প্রতীকী ছবি।
কল্যাণীর কোভিড হাসপাতালে ভর্তি করার জন্য ঘুষ চাওয়া থেকে শুরু করে মৃতদেহ শ্মশানে নিয়ে যাওয়ার জন্য মৃতের পরিবারের কাছ থেকে ঠিকাদারের টাকা চাওয়া— একের পর এক এই সব অভিযোগ নিয়ে এ বার প্রচারে নামল তৃণমূলের একটি অংশ।
শুক্রবার গয়েপুর শহর তৃণমূলের সভাপতি ও সহ-সভাপতি বেশ কিছু লোকজন নিয়ে হাসপাতালের সামনে প্রচার চালান। তাঁদের দাবি, যে সমস্ত কর্মী এই সব কাজে যুক্ত তাঁদের বিরুদ্ধে যেন ব্যবস্থা নেওয়া হয়। কাউকে ঘুষ না দেওয়ার জন্য রোগীর আত্মীয়দেরও সতর্ক করা হয়েছে। তৃণমূলের গয়েশপুর শহর সভাপতি সুকান্ত চট্টোপাধ্যায় বলেন, “কেউ ঘুষ চাইলে তৎক্ষণাৎ আমাদের ফোন করবেন। আমার ছাড়াও সহ-সভাপতি মানিক পাল এবং ওয়ার্ড কো-অর্ডিনেটর মোহন রামের ফোন নম্বর হাসপাতালের সামনে পোস্টারে লিখে দেওয়া হয়েছে।”
হাসপাতালে রোগী ভর্তি করানোর জন্য টাকা নেওয়ার অভিযোগে আগেই শুকদেব মধু নামে এক অস্থায়ী কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কাজ থেকে ছআঁটাই হয়েছে তার কয়েক জন সঙ্গীসাথি। এর পর গত ২১ মে হাসপাতালের ঠিকাদার রজত মণ্ডলের বিরুদ্ধে কল্যাণী মহকুমাশাসকের দফতরে লিখিত অভিযোগ হয় যে তিনি এক রোগিণীর মৃতদেহ শ্মশানে নিয়ে যাওয়ার জন্য তাঁর ছেলের কাছে মোটা টাকা নিয়েছেন। সেই অভিযোগ পেয়ে পরের দিনই স্বাস্থ্য দফতর তাঁকে শো-কজ় করে। কিন্তু এ দিন পর্যন্ত তিনি তার উত্তর দিয়েছেন কি না, তাঁর বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তার কোনও কিছুই স্পষ্ট নয়।
ওই ঠিকাদারকে শো-কজ় যিনি করেছিলেন, সেই জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক (সিএমওএইচ) অপরেশ বন্দ্যোপাধ্যায় অসুস্থ হওয়ায় সাময়িক ভাবে কাজ সামলাচ্ছেন ডেপুটি সিএমওএইচ-১ দেবাশিস সরকার। তিনি বলেন, “আমি আজকেই সবে দায়িত্ব নিয়েছি। রজত মণ্ডল শো-কজ়ের জবাব দিয়েছে কি না এখনও জানি না। খোঁজ নিয়ে দেখছি।” ওই ঠিকাদারের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া পারে, তারও স্পষ্ট উত্তর তাঁর কাছে মেলেনি। বারবার চেষ্টা করেও রজত মণ্ডলের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।
গোড়া থেকেই ওই হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য দফতরের কর্মীদের একাংশ দাবি করে আসছেন, রজত মণ্ডলের মাথায় ‘প্রভাবশালী’ কারও হাত আছে। সেই কারণেই আগেও এক বার শো-কজ় হওয়া সত্ত্বেও তাঁর বিরুদ্ধে তেমন কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি এবং কালো তালিকাভুক্ত হওয়ার বদলে ফের তিনি কোভিড হাসপাতালে ঠিকা পেয়েছেন। তৃণমূলের গয়েশপুর শহর সহ-সভাপতি মানিক পালও এ দিন বলেন, “আমাদের মনে হচ্ছে, জেলা স্বাস্থ্য দফতর থেকেই কেউ রজত মণ্ডলকে আড়াল করার চেষ্টা করছে। লিখিত অভিযোগ হওয়ার পরেও ওর বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বা তদন্ত শুরু হয়েছে বলে শুনিনি।” তাঁর দাবি, ওই ঠিকাদারের নিজস্ব যে অ্যাম্বুল্যান্সগুলি হাসপাতালের মধ্যে থাকত এবং ভাড়া খাটত, সেগুলি বাইরে বার করে দেওয়া হয়েছে। যদিও হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, সেগুলি হাসপাতালেরই পিছনের দিকে রাখা আছে।