Coronavirus in West Bengal

গুজরাত থেকে ট্রেন এল, শ্রমিকদের সংক্রমণই ভাবাচ্ছে

লকডাউন শুরু হওয়ার ঠিক আগে এবং পরবর্তীতে ১ মে থেকে এখনও পর্যন্ত প্রায় ৫৮ হাজার শ্রমিক জেলায় ফিরেছেন।

Advertisement

সুস্মিত হালদার

নদিয়া শেষ আপডেট: ০২ জুন ২০২০ ০৪:১৫
Share:

—ফাইল চিত্র।

সংখ্যাটা চমকে দেওয়ার মতো! নদিয়া জেলায় এখনও পর্যন্ত ৮০ জন করোনা-আক্রান্তের সন্ধান মিলেছে। তাঁদের মধ্যে ৭২ জনই পরিযায়ী বা ভিন রাজ্য থেকে ফিরে আসা শ্রমিক!

Advertisement

লকডাউন শুরু হওয়ার ঠিক আগে এবং পরবর্তীতে ১ মে থেকে এখনও পর্যন্ত প্রায় ৫৮ হাজার শ্রমিক জেলায় ফিরেছেন। ট্রেনে, বাসে, লরিতে, গাড়িতে শ’য়ে শ’য়ে আরও শ্রমিক ফিরছেন এবং ফিরবেন। তাতেই প্রশাসন কার্যত অগ্নীপরীক্ষার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে।

প্রথমত, এই বিপুল পরিমাণ মানুষকে কোয়রান্টিন করা এবং করোনা পরীক্ষা করা। দ্বিতীয়ত, এঁদের মাধ্যমে জেলার অন্যদের মধ্যে যাতে সংক্রমণ না ছড়ায় তার জন্য যথাসম্ভব পন্থা ভাবা, তৃতীয়ত, আক্রান্তদের উপযুক্ত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা এবং চতুর্থত, পরিযায়ী শ্রমিকদের প্রতি বিভিন্ন জায়গায় যে বিরূপ বা বিদ্বেষমূলক মনোভাব দেখা যাচ্ছে তাতে রাশ টানা এবং মানুষকে সচেতন করা।

Advertisement

হরিদ্বার, কেরল থেকে আগেই তিনটি বিশেষ ট্রেন এসেছে কৃষ্ণনগরে। সোমবার গুজরাতের আমদাবাদ থেকে এসেছে আরও একটি বিশেষ ট্রেন। ২৪ বোগির এই ট্রেনটি কৃষ্ণনগরের আগে ডানকুনিতে থামে। সেখানেই বেশির ভাগ যাত্রী নেমে যান বলে জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে। প্রশাসনের দাবি, এই ট্রেন থেকে কৃষ্ণনগর স্টেশনে ৩৫৬ জন যাত্রী নেমেছে। তাঁদের মধ্যে নদিয়ার বাসিন্দা ২১০ জন। বাকি যাত্রীরা ছিলেন মুর্শিদাবাদ, মালদহ ও উত্তর দিনাজপুর জেলার বাসিন্দা।

আরও ট্রেন আসবে বিভিন্ন রাজ্য থেকে। এ ছাড়া, প্রতিদিন কৃষ্ণনগর, জাগুলি ও দেবগ্রামের চেকিং পয়েন্ট দিয়ে ১৫ থেকে ১৮ শো শ্রমিক বাসে, লরিতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে জেলায় ঢুকছেন। মহারাষ্ট্র, দিল্লি, তামিলনাডু ও গুজরাত থেকে ফিরলে তাঁদের স্কুলে কোয়রান্টিনে রাখা হচ্ছে। বাকিদের হোম কোয়রান্টিনে থাকতে বলা হচ্ছে। অভিযোগ, অনেকেই রাতের অন্ধকারে স্কুলের সেন্টার থেকে বাড়ি চলে যাচ্ছেন। ভোর হওয়ার আগে আবার ফিরে আসছেন স্কুল কোয়রান্টিনে।

যেহেতু নদিয়ায় আক্রান্তদের নিরানব্বই শতাংশ পরিযায়ী শ্রমিক এবং তাঁরা ফিরতে শুরু করার পরেই জেলায় প্রতিদিন নতুন করে ১২-১৪-১৬টি কেস মিলছে তাই অনেকের মনেই ধারণা তৈরি হয়েছে যে এই শ্রমিকদের মাধ্যমে জেলার করোনাভাইরাস ছড়াতে শুরু করেছে। ফলে জেলার বিভিন্ন প্রান্তে পরিযায়ী শ্রমিকেরা হোম কোয়রান্টিনের থাকতে গ্রামের বা এলাকার মানুষের প্রবল আপত্তির সামনে পড়ছেন। অনেক জায়গায় আবার গ্রামের ভিতরে স্কুলেও পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য কোয়রান্টিন কেন্দ্র খুলতে লোকে বাধা দিচ্ছে। কারণ তাঁরা আশঙ্কা করছেন, এতে এলাকায় করোনা ছড়াবে।

প্রশাসনের হিসাব অনুযায়ী, এখনও বিভিন্ন রাজ্যে থেকে প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ হাজার পরিযায়ী শ্রমিক ফিরবেন। এক কর্তার কথায়, “এখন তবুও আমরা তিনটি চেক পোস্ট থেকে তাঁদের চিহ্নিত করে হোম অথবা স্কুল কোয়রান্টিনে পাঠাতে পারছি। নজরদারি চালাতে পারছি। সংখ্যাটা কিছু দিনে দ্বিগুণ হলে পরিস্থিতি কী দাঁড়াবে বোঝা যাচ্ছে না।”

ইতিমধ্যে যাঁরা ফিরছেন তাঁদের অনেকেই মাঝপথে বাস থেকে নেমে রাস্তার পাশে ধাবা বা হোটেলে খাচ্ছেন, সকলের সঙ্গে একই কলে মুখ ধুচ্ছেন, শৌচাগারে যাচ্ছেন, প্রকাশ্য রাস্তায় থুথু ফেলছেন বা কুলকুচি করে জন ফেলছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এতে আতঙ্ক আরও বেড়েছে।

কৃষ্ণনগরের সারি হাসপাতালেও প্রতিদিন সন্দেহভাজন রোগীর সংখ্যা বেড়ে চলেছে। এখনও পর্যন্ত সারি হাসপাতালে ৮১ জন ভর্তি হয়েছেন। মারা গিয়েছেন ৮ জন। তবে এখনও পর্যন্ত এখানে মাত্র এক জনের করোনা ধরা পড়েছে। মারা গিয়েছেন বেশ কয়েক জন। গত রবিবারও মৃত্যু হয়েছে এক জনের। ভীমপুরের বাসিন্দা ওই বৃদ্ধ ভর্তি হয়েছিলেন শনিবার। তিনি দীর্ঘ দিন ধরে সুগার ও কিডনির সমস্যায় ভুগছিলেন। সোমবার মৃতদেহের লালারস সংগ্রহ করে করোনা পরীক্ষায় পাঠানো হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন