দুঘর্টনার পর ভেঙেছে গাড়ির কাঁচ। — নিজস্ব চিত্র
যত রাগ রাস্তার উপরে!
স্কুলে সাইকেল মিলছে না? পথ অবরোধ।
পুলিশ অভিযুক্তকে ধরছে না? পথ অবরোধ।
গ্রামে বিদ্যুৎ বিভ্রাট হলে? সেই একই রাস্তা—পথ অবরোধ!
আর পথ দুর্ঘটনা হলে তো কথাই নেই। সামনে বেঞ্চ, গাছের ডাল যা পাওয়া যায় রাস্তায় ফেলে—অবরোধ।
মঙ্গলবারেও মুর্শিদাবাদের দুই প্রান্তে দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছেন দু’জন। সেই জোড়া অবরোধের ফাঁসে নাকাল হলেন রোগী থেকে নিত্যযাত্রী সকলেই।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন পাথর বোঝাই ট্রাকের ধাক্কায় মৃত্যু হয় রুবেল শেখ (১২) নামে এক স্কুল ছাত্রের। উদয় চাঁদপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র রুবেলের বাড়ি জীবন্তির লক্ষ্মীনারায়ণপুরে। ঘটনার পরেই জীবন্তি মোড়ে কান্দি–বহরমপুর রাজ্য সড়ক প্রায় চার ঘণ্টা অবরোধ করে ক্ষুব্ধ বাসিন্দারা।
অন্য দিকে, নবগ্রামের আয়রার মোড়ের কাছে ট্রাকের ধাক্কায় মারা গিয়েছেন এক সুকি চৌধুরী (২১) নামে এক মহিলার। গুরুতর জখম হন আরও একজন মহিলা। ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের উপরে ওই ঘটনার পরে প্রায় দু’ঘণ্টা অবরোধ চলে।
অভিযোগ, দুর্ঘটনার পরে জাতীয় সড়কের উপরে মৃত ও আহত মহিলাকে দীর্ঘক্ষণ পড়ে থাকতে দেখে এলাকার বাসিন্দারা উত্তেজিত হয়ে পথ অবরোধ করেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে জখম মহিলাকে উদ্ধার করে নবগ্রাম ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পাঠায়। সেখান থেকে তাঁকে পাঠানো হয় মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে।
কিন্তু সুকি চৌধুরীর দেহ তুলতে গিয়ে পুলিশকে বাধার মুখে পড়তে হয়। পরে নবগ্রাম থানার ওসি দুলাল বিশ্বাস ঘটনাস্থলে পৌঁছে উত্তেজিত জনতাকে বুঝিয়ে অবরোধ তোলেন। দুলালবাবু জানান, গত কয়েক দিন থেকে জাতীয় সড়কের পাশে সুকির মোড়ে তাঁবু ফেলেছিলেন কয়েকটি আদিবাসী পরিবার। ওই পরিবারের দু’জন মহিলা এ দিন সকালে জাতীয় সড়ক পার হচ্ছিলেন। সেই সময় দ্রুত গতিতে একটি লরি এসে তাঁদের ধাক্কা মারে। ঘটনাস্থলেই মারা যান সুকি। ঘাতক ট্রাকটিকে আটক করা হলেও চালক পলাতক।
জীবন্তির ওই ছাত্র বেলা দশটা নাগাদ সাইকেলে স্কুলে যাচ্ছিল। সেই সময় বহরমপুরগামী পাথর বোঝাই একটি ট্রাক তাকে ধাক্কা মারে। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় রুবেলের। ঘটনার পরে স্থানীয় বাসিন্দারা উত্তেজিত হয়ে মৃত ছাতের দেহ রাস্তায় রেখে অবরোধ শুরু করেন। ওই ট্রাক ও কান্দিগামী একটি বেসরকারি বাসেও ভাঙচুর চলে। পুলিশ যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণ ও রাস্তায় স্পিড ব্রেকারের প্রতিশ্রুতি দিলে অবরোধ উঠে যায়।
বাসিন্দাদের অভিযোগ, রাজ্য সড়কের ধারেই বসে বাজার। রাজ্য সড়কের অবস্থাও বেহাল। ওই রাস্তা দিয়েই বেপরোয়া ভাবে যাতায়াত করে অতিরিক্ত পণ্য বোঝাই ট্রাক। আর সেই কারণেই মাঝেমধ্যে দুর্ঘটনা লেগেই থাকে। মাসখানেক আগে গোর্কণ বাজারের এক ব্যবসায়ী মোটরবাইকে বাড়ি ফেরার পথে ট্রাকের ধাক্কায় মারা গিয়েছেন। তখনও পথ অবরোধ হয়।
কথায় কথায় এই অবরোধের গুঁতোয় বিরক্ত প্রশাসন ও নিত্যযাত্রীরা। তাঁরা জানাচ্ছেন, যে কোনও অন্যায়েরই নিশ্চয় প্রতিবাদ করা উচিত। তাই বলে পথকে কেন বেছে নেওয়া হবে? সেটাও তো আর এক অন্যায়। মানুষ সচেতন না হলে এই রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া খুব কঠিন।
জেলা পুলিশের এক কর্তার কথায়, ‘‘অবরোধ তোলাকে কেন্দ্র করে এই জেলায় বেশ কয়েকটি বিতর্কিত ঘটনা ঘটেছে। ফলে আমরা এই মুহূর্তে মেপে পা ফেলছি। কিন্তু সব প্রতিবাদের মাসুল দিতে হবে রাস্তাকে—এটাও কোনও ভাবে মানা যায় না।’’