নাম নিয়ে ধুন্ধুমার ফেসবুকে

লালগোলার শতবর্ষ প্রাচীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এম এন অ্যাকাডেমি। দিন কয়েক ধরে বিতর্ক ঘুরপাক খাচ্ছে এই স্কুলটিকে কেন্দ্র করে। তবে বিতর্ক প্রকাশ্যে স্কুলের মাঠে, কিংবা পাড়ার চা দোকানে নয়, চলছে ফেসবুকে। স্কুলের পঠনপাঠন নয়, বিতর্কের কেন্দ্রে আবার রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং এম এন অ্যাকাডেমির প্রয়াত প্রধানশিক্ষক মদনমোহন রায়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০১ জুন ২০১৬ ০২:২৩
Share:

লালগোলার শতবর্ষ প্রাচীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এম এন অ্যাকাডেমি। দিন কয়েক ধরে বিতর্ক ঘুরপাক খাচ্ছে এই স্কুলটিকে কেন্দ্র করে। তবে বিতর্ক প্রকাশ্যে স্কুলের মাঠে, কিংবা পাড়ার চা দোকানে নয়, চলছে ফেসবুকে। স্কুলের পঠনপাঠন নয়, বিতর্কের কেন্দ্রে আবার রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং এম এন অ্যাকাডেমির প্রয়াত প্রধানশিক্ষক মদনমোহন রায়। স্কুলের লাইব্রেরি মাঠের মঞ্চ এই দু’জনের মধ্যে কার নামে থাকবে, তাই নিয়ে বিতর্কের পারদ দিন দিন চড়ছে।

Advertisement

বাবা মহেশ নারায়ণের নামে মহারাজা যোগীন্দ্রনারায়ণ রায় ১৯১৪ সালে ওই স্কুলটি প্রতিষ্ঠা করেন। স্কুল লাগোয়া একটি গ্রন্থাগারও রয়েছে। ওই গ্রন্থাগার এবং সংলগ্ন মাঠটিও স্কুলেরই সম্পত্তি। ১৯৮৪ সালে গ্রন্থাগারের মাঠে একটি মুক্তমঞ্চ গড়া হয়। ওই স্কুলের প্রাক্তন ছাত্র পীতাম্বর সারেঙ্গি বলেন, ‘‘সেই সময় ওই মঞ্চে সাদা রং দিয়ে লেখা হয়েছিল ‘রবীন্দ্র মঞ্চ’। পরে সেই লেখা মুছে যায়।’’

বাচিক শিল্পী পীতাম্বর সারেঙ্গি বলেন, ‘‘ওই মঞ্চে রাজ্য সরকারের যুব উৎসবও হয়েছে। প্রতিটি অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণপত্রে ‘রবীন্দ্র মঞ্চ’ কথাটি লেখা হয়েছে।’’ তাঁর দাবি, ওই মঞ্চ ব্যবহার করার জন্য স্কুল কর্তৃপক্ষ ভাড়াও নিয়েছে রবীন্দ্র মঞ্চের নামেই।

Advertisement

সম্প্রতি ওই মুক্তমঞ্চ ভেঙে একটি মাথায় ছাদ দেওয়া মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে। আগামী বৃহস্পতিবার ৩ জুন নব নির্মীত মঞ্চ ও গ্রিনরুমের উদ্বোধন হবে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণপত্রে এর নামকরণ করা হয়েছে ‘মদনমোহন রায় নামাঙ্কিত মঞ্চ’। আর তাতেই লালগোলা দু’ভাগে বিভক্ত। এক পক্ষের যুক্তি, প্রয়াত মদনমোহনবাবু ছিলেন জাতীয় শিক্ষক। তিনি লালগোলার গর্ব। তাই বলে রবীন্দ্রনাথের নাম বাতিল করে মদনমোহনবাবুর নাম? মানা যায় না।

এতে এমনকী আপত্তি রয়েছে, মদনমোহনবাবুর ছেলে সৌরভ রায়েরও। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের কোনও অনুমতি নেয়নি স্কুল কর্তৃপক্ষ। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নামের বদলে বাবার নাম কাম্য নয়। এতে বাবাকেও সম্মান জানানো হবে না।’’ অন্য দিকে প্রধানশিক্ষক সুব্রত চক্রবর্তী নিজেই মেনেছেন মাঠে। তিনিই পদাধিকার বলে স্কুল পরিচালন সমিতির সম্পাদকও। আর পদাধিকার বলে সভাপতি লালবাগের মহকুমা শাসক প্রবীর চট্টোপাধ্যায়।

সুব্রতবাবু বলেন, ‘‘ওই মঞ্চটি ‘রবীন্দ্র মঞ্চ’ এমন কোনও নথি স্কুলে নেই। পরিচালন সমিতির মিটিং-এ সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত নিয়ে মদনমোহন মঞ্চ নামকরণ হয়েছে।’’ এমন কোনও মিটিং-এর কথা অবশ্য মনে করতে পারছেন না পরিচালন সমিতির সভাপতি তথা লালবাগের মহকুমা শাসক প্রবীর চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘স্কুলের পরিচালন সমিতির সভাপতি হিসাবে এমন কোনও মিটিং-এ আমি কখনও ছিলাম না। প্রধান শিক্ষকের কাছে এ বিষয়ে আমি জানতে চাইব।’’

এমন একটা স্কুলের মঞ্চ নিয়ে এই বিতর্ক, যে স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা মহারাজা যোগীন্দ্রনারায়ণ রায়, যাঁর দানে বিশ্বভারতীর অবলুপ্তি রোধ করা সম্ভব হয়েছিল। সেই দানবীর মহারাজার প্রতিষ্ঠিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মঞ্চের নামকরণ নিয়ে চলছে দড়ি টানাটানি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement