অমাবস্যার রাতেও উড়ছে রঙিন প্রজাপতি

মুর্শিদাবাদের একেবারে সীমান্ত ঘেঁষা জনপদ সাগরপাড়া, নরসিংহপুরে গত কয়েক বছর ধরে বড় বাজেটের কালীপুজো হচ্ছে।

Advertisement

সুজাউদ্দিন

জলঙ্গি শেষ আপডেট: ১৯ অক্টোবর ২০১৭ ০৭:৩০
Share:

দেশবন্ধু ক্লাবের পুজো।

ক্রমশ বদলে যাচ্ছে পুজোর মেজাজ, আয়োজন। পুরনো পুজোর সঙ্গে যেমন জড়িয়ে রয়েছে অজস্র গল্প, কাহিনি। তেমনি নতুন পুজোগুলো নিয়েও মানুষের আগ্রহের অন্ত নেই।

Advertisement

মুর্শিদাবাদের একেবারে সীমান্ত ঘেঁষা জনপদ সাগরপাড়া, নরসিংহপুরে গত কয়েক বছর ধরে বড় বাজেটের কালীপুজো হচ্ছে। এ বারে দেশবন্ধু ক্লাবের পুজোর থিম প্রজাপতি। আস্ত মণ্ডপটাই তৈরি করা হয়েছে প্রজাপতির আদলে। ঝাড়গ্রাম থেকে শিল্পীকে নিয়ে এসে তৈরি করা হয়েছে ওই মণ্ডপ।

দেশবন্ধু ক্লাবের সম্পাদক তথা স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েতের উপ-প্রধান ভাস্কর ঘোষ জানান, সীমান্তের এই এলাকায় তেমন কোনও বিনোদন নেই। সেই কারণে পুজো-পার্বণে চেষ্টা করা হয় নতুন কিছু করতে। তাঁর কথায়, ‘‘ঝাড়খণ্ডে ঘুরতে যাওয়ার সময় প্রজাপতির আদলে তৈরি মণ্ডপ দেখেছিলাম। তখনই ঠিক করি, ক্লাবের কালীপুজোতেও ওই রকম মণ্ডপ করব। সেই মতো শিল্পীকে খুঁজে নিয়ে আসি আমাদের মণ্ডপে।’’

Advertisement

নরসিংহপুরের খেয়ালি অ্যাথলেটিক ক্লাবের পুজোতেও রয়েছে চমক। নারকেলের দড়ি দিয়ে তৈরি করা হয়েছে মণ্ডপ। প্রতিমা তৈরি করা হয়েছে ধান, ডাল-সহ অন্যান্য শস্যবীজ দিয়ে। আবার সাগরপাড়া বাজারের পুজোতে প্রতিমার উচ্চতা প্রায় ২৫ ফুট। সেই প্রতিমা রাখা থাকছে চাকাওয়ালা রথে। কারণ, এত উঁচু প্রতিমা বিসজর্নের সময় আলাদা করে নিয়ে যাওয়া কঠিন। সেই কারণেই এমন ব্যবস্থা।

নরসিংহপুর থেকে কিছুটা দূরে গোদাগাড়ি আবার সেই দুর্গাপুজো থেকেই রয়েছে উৎসবের মেজাজে। গ্রামের প্রাথমিক স্কুল লাগোয়া মণ্ডপে আগে দুর্গাপুজো হতো। বেশ কিছু সমস্যার কারণে মাঝে প্রায় ১২ বছর পুজো বন্ধ ছিল। এ বার সেখানে দুর্গাপুজো হয়েছে। উচ্ছ্বসিত গ্রামের লোকজন যে যেমন পেরেছেন পুজোতে সাহায্য করেছেন। সেই মণ্ডপেই হয়েছে লক্ষ্মীপুজো। মন্দির থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে গোদাগাড়ি যুব সঙ্ঘ আয়োজন করছে কালীপুজোর। মাটির প্রতিমা। মণ্ডপে থাকছে থার্মোকলের বাহারি সাজ। এই কালীপুজো এ বার ১২ বছরে পা দিল।

গোদাগাড়ি যুব সঙ্ঘের সম্পাদক আশিস মণ্ডল, পুজোর অন্যতম কর্মকর্তা শৌভিক বিশ্বাস, মৃণাল প্রামাণিকেরা বলছেন, ‘‘আমাদের গ্রামে এ বার খুশির বাঁধ ভেঙেছে। অন্য বছর আশপাশের এলাকায় দুর্গাপুজো হতো। দূর থেকে আমরা ঢাকের আওয়াজ শুনতাম। অপেক্ষা করতাম কালীপুজোর। এ বার সব মনখারাপ উধাও। গ্রামের সকলেই রয়েছেন উৎসবের মেজাজে।’’

আর প্রাচীন কালীপুজো? সেগুলোও উজ্জ্বল তাদের নিজস্ব মহিমায়। ইসলামপুরের ইসবপুর (ঋষিপুর) গ্রামের কালীপুজো নিয়েও রয়েছে নানা কাহিনি। শোনা যায়, জঙ্গলে ঘেরা বড় জলায় কালীমূর্তি বিসর্জন দিয়েই ডাকাতি করতে যেত ডাকাতেরা। ডাকাতদের সেই পুজোর দায়িত্ব এখন নিজেদের কাঁধে তুলে নিয়েছেন গ্রামের বাসিন্দারাই। ইসবপুর তো বটেই সেখানকার পুজো দেখতে আজও জেলার নানা প্রান্তের মানুষ ছুটে আসেন। আবার রেশম শিল্পের এলাকা, চক ইসলামপুরকে কলেরার হাত থেকে বাঁচাতে শীতলাদেবীকে ছেড়ে কালীর শরণাপন্ন হয়েছিলেন স্থানীয় বাসিন্দারা। শোনা যায়, তার পরেই উধাও হয় কলেরা। এখনও ওই এলাকায় ধুমধাম করে কালীর পুজো হয়। পুজো উপলক্ষে বসে যাত্রার আসর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন