি বলেই স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে। চার পিরিয়ডের পরে এ দিন স্কুল ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়। তবে ঘটনার দিন বহিরাগতেরা স্কুলে ঢুকে যে ভাবে প্রধান শিক্ষককে মারধর ও তাণ্ডব চালাল তাতে যেমন স্কুলের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন শিক্ষক ও অভিভাবকদের একাংশ। তেমনি ঘটনার পরে প্রধানশিক্ষকের নিজেকে তৃণমূলের লোক বলে জাহির করা নিয়েও তৈরি হয়েছে বিতর্ক।

অভিভাবক ও শিক্ষকদের একাংশ জানাচ্ছেন, ঘটনাটি ঘটেছে স্কুলের মধ্যে। প্রহৃত হয়েছেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক। অথচ ঘটনার পর থেকে প্রধান শিক্ষক যে ভাবে নিজেকে তৃণমূলের লোক বলে জাহির করলেন সেটাও বোধহয় খুব ঠিক নয়। স্কুলের পড়ুয়া তো বটেই, তাঁর সহকর্মী ও অভিভাবকদের কাছেও অন্য রকম বার্তা গেল। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অভিভাবক জানান, প্রধান শিক্ষক কোনও রাজনৈতিক দলের সমর্থক, কর্মী কিংবা নেতা হতেই পারেন। তা নিয়ে কারও কোনও আপত্তি থাকার কথা নয়। কিন্তু স্কুলটা কোনও ভাবেই রাজনীতির আখড়া কিংবা দলীয় কার্যালয় হতে পারে না। তিনি কোন নেতার নেতৃত্বে দল করেন সেটাও বড় কথা নয়। তাঁর কথায়, ‘‘প্রধান শিক্ষককে মারধরের ঘটনার আমরা যেমন নিন্দা করছি। অভিযুক্তদের গ্রেফতারের দাবি করছি। তেমনি প্রধান শিক্ষকের রাজনৈতিক পরিচয় জাহির করার বিষয়টিও আমরা ভাল ভাবে নিচ্ছি না। এমনটা চলতে থাকলে স্কুলে পড়াশোনার পরিবেশটাই তো নষ্ট হয়ে যাবে।’’

Advertisement

যদিও প্রধান শিক্ষক নিয়ত হোসেন বলেন, ‘‘বৃহস্পতিবারের ওই ঘটনার কথা বলতে গেলে আমাকে রাজনৈতিক দলের কথা উল্লেখ করতেই হবে। না হলে বিষয়টি কারও কাছেই স্পষ্ট হবে না। রাজনৈতিক কারণে পরিকল্পিত ভাবে স্কুলের বাইরের ঘটনাকে স্কুলে এনে এমন করল তৃণমূলের একটি গোষ্ঠী। সেই কারণে বাধ্য হয়েই আমি এমন মন্তব্য করেছি।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘আমি সোজা কথা সোজা ভাবে বলতে বেশি পছন্দ করি। এতে অভিভাবকেরা যদি মনে করেন যে, আমি ভুল বলেছি তাহলে আমি ক্ষমা চাইছি।”

১৯৬৮ সালে স্থাপিত হয়েছে এই স্কুলটি। বর্তমানে ওই স্কুলে ১১০০ ছাত্রছাত্রী আছে। শিক্ষক ২০ জন। তাছাড়াও বৃত্তিমূলক ও কম্পিউটার প্রশিক্ষণের জন্য চার জন শিক্ষক আছেন। স্থানীয় অভিভাবকদের দাবি, ওই স্কুলে পড়াশোনা যে খুব খারাপ হয় তা নয়। প্রতি বছর মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাশের হাল বেশ ভাল। এ বার মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছিল ১৩৪ জন। উত্তীর্ণ হয়েছে ১১৪জন। ওই স্কুলে কুলি ছাড়াও আশপাশের বেশ কয়েকটি গ্রামের ছেলেমেয়েরা আসে। তবে সম্প্রতি প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে বেশ কিছু অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় বাসিন্দা ও অভিভাবকদের একাংশের অভিযোগ, ওই স্কুলের অন্য শিক্ষকরা সময়মতো স্কুলে আসা যাওয়া করলেও প্রধান শিক্ষক কোনও দিনই স্কুলে নির্ধারিত সময়ে আসেন না। প্রধান শিক্ষকের উদ্যোগের অভাবে প্রায় এক বছর ধরে স্কুলের মিড ডে মিল বন্ধ রয়েছে। এমনকী স্কুলের খেলার মাঠটিও স্কুল কর্তৃপক্ষের অবহেলায় পড়ে রয়েছে। যদিও এমন অভিযোগ মানতে চাননি প্রধান শিক্ষক নিয়ত হোসেন। তিনি বলেন, “স্বনির্ভর গোষ্ঠীর বকেয়া নিয়ে গোলমালের জন্যই মিড ডে মিল বন্ধ। এই বিষয়ে আমার কিছু করার নেই। আর খেলার মাঠ থেকে স্কুলের পরিকাঠামো আগের থেকে অনেক ভাল হয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন