Coronavirus in West Bengal

আক্রান্তের পরিবারে নেই করোনা

Advertisement

সুস্মিত হালদার

কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ১৯ এপ্রিল ২০২০ ০৩:২৭
Share:

চারাপুরে ছড়ানো হচ্ছে জীবাণুনাশক। শনিবার। নিজস্ব চিত্র

করোনা নিয়ে ক্রমবর্ধমান অস্বস্তির মধ্যেই একটি ব্যাপারে আপাতত হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছে প্রশাসন। জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, চাপড়ার আক্রান্ত প্রৌঢ়ের পরিবারের সকলেরই লালা পরীক্ষার রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে। অর্থাৎ তাঁদের কারও করোনা আক্রান্ত হওয়ার প্রমাণ মেলেনি।

Advertisement

ওই পরিবারের সংস্পর্শে যে সমস্ত গ্রামবাসীরা এসেছিলেন, এমন আট জন বর্তমানে কৃষ্ণনগর কর্মতীর্থে কোয়রান্টিন সেন্টারে ভর্তি রয়েছেন। এই তালিকায় আক্রান্তের নিকটাত্মীয়, দুধ বিক্রেতা থেকে শুরু করে প্রৌঢ়ের ছেলের সঙ্গে ক্যারাম খেলা দুই যুবকও আছেন। আক্রান্তের সংস্পর্শে আসায় ইতিমধ্যেই কোয়রান্টিনে যেতে হয়েছে শক্তিনগর সদর হাসপাতালের এক কর্তা, চিকিৎসক ও নার্স-সহ ১৩ জনকেও। আক্রান্তের পরিবারের পাঁচ জনকে গ্লোকাল ‘সারি’ হাসপাতালে আইসোলেশনে ভর্তি করা হয়েছিল। গ্লোকাল ও তেহট্ট মহকুমা হাসপাতাল মিলিয়ে আরও ১৭ জনের লালারসের নমুনা পরীক্ষা করতে পাঠানো হয়েছে।

আক্রান্তের পরিবারের করোনা রিপোর্ট নেগেটিভ এলেও প্রশাসনের দুশ্চিন্তা বাড়িয়েছে ‘সারি’ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এক অশীতিপরের মৃত্যু। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, শুক্রবার দুপুরে জ্বর ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে প্রথমে তিনি শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে ভর্তি হন। পরে তাঁকে সেখান থেকে ‘সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপিরেটরি ইলনেস’ (সারি) হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎসা চলাকালীন রাতেই তাঁর মৃত্যু হয়। জেলাশাসক বিভু গোয়েল বলেন, “মৃতের লালারস সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। রিপোর্ট এলেই পুরো বিষয়টা পরিষ্কার হবে।” তাঁদের যথেষ্ট পরিমাণ পিপিই, মাস্ক বা নিরাপত্তা নেই দাবি করে এ দিন জেলা সদর হাসপাতালে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন নার্সদের একাংশ। তবে হাসপাতাল সুপারের সঙ্গে তাঁদের দেখা হয়নি।

Advertisement

চাপড়ার প্রৌঢ় যে গ্রামের বাসিন্দা, শুক্রবারই সেই চারাতলায় বাড়ি-বাড়ি গিয়ে স্বাস্থ্যপরীক্ষা করেছিল ২৪ জনের একটি দল। প্রশাসনের দাবি, এক দিনেই প্রায় দেড় হাজার জনকে পরীক্ষা করা হয়েছে। শনিবার ৩৫ জন চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী পাঁচটি দলে ভাগ হয়ে পরীক্ষার কাজ চালান। ওই গ্রামে হাজার চারেক মানুষের বাস। তাদের সকলেরই পরীক্ষা হচ্ছে বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে।

চারাতলা এবং তার আশপাশের এলাকা আপাতত পুরোপুরি ঘরবন্দি। সেখানে খাবার থেকে শুরু করে নানা জরুরি জিনিস সরাসরি বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ দিন সকাল থেকেই গ্রামে হাজির ছিলেন কৃষ্ণনগর সদর মহকুমাশাসক মনীশ বর্মা। তিনি বলেন, “আমরা অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করছি।”

তবে চারাতলাতেও চাষের কাজে যাওয়ার ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়া হয়েছে। খেতে জল দেওয়া, পরিচর্যা করা বা আনাজ তুলে আনার জন্য গ্রামবাসীরা ঘর থেকে বেরোতেই পারেন। কিন্তু তাঁরা যাতে ফসলের খেতে যাওয়ার নাম করে গ্রামের বাইরে যেতে না পারেন বা মাঠ দিয়ে গোপনে কেউ গ্রামে ঢুকতে না পারেন, সে দিকে নজরদারি চালাতে গ্রামের চারদিকে পাঁচটি ওয়াচটাওয়ার বসানো হয়েছে।

চারাতলা গ্রামে কোনও বাজার না থাকলেও তবে কুড়িটিরও বেশি ছোট-বড় মুদির দোকান আছে। সেগুলিকে ছোট-ছোট জ়োনে ভাগ করা হয়েছে। প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে বেলা ১০টা পর্যন্ত দু’ঘণ্টা ওই দোকানগুলি ভ্যানে মালপত্র চাপিয়ে নিজের জোনে ফিরি করবে। যার যা প্রয়োজন, ফোন করে দোকানিকে জানালেই তিনি তা প্যাকেটে ভরে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বাড়িতে পৌঁছে দেবে। প্রশাসনের নির্দেশ, কেউ যদি নগদে টাকা দিতে না পারেন, তা হলে তা ধারের খাতায় লিখে রাখতে হবে। পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে সেই টাকা শোধ করতে হবে। একই ভাবে বাড়িতে পৌঁছে যাবে আনাজও।

তবে এখনই চারাতলার বাড়ি-বাড়ি দুধ পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করা যায়নি। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, একটি সমবায় সমিতির সঙ্গে কথা হয়েছে। তারাই বাড়ি-বাড়ি দুধ পৌঁছে দেবে। টাকা তোলার যন্ত্র দিয়ে কোনও কর্মীকে গ্রামে পাঠানোর জন্য একটি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার সঙ্গে কথাবার্তা চলছে বলে প্রশাসন সূত্রের খবর। এখনও যাঁরা রেশন নেননি বা পাননি তাঁদের সামগ্রী বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার জন্য গ্রামের রেশন ডিলারকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। স্কুলের শিক্ষকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, মিড-ডে মিলের চাল আর ডাল প্যাকেটে ভরে দেওয়ার জন্য। আগামী ২০ এপ্রিল থেকে সে সব বাড়ি-বাড়ি পৌঁছে দেওয়া হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন