Coronavirus in West Bengal

ভাইরাসে উদাসীনতা, মাস্ক পরা নিয়ে বিরক্তি

অনেকেই মাস্ক পরা নিয়ে বিরক্ত। করোনা নিয়ে কড়াকড়ির প্রতি একটা উদাসীনতা তৈরি হতে শুরু করেছে।

Advertisement

সুস্মিত হালদার

কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ১৩ জুলাই ২০২০ ০৬:০৬
Share:

নেই মাস্ক। কৃষ্ণনগরের পাত্রবাজারে। রবিবার। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য

বাড়ি থেকে বেরিয়ে কিছুটা যাওরা পর হঠাৎই মনে হল, মাস্ক পরতে ভুলে গিয়েছেন। পুলিশে ধরবে বলে পকেট থেকে রুমালটা বের করে মুখে জড়িয়ে নিলেন কৃষ্ণনগরের এক শপিংমলের কর্মী। বললেন, “ধুর এ ভাবে সম্ভব না। সপ্তাহে প্রতিদিন দশ ঘন্টা করে নাকে মাস্ক পরে ডিউটি করতে হচ্ছে। কানের পিছনটা ব্যথা করে। একটা ছুটির দিন একটু মাস্ক-মুক্তি ঘটুক।”

Advertisement

শুধু ওই যুবকেরই নয়, এমন অবস্থা অনেকেরই। অনেকেই মাস্ক পরা নিয়ে বিরক্ত। করোনা নিয়ে কড়াকড়ির প্রতি একটা উদাসীনতা তৈরি হতে শুরু করেছে। মাস্ক ঝুলছে গলায় বা নাকের নীচে। গ্লাভসের বালাই নেই। হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার বা বার বার হাত ধোওয়াতেও অরুচি। ভাবটা এমন যে, করোনা হলে হবে। বন্ধুদের আড্ডায় হোক বা বাজার কিম্বা অফিসে তাঁরা আর নিয়ম মানতে চাইছেন না। প্রথম দিকে করোনাভাইরাসের প্রতি মানুষের যে ভয় ছিল সেটা যেন ক্রমশ কমতে শুরু করেছে। তার পরিবর্তে তৈরি হচ্ছে উদাসীনতা। জেলাশাসক বিভু গোয়েল এ বিষয়ে বলেন, ‘‘আমরা মানুষকে সচেতন করতে নানা পদক্ষেপ করছি, করোনা জয় করতে সচেতনতার প্রয়োজন খুব বেশি।’’

জেলা পুলিশের এক কর্তার কথায়, “উদাসীনতা নয়, বরং উপেক্ষা বলাই ভাল। যত দিন যাচ্ছে মানুষ যেন করোনাভাইরাসকে উপেক্ষা করতে শুরু করেছে। চারদিকে যেন একটা বেপরোয়া ভাব। এটাই ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারে আগামী দিনে।” জেলার এক ওসির কথায়, “সবাই জানেন মাস্ক না পরলে করোনায় আক্রান্ত হতে পারেন। তার পরেও অনেকে যেন করোনাকে চ্যালেঞ্জ করে মাস্ক না পরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। পারস্পরিক দূরত্ব রক্ষা করছেন না। ভাইরাসকে বহু মানুষ উপেক্ষা করতে শুরু করেছে বলেই তো আড়়াই হাজার মানুষকে শুধুমাত্র মাস্ক না পরার জন্য সম্প্রতি গ্রেফতার করতে হয়েছে।’’

Advertisement

কৃষ্ণনগর শহরের এক শপিংমলের কর্মী প্রিয়াঙ্কা চৌধুরির কথায়, “প্রথম দিকে মনে সংক্রমণের ভয় কাজ করত। তাই সচেতন থাকতাম। মাস্ক খুলতাম না। বার-বার স্যানিটাইজার হাতে লাগাতাম। কিন্ত যত দিন গিয়েছে ততই সেই ভয়টা কাটতে শুরু করেছে। সবচেয়ে বড় কথা, দিনের পর দিন এটা করা সম্ভব না। খরিদ্দার সামলে কর্মক্ষেত্রে তিন মিটার পারস্পরিক দূরত্ব রক্ষা করা কি সম্ভব?”

প্রতিদিন টোটোয় কর্মক্ষেত্রে যান ঈশিতা সাহা। তিনি বলছেন, “টোটোয় সামাজিক দূরত্ব রক্ষা করা যায়? নিজের অজান্তেই ভয়টা কেটে গিয়েছে। যা হওয়ার হবে।’’ যা শুনে জেলার পুলিশকর্তাদের কেউ কেউ বলছেন, “লাঠি হাতে তেড়ে গিয়ে সচেতনতা তৈরি করা যায় না। সেটা ভিতর থেকে আসে। সেটা যত ক্ষণ না হবে তত ক্ষণ একটিু ফাঁক পেলেই মানুষ বাঁশের ব্যরিকেড টপকে কলের জল আনতে চলে যাবে কন্টেনমেন্ট জোনে।” কৃষ্ণনগর পুলিশ জেলার সুপার জাফর আজমল কিদোয়াইয়ের কথায়, “করোনার বিরুদ্ধে লড়াইটা আসলে একটা ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। শুধু মাইক প্রচারই নয়, আমি নিজে রাস্তায় নেমে প্রচার করেছি। মাস্ক বিলি করেছি। এটা চালিয়ে যেতে হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন