রোগী দেখছেন নার্স। নিজস্ব চিত্র
সকাল থেকেই ভিড়টা চাক বেঁধে থাকে জানলার বাইরে।
সেই জানলায় মুখ রেখে এক মহিলা বলছেন, ‘‘ও দিদিমনি, দেখুন না, গা কেমন পুড়ে যাচ্ছে। সারারাত বমি করেছে।’’
দিদিমনি জানলার ফাঁক দিয়ে হাত গলিয়ে রাখলেন খুদের কপালে। তার পরে একটা সাদা কাগজে খসখস করে ওষুধও লিখে দিলেন। ওই বারান্দারই পাশের আর একটি জানলা থেকে ওষুধগুলো নিয়ে বাড়ির পথ ধরলেন গোপালপুরের পূর্ণিমা দেবনাথ।
গত কয়েক বছর থেকে করিমপুর ২ ব্লকের নন্দনপুর প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের এমন ছবিই দেখে আসছেন রোগী ও স্থানীয় লোকজন। সরকারি খাতায়-কলমে এখানে চিকিৎসক থাকলেও বাস্তবে কোনও চিকিৎসক থাকেন না। রোগী দেখেন ফার্মাসিস্ট কিংবা নার্স।
স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এসে খাঞ্জিপুরের নির্মলা মল্লিক, পূর্ণিমা দেবনাথেরা বলছএন, ‘‘চিকিৎসক আসে না জেনেও সবাইকে এখানেই আসতে হয়। কারণ, কাছাকাছি হাসপাতাল বলতে পনেরো কিলোমিটার দূরে নতিডাঙা বা বিশ কিলোমিটার দূরে করিমপুর হাসপাতালে যেতে হবে। দুপুরে ছাড়া অন্য কোনও সময়ে কারও সমস্যা হলে তো সেই দুরেই ছুটতে হয়। আমাদের এখানে কি কোনও দিনই ডাক্তার আসবে না?’’
কর্তব্যরত নার্স বর্ণা সাহা বলেন, “এক জন চিকিৎসক এখানে দায়িত্বে থাকলেও তাঁকে প্রতিদিন নতিডাঙা ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে প্রচুর রোগীর চাপ সামলাতে হয়। যে কারণে তিনি নন্দনপুর প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আসতে পারেন না। এখানে ফার্মাসিস্ট ও আমি গড়ে প্রতিদিন প্রায় দেড়শো রোগীকে পরিষেবা দিই।”
এলাকার প্রবীণ বাসিন্দা নন্দদুলাল মণ্ডলের আক্ষেপ, ষাট বছর আগে সাড়ে সাত বিঘা জমির উপর করিমপুর ২ ব্লকে নন্দনপুর প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি তৈরি হয়েছিল। তৈরির পর থেকে দশ শয্যার এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে সর্বক্ষণ এক জন চিকিৎসক থাকতেন। চিকিৎসার জন্য পাশের আবাসনে এক জন নার্স, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত দাইমা, ফার্মাসিস্ট, স্বাস্থ্য সহায়ক, এক জন চতুর্থ শ্রেণির কর্মী ও সুইপার থাকতেন। তখন এখানে সাধারণ প্রসব থেকে শুরু করে মানুষ সব রকম চিকিৎসা পরিষেবা পেত। বর্তমানে সপ্তাহের সোমবার থেকে শনিবার পর্যন্ত প্রতিদিন দশটা থেকে ঘণ্টা তিনেকের জন্য বহির্বিভাগে চিকিৎসা করা হয়। রোগী দেখেন একজন ফার্মাসিস্ট বা নার্স। অথচ আশেপাশের টোপলা, বারবাকপুর, গোয়াস, কিশোরপুর, রতনপুর, হাতিশালা, আউদিয়া বিভিন্ন গ্রামের প্রায় এক লক্ষ মানুষের ভরসা এই স্বাস্থ্যকেন্দ্র। দুপুরের ওই তিন ঘণ্টা বাদে অন্য সময়ে কারও সামান্য হাত কেটে গেলেও এলাকার মানুষকে দূরের হাসপাতালে ছুটতে হয়। চিকিৎসার পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য প্রায় সাত বছর আগে নতুন ভবন তৈরি হলেও তা এখনও চালু হয়নি।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, আশির দশকের পর থেকেই এখানে কেউ থাকেন না। বছর খানেক আগেও মাঝে মাঝে এক জন চিকিৎসক আসতেন। এখন কোনও চিকিৎসক নেই। তাই ভাল চিকিৎসা পরিষেবা না পেয়ে অনেকে এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আসেন না। জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিক তাপস রায় জানান, নন্দনপুর প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে দু’জন চিকিৎসক রয়েছেন। কিন্তু নতিডাঙা ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে রোগীর চাপে তাঁরা নিয়মিত সেখানে যেতে পারেন না। যত দ্রুত সম্ভব সমস্যার সমাধান করা হবে।