মিড ডে মিলে দুর্নীতির নালিশ

‘লালগোলা মহেশ নারায়ণ একাডেমী’ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে মিড ডে মিলের দুর্নীতির অভিযোগ তুলে কয়েক মাস আগে আন্দোলনে নেমেছিলেন অভিভাবক ও শিক্ষকদের একাংশ। দুর্নীতির সেই অভিযোগের পক্ষে সরকারি সিলমোহর পড়ল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

লালগোলা শেষ আপডেট: ১২ অগস্ট ২০১৫ ০১:৩৫
Share:

‘লালগোলা মহেশ নারায়ণ একাডেমী’ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে মিড ডে মিলের দুর্নীতির অভিযোগ তুলে কয়েক মাস আগে আন্দোলনে নেমেছিলেন অভিভাবক ও শিক্ষকদের একাংশ। দুর্নীতির সেই অভিযোগের পক্ষে সরকারি সিলমোহর পড়ল। মিড ডে মিলের দুর্নীতি নিয়ে লালগোলার বিডিও স্বপ্নজিৎ সাহা গত ৫ অগস্ট ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষককে শো-কজ করেছেন। সেই সঙ্গে তদন্ত রিপোর্টও পাঠিয়েছেন। শো-কজে প্রধান শিক্ষকের উদ্দেশ্য বিডিও লিখেছেন, ‘মিড ডে মিল নিয়ে দুর্নীতির ঘটনা তদন্তে প্রমাণিত। আপনার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা কেন নেওয়া হবে না সেই বিষয়ে ১০ দিনের মধ্যে যুক্তিগ্রাহ্য জবাব দেবেন। আপনার কাছ থেকে জবাব না পেলে ধরে নেওয়া হবে, আইনি পদক্ষেপ করার বিষয়ে আপনার কিছুই বলার নেই।’’

Advertisement

এম এন একাডেমীর প্রধানশিক্ষক সুব্রত চক্রবর্তী বলেন, ‘‘কোনও দুর্নীতি হয়নি। সঠিক সময়ে সঠিক জবাব দেওয়া হবে বি ডি ও-কে। ওই বিষয়ে আমার কাছ নথিও রয়েছে।’’

তিনি দুর্নীতির অভিযোগ অস্বীকার করলেও বি ডি ও-র পাঠানো মিড ডে মিলের লালগোলা ব্লক নোডাল অফিসার নুরুল আমিনের তদন্ত রিপোর্ট অন্য কথা বলছে। চলতি বছরের ৯ জানুয়ারি থেকে ৯ মার্চ পর্যন্ত ২ মাসে কত ছাত্র স্কুলে হাজির হয়েছিল তার হিসাব রুহুল আমিনের হাতে তুলে দেন স্বয়ং প্রধানশিক্ষক।

Advertisement

ফের ৯ জানুযারি থেকে ৯ মার্চ পর্যন্ত ২ মাসে কত ছাত্র মিড ডে মিল খেয়েছে তারও হিসাব আগেই বি ডি ও অফিসে জমা দিয়েছিলেন প্রধান শিক্ষক। ওই দু’টি হিসাব মেলাতে গিয়ে ব্যাপক গরমিল ধরা পড়ে। ওই দু’ মাসে স্কুলের হাজিরা খাতা অনুসারে পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত মোট ৪টি শ্রেণির মোট ১৬৪৬০ জন ছাত্র স্কুলে গিয়েছে। অথচ ওই একই সময়ে ওই চার শ্রেণির মোট ২১২০৬ জন ছাত্র মিড ডে মিল খেয়েছে বলে বি ডি ও অফিসে হিসাব জমা দেওয়া হয়েছে। ফলে ৪৭৪০ জন ভুয়ো ছাত্র দেখিয়ে তাদের জন্য বরাদ্দ চাল, ডাল, শাক-সব্জি, ডিম, মাংস ও জ্বালানির টাকা আত্মসাত করা হয়েছে বলে অভিযোগ।

তদন্ত রিপোর্টেই ধরা পড়েছে, এ বছর ওই স্কুলে পঞ্চম শ্রেণির পঠনপাঠন শুরু হয়েছে ১৭ জানুয়ারি। অথচ ৯ জানুয়ারি থেকে ১৬ জানুয়ারি পর্যন্ত মোট ৫ দিনে পঞ্চম শ্রেণির ৯৮২ জন ছাত্রের ভুয়ো হাজিরা দেখিয়ে তাদের জন্য বরাদ্দ চাল, ডাল, শাক-সবজি, ডিম, মাংস ও জ্বালানির টাকা আত্মসাত করা হয়েছে। প্রধানশিক্ষক সুব্রত চক্রবর্তী অবশ্য আত্মসাতের কথা মানতে নারাজ।

তিনি বলেন, ‘‘সব শিক্ষকের মতামত নিয়েই স্কুলের স্পোর্টসের দিন পঞ্চম শ্রেণি থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত সব শ্রেণির হাজির থাকা ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষকদের মিড ডে মিল থেকে খাওয়ানো হয়েছিল। তাই হিসাবটা ওই রকম করতে হয়েছে।’’ ‘শিক্ষকদের সম্মিলিত সিদ্ধান্ত’ থেকে শিশুখাদ্য বড়রা খেল কেন?

এ বার সতর্ক প্রধান শিক্ষকের সাবধানী জবাব, ‘‘না। না। শিক্ষকরা খায়নি। তাঁদের সম্মতিতে স্পোর্টসের দিন স্কুলে আসা সব ছেলেমেয়েকে খেতে দেওয়া হয়েছে।’’ যুক্তির খাতিরে সেটাও সত্য ধরে নিলে, সেটাও তো বেআইনি। কারণ, মিড ডে মিল বরাদ্দ কেবল পঞ্চম থেকে শুরু করে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ুয়াদের জন্য। বি ডি ও স্বপ্নজিৎ সাহা অবশ্য বলেন, ‘‘শো-কজের যথাযথ জবাব না পেলে প্রধানশিক্ষকের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আবেদনে সাড়া দিয়ে বিশ্বভারতীর জলকষ্ট দূর করেছিলেন লালগোলার মহারাজা যোগীন্দ্রনারায়ণ রায়। রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদির আবেদনে সাড়া দিয়ে কলকাতায় বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের ভবন নির্মাণ করে দিয়েছেন এই দানবীর মহারাজা। নিজের অন্তরের ডাকে সাড়া দিয়ে আমজনতার জলকষ্ট নিবারণে সারা মুর্শিদাবাদ জেলায় পুকুর ও কুয়ো খনন করে ‘পানিপাঁড়ে’ নামে সমধিক পরিচিত হন। সেই তিনিই ১০১ বছর আগে প্রত্যন্ত এলাকার শিক্ষার প্রসারে প্রয়াত পিতা মহেশ নারায়ণের নামে এম এন একাডেমী প্রতিষ্ঠা করেন।

ফলে সেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মিড ডে মিল নিয়ে এমন ঘটনায় রীতিমতো বিরক্ত লালগোলার মানুষ। বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘লালগোলা সঞ্জীবন’ এর সম্পাদক উত্তম জৈন ও সমাজ-কর্মী সারজেমান শেখ এম এন একাডেমীর প্রাক্তন ছাত্র। তাঁরা দু’ জনেই বলেন, ‘‘এম এন একাডেমীর সঙ্গে বাস্তবিকই লালগোলার আবেগ জড়িয়ে আছে। তার সম্মান ধুলোয় লুটিয়ে দিলেন প্রধান শিক্ষক। সার্বিক তদন্ত হলে শতবর্ষ উদযাপন তহবিল- সহ অনেক বিষয়ের আর্থিক দুর্নীতি ধরা পড়বে। লালগোলার মানুষ চায়, সার্বিক তদন্ত হোক।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন