মা নেই, চলেই গেল ছেলে

শনিবার সকাল ৮টা নাগাদ রানাঘাট ২ ব্লকের রঘুনাথপুর হিজুলি ১ গ্রাম পঞ্চায়েতে হিজুলি চৌমাথায় রিকুদের  বাড়িতে খবর আসে, জ্বর ও ডায়েরিয়া নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া টুসি বিশ্বাস মারা গিয়েছেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

রানাঘাট শেষ আপডেট: ০৮ অক্টোবর ২০১৭ ০৪:১০
Share:

রিকু। ফাইল চিত্র

মায়ের মৃত্যুসংবাদ শুনেই বাড়ি থেকে বেরিয়ে গিয়েছিল বছর তেরোর ছেলে। ফোনে বলেছিল, তার আর ফেরার ইচ্ছে নেই।

Advertisement

ফিরলও না। পরে রেললাইনের ধারে গুরুতর জখম অবস্থায় পাওয়া গেল তাকে। বাঁচানো গেল না। নাম সোমেন বিশ্বাস ওরফে রিকু। হিজুলি শিক্ষানিকেতনের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র ছিল সে।

শনিবার সকাল ৮টা নাগাদ রানাঘাট ২ ব্লকের রঘুনাথপুর হিজুলি ১ গ্রাম পঞ্চায়েতে হিজুলি চৌমাথায় রিকুদের বাড়িতে খবর আসে, জ্বর ও ডায়েরিয়া নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া টুসি বিশ্বাস মারা গিয়েছেন। গত মঙ্গলবার হওয়ায় তাঁকে রানাঘাট মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল। পরের রাতে তাঁকে কল্যাণী জওহরলাল নেহরু মেমোরিয়াল হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়।

Advertisement

রিকুরা দুই ভাই। সে ছোট। তার দাদা সোমনাথ বিশ্বাস ওরফে বাপ্পা রানাঘাট কলেজের বিএ প্রথম বর্ষের ছাত্র। তাদের বাবা নন্দদুলাল বিশ্বাস পেশায় মাছ বিক্রেতা। তিনিই রাতে হাসপাতালে ছিলেন। সকালে বাড়িতে ফোন করে খবর দেন।

টুসির জা রিতা বলেন, “সকালে রিকুকে যখন খেতে ডাকছি, তখনই খবরটা আসে। ছেলে আর খায়নি। ‘মায়ের কাছে যাচ্ছি’ বলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। আগেও বন্ধুদের সঙ্গে ও কলকাতায় গিয়েছে। ভেবেছিলাম, একাই হাসপাতালে যাচ্ছে।” রিকুর জ্যাঠতুতো দিদি সোমা বলে, “পরে ও ফোন করে বলতে থাকে, আর বাড়ি ফিরবে না। মায়ের মৃত্যুসংবাদ সহ্য করতে পারছে না।”

সকালেই রানাঘাট মিলপাড়া এলাকায় রেললাইনের ধারে রিকুকে পড়ে থাকতে দেখেন এলাকার লোক। হিজুলি কালীতলার দেবুবালা দাসের কথায়, “আমরা চার জন ওখান দিয়ে বাড়ি ফিরছিলাম। দেখি, রেললাইনের ধারে এক জন পড়ে রয়েছে। মাঝে-মাঝে খিঁচুনি হচ্ছে। একটি ছেলে এসে জানায়, ট্রেনে ধাক্কা লেগেছে।” রিকুর কাকা রতন বিশ্বাস বলেন, ‘‘আমরাও ইতিমধ্যে রিকুকে ফোন করেছিলাম। এক জন ফোন ধরে বলে, ও জখম হয়ে পড়ে রয়েছে।”

রানাঘাট জিআরপি-র আইসি দেবকুমার রায় বলেন, “একটি ছেলে রেললাইনের ধারে পড়ে আছে খবর পেয়ে আমাদের কর্মীরা গিয়েছিলেন। কিন্তু সেখানে তাকে পাওয়া যায় নি। এলাকার লোকজনই তাকে রানাঘাট মহকুমা হাসপাতালে পাঠিয়েছিলেন। আমাদের কর্মীরা যখন সেখানে গিয়ে পৌঁছন, তখনও ছেলেটি বেঁচে ছিল। চিকিৎসকদের নির্দেশে তাকে কল্যাণী হাসপাতালে পাঠানো হয়।” দুপুরে সেখানেই মৃত্যু হয় রিকুর।

মায়ের মৃত্যুতে এতটা কেন ভেঙে পড়ল রিকু? এ কি সত্যিই আত্মহত্যা না দুর্ঘটনা? তার বাবা আর দাদা এত বিধ্বস্ত যে কথা বলার অবস্থায় নেই। ময়নাতদন্তের পরে আজ, রবিবার রিকুর দেহ ঘরে ফিরবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন