উন্নয়ন আটকে যায় কাঁটাতারেই

বর্তমান প্রজন্ম জীবিকার সন্ধানে দলে দলে পাড়ি দিচ্ছে ভিন্‌দেশে। ভোট আসে, ভোট যায়। অভিমান বুকে হাটখোলা বুথে যায়। কিন্তু বঞ্চনার হাত থেকে যেন এ গ্রামের মুক্তি নেই।

Advertisement

সুস্মিত হালদার

চাপড়া শেষ আপডেট: ২০ এপ্রিল ২০১৮ ০১:৪০
Share:

কাঁটাতারের গায়ে বড় বড় লোহার গেট। গাঁয়ে ঢুকতে গেলে পেরোতে হয় এগারো নম্বর গেট। তার পরে এঁকেবেঁকে চলে গিয়েছে ইটের রাস্তা। এবড়োখেবড়ো। দিনেদুপুরেও হোঁচট খেতে হয়।

Advertisement

কাঁটাতারের ওপারের সেই গ্রামের নাম হাটখোলা। প্রায় আটশো পরিবারের বাস। গ্রামে কোনও পাকা বাড়ি নেই। মেলেনি বাংলা আবাস যোজনার ঘরও। কারণ, তাতে নাকি বিজিবি-র (বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ) আপত্তি আছে। গ্রাম জুড়ে জেগে আছে দারিদ্রের ছবি।

বর্তমান প্রজন্ম জীবিকার সন্ধানে দলে দলে পাড়ি দিচ্ছে ভিন্‌দেশে। ভোট আসে, ভোট যায়। অভিমান বুকে হাটখোলা বুথে যায়। কিন্তু বঞ্চনার হাত থেকে যেন এ গ্রামের মুক্তি নেই।

Advertisement

গ্রামের মাঝ বরাবর চলে গিয়েছে বর্ডার রোড। পাশে কাঁটাতারের বেড়া। এপারে হাজার দেড়েক পরিবারের বাস। ওপারে আটশো। বছর কয়েক আগে গ্রামে পাইপলাইন বসানো হয়েছে। কিন্তু আজও জল আসেনি। গ্রামের কিছু মানুষের নিজস্ব জমি আছে। কিন্তু কাঁটাতার থেকে বাংলাদেশের দিকে ৫০ মিটার আর এ দিকে ভারতের দিকে ২০ মিটারের মধ্যে পাট চাষে আপত্তি তুলেছে বিএসএফ।

ফলে, সে জমি পড়েই থাকে। আবাদ হয় না। গত বার তা নিয়ে বিস্তর ঝামেলাও হয়েছিল। শেষতক ছুটে আসতে হয়েছিল বিধায়ক রুকবানুর রহমানকেও। গ্রামের মানুষের দাবি, সেই শেষ বার পা পড়েছিল বিধায়কের। ঠেলায় না পড়লে হাটখোলায় দেখা মেলে না নেতা-মন্ত্রীদের। তবে হ্যাঁ, বিধানসভা বা লোকসভার ভোট এলে তাঁরা আসেন। কথা বলেন। প্রতিশ্রুতি দেন। তবে সবই এ পারে।

ওপারের মানুষের সঙ্গে কথা হয় কাঁটাতারের ফাঁক দিয়ে। মহম্মদ আলি মোল্লার গলায় স্পষ্ট অভিমান, ‘‘পঞ্চায়েত ভোটেও নেতারা আসার প্রয়োজন মনে করেন না।” গ্রামের বাসিন্দা তথা পঞ্চায়েত সমিতির টানা দু’বারের প্রাক্তন সদস্য সাবের আলি মণ্ডলের কথায়, “না, আগেও নেতাদের সে ভাবে আমাদের গ্রামে পা দিতে দেখিনি। এখনও দেখি না।”

হাঁটখোলা গ্রাম থেকে পাঁচ জন পঞ্চায়েত সদস্য ও একজন পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য নির্বাচিত হন। তবুও কেন এই অবস্থা? কাঁটাতারের ওপারের বাসিন্দা, পঞ্চায়েত সদস্য সফিকুল শাহ বলছেন, “আমরা তো উন্নয়ন করতে চাই। কিন্তু বিএসএফ-বিজিবি বাধা দেয়। এপারে রোলার পর্যন্ত ঢুকতে দেয় না।”

আর ওপারে? সেখানেও তো প্রায় দেড় হাজার পরিবারের বাস? তৃণমূলের চাপড়া ব্লক সভাপতি জেবের শেখ বলছেন, “জানি না, হাটখোলার মানুষ কেন এমনটা বলছেন! আমরা কিন্তু নিয়মিত ওঁদের খবর রাখি। সমস্ত পরিষেবাই তো তাঁদের কাছে পৌঁছে দিই।”

তা হলে গ্রামের বাসিন্দারা এমনটা বলছেন কেন?

কোনও সদুত্তর মেলে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন