ঘুম জড়ানো চোখেও সাইকেলে অবিচল থাকেন আজবার মণ্ডল

দিন ফুরিয়ে আসে, চারপাশে ঘন হয়ে থাকা গ্রামীণ বৃত্তটা অবাক বিস্ময় নিয়ে ঘরে ফিরে যায়। তবু প্যাডেল থেকে পা ছোঁয় না মাটি। দিন-রাত অবিরাম সেই সাইকেল-স্মৃতি উস্কে দিল আনন্দবাজারধীরে ধীরে ফাঁকা হয়ে যায় বৃত্ত। একটা ঘোর বিস্ময় বুকে চেপে গ্রাম ঘুমোতে যায়। প্যাডেল থেকে পা ওঠে না আজবার মণ্ডলের।

Advertisement

আব্দুল হাসিম

ডোমকল শেষ আপডেট: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০২:৫৬
Share:

—ফাইল চিত্র।

আধময়লা, তাপ্পি মারা জামা। মাথায় টুপি। মিশকালো হাত দুটো শক্ত করে ধরে রয়েছে সাইকেলের রংচটা হ্যান্ডেল। ঘুরে চলেছে বৃত্তাকারে। আর সেই বৃত্তের বাইরে গোল হয়ে বসে গ্রামীণ মানুষ। তাঁরা কেউ ছয়, কেউ ষাট। কারও লোলচর্ম গালে ফাগুনের খড়ি ফুটেছে। কারও আটপৌরে গ্রামীণ সৌন্দর্য আঁচলে ঢাকা। দিন ফুরোয়, রাত আসে। সাইকেল ঘুরে চলে। একই পথে। ধীরে ধীরে ফাঁকা হয়ে যায় বৃত্ত। একটা ঘোর বিস্ময় বুকে চেপে গ্রাম ঘুমোতে যায়। প্যাডেল থেকে পা ওঠে না আজবার মণ্ডলের।

Advertisement

ডোমকলের পাইকমারি গ্রামে ‘সাইকেল খেলা’ দেখাতে গিয়েছেন আজবার। আগামী সাতদিন সাইকেলে েকটেছে তাঁর। খাওয়া-দাওয়া থেকে অন্য সব কাজ সাইকেলে বসেই করেছেন তিনি। কখনও দু’হাত ছেড়ে দিয়ে সাইকেল চালানো, কখনও মাথার ওপর শিশুকে রেখে সাইকেলে কসরত— সবই দেখাচ্ছেন আজবার। বছর কুড়ি আগেও গ্রামাঞ্চলে সাইকেল নিয়ে এই খেলা দেখাতে চলে আসতেন আজবারের মতো পেশাদারেরা। কোথাও তিনদিন, কোথাও সপ্তাহভর চলত তাঁদের ‘খেল’। আরও অনেক কিছুর মতো গ্রামীণ এলাকা থেকে বিদায় নিয়েছে সেই সাইকেলের খেলও।

রফিকুল ইসলাম নামে এক গ্রামবাসী বললেন, ‘‘খুব ছোট তখন। সে সময় আমাদের গ্রামে একজন এসেছিলেন সাইকেলের খেলা দেখাতে। তিনদিন ধরে একভাবে তিনি সাইকেল চালিয়েছিলেন। সারাদিন ওই সাইকেল কাকুকে ঘিরে বসে থাকতাম। সন্ধ্যার পর বাড়িতে গিয়ে ভাবতাম তাঁর কথা। দাদার কাছে বারবার জানতে চাইতাম, ‘আচ্ছা দাদা, কাকুটা কি সত্যিই না ঘুমিয়ে সারারাত সাইকেল চালাবে!’ তারপর কত বছর পেরিয়ে গিয়েছে। এমন সাইকেল খেলা আর দেখিনি। এখানে এসে ছেলেবেলাটা আরেকবার ফিরে পেলাম।’’ একটু দূরে লাজুক মুখে দাঁড়িয়ে গ্রামের মহিলারা। তাঁরাও সাইকেলওয়ালার বিভিন্ন কসরতে হাততালি দিচ্ছেন।

Advertisement

‘সাইকেল মাস্টার’ আজবারের সঙ্গে রয়েছে তাঁর শাগরেদ ‘পটল’। জলের বোতল, খাবার— আজবারের যখন যা দরকার হাতে হাতে এগিয়ে দিচ্ছে সে। মাঝেমধ্যে সে আজবারকে নকল করার চেষ্টাও করছে। তাতে শিশু দর্শকেরা হেসে লুটোপুটি। সাইকেলের খেলা ঘিরে পাইকমারি গ্রামে ছোটখাটো মেলা বসে গিয়েছে। তবে আজবার খুশি নন। হাততালিতে পেট ভরে না তাঁর। আজবারের আক্ষেপ, ‘‘আগের সে দিন কোথায়? আগে শীত পড়লে দূর-দূরান্ত থেকে ডাক আসত। এখন আর শরীর দেয় না। কিন্তু কী করব বলুন!’’ দিন যায়। বছর ঘোরে। আজবারের সংসারে অভাব ঘোচে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন