পিঠের-বোঝা: বহরমপুরে। —নিজস্ব চিত্র।
গোরাবাজারের নিকিতা ভৌমিক বহরমপুরের একটি বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী। তার ব্যাগে থাকে ১১টি বই, ১১টি খাতা, টিফিন বক্স ও জলের বোতল। নিকিতার ব্যাগের ওজন সাড়ে পাঁচ কিলোগ্রাম ছাড়িয়ে যায়। স্বাভাবিক ভাবেই ওই ব্যাগ বইতে সমস্যা হয় তার।
নিকিতার মা বিনীতা ভৌমিক জানাচ্ছেন, স্কুলের বই-খাতা না দিলে সমস্যা হয়। তাই ব্যাগ ভর্তি করে বইখাতা দিতে হয়। কিন্ত এই ব্যাগ এতটাই ভারী হয় যে, নিকিতার পক্ষে সেই ব্যাগ নিয়ে যাওয়া বেশ কষ্টের হয়। মাঝে মধ্যে স্কুল থেকে বাড়ি ফিরে পিঠে ব্যথা হচ্ছে বলে সে কান্নাকাটিও করে। নিকিতার মায়ের কথায়, ‘‘কেন্দ্র সরকারের স্কুলব্যাগের ওজন বেঁধে দেওয়া খুব প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ। বাস্তবে সেই নিয়ম কবে থেকে লাগু হবে সেটাই এখন দেখার।’’
শুধু নিকিতা নয়, ব্যাগের ভারে সমস্যায় পড়ে বহু পড়ুয়া। অভিভাবকেরা জানাচ্ছেন, সব পড়ুয়ার শারীরিক ক্ষমতা এক রকম নয়। যারা দুর্বল ও অসুখে ভোগে তাদের পক্ষে ভারী ব্যাগ পিঠে স্কুল যাওয়াটা রীতিমতো বিপজ্জনক। ডোমকলের একটি বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের তৃতীয় শ্রেণির পড়ুয়া আলিশা শবনমের ভারী ব্যাগ কাঁধে স্কুলে যেতে সমস্যা হয়। বই, খাতা, টিফিন বক্স ও জল মিলিয়ে তার স্কুল ব্যাগের ওজন দাঁড়ায় প্রায় ছ’কিলোগ্রাম। আলিশার কথায়, ‘‘ ওই ভারী ব্যাগ আমি বইতে পারি না। তাই স্কুলের গেট পর্যন্ত ব্যাগ পৌঁছে দেয় বাবা।’’
তবে বেসরকারি স্কুলের ব্যাগের ওজন ভারী হলেও সরকারি স্কুলগুলিতে স্কুল ব্যাগের ওজন অনেকটাই কম। প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির পড়ুয়াদের বাড়িতে ‘হোম-ওয়ার্ক’ দেওয়া হয় না। তাদের জন্য শিক্ষা দফতর একটিমাত্র বই তৈরি করেছে। সেই বই আবার স্কুলেই রেখে দিতে হয়। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির পড়ুয়াদের বই খাতা নিয়ে স্কুলে আসতে হয়। তবে শিক্ষা দফতরের কর্তাদের দাবি, কেন্দ্রীয় সরকারের বেঁধে দেওয়া ওজনের থেকে ব্যাগের ভার কখনও বেশি হবে না।
জেলা স্কুল পরিদর্শক (প্রাথমিক) নীহারকান্তি ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির পড়ুয়াদের বই স্কুলেই থাকে। অন্য ক্লাসের বই খাতাও কম। ফলে প্রাথমিকের পড়ুয়াদের এই ব্যাগ সমস্যা নেই।’’ বহরমপুরের বানজেটিয়ার একটি বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের অধ্যক্ষ সন্তোষকুমার দাস বলেন, ‘‘ব্যাগের অতিরিক্ত ভারের বিষয়টি আমাদেরও অজানা নয়। পড়ুয়াদের নানা শারীরিক সমস্যা হয়। এই অবস্থায় কেন্দ্র সরকারের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাচ্ছি।’’