চুক্তিপত্রে সই করছেন দম্পতি। নিজস্ব চিত্র
সামাজিক মতে বিয়ে। তাই সই করতে হয়নি ম্যারেজ রেজিস্ট্রি ফর্মে। তবে সই সেই করতেই হল। বিবাহবার্ষিকীতে মরণোত্তর দেহদানের অঙ্গীকার করে সই করলেন স্বামী-স্ত্রী।
বছর দেড়েক আগে এক দিন সকালে চা খেতে খেতে খবরের কাগজ পড়ছিলেন কৃষ্ণনগরের মানিকপাড়ার বাসিন্দা মানিক দে। হঠাৎ নজর আটকে যায় একটি খবরে। দেখেন, চিকিৎসার গাফিলতিতে এক প্রসূতির মৃত্যু হয়েছে। ভারাক্রান্ত মনে সে সময়ই উঁকি দেয় চিন্তাটা। ঠিক করেন, ডাক্তারি প়ড়ুয়াদের জন্য মরণোত্তর দেহদান করবেন। যাতে ভবিষ্যতের চিকিৎসকদের প্রস্তুতিতে কোনও ফাঁক না থাকে। আলোচনা করেন স্ত্রী স্বপ্নার সঙ্গে। তিনিও মরণোত্তর দেহদানে রাজি হন। মানিক বলেন, “অনেক ভেবে দেখলাম, নিজের দেহটাকে পুড়িয়ে পরিবেশ দূষণ করে কী লাভ? তার চেয়ে চিকিৎসা বিজ্ঞানের জন্য দান করে দিই। যদি কাজে লাগে।”
কিন্তু কী করে সম্ভব সেটা? নানা জনের কাছে খোঁজ নেওয়ার পর এক বন্ধুর মাধ্যমে কল্যাণী মেডিক্যাল কলেজ থেকে মরণোত্তর দেহদানের ফর্ম আনান তাঁরা। ঠিক করেন, একেবারে বিবাহবার্ষিকীর দিনই তাঁরা সেই অঙ্গীকারপত্রে সই করবেন। মানিক-স্বপ্নার দেখাদেখি তাঁদের তিন আত্মীয় আরতি দে, শ্রীবাস দাস এবং নমিতা দাসও মরণোত্তর দেহদানের অঙ্গীকার করে ফর্মে সই করেছেন। মানিকের ছোট মেয়ে সান্ত্বনা বলেন, “বাবা-মা দেখিয়ে দিলেন এ ভাবেও ভাবা যায়। ভাবছি, সামনের বছর আমিও অঙ্গিকারপত্রে সই করে ফেলব।”
৫৬ বছর বয়সি মানিক জানিয়েছেন তাঁর জীবনযুদ্ধের কথা। স্রোতের বিপরীতে এগিয়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেছেন তিনি। তাই অন্যদের অসহায়তা নাড়া দেয় তাঁকে। ১৯৮২ সালে যখন তাঁদের বিয়ে হয়েছিল, তখন দারিদ্রের সঙ্গে রীতিমতো লড়াই করতে হয়েছিল। বেসরকারি সংস্থায় চাকরি করতেন মানিক। সংসার চালাতে গরুর দুধ বিক্রি করতেন স্ত্রী স্বপ্না। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ভাগ্যের চাকা ঘুরেছে। চাউমিনের কারখানা খুলে এখন এখন জীবনে প্রতিষ্ঠিত মানিক। মেয়েরাও বিয়ে করে থিতু।
মেয়েদের আবদার মেনে কয়েক বছর আগে মানিক-স্বপ্না বিবাহবার্ষিকী পালনে রাজি হন। তবে তাঁদের শর্ত ছিল, দিনটা একটু অন্য ভাবে পালন করতে হবে। কোনও বছর তাই গাছ পুঁতে, কোনও বছর পঙ্ক্তিভোজন করিয়ে, আবার কোনও বছর এইচআইভি আক্রান্ত শিশুদের নিয়ে আনন্দ করে এই বিশেষ দিনটি কাটিয়েছেন তাঁরা। আর এবার বিবাহবার্ষিকী পালন করলেন সুন্দর ভবিষ্যতের স্বপ্ন নিয়ে।