ওউটা লিখতে পারলুনি? 

বাড়ি আসতেই মায়ের ধ্যাতানি, ওউটা লিখতে পারলুনি? (এইটা লিখতে পারলি না) এটা তো  জয়ের (জলের) মতো সহজ। সকা বা (সকাল বেলা) তো পড়াইলি (পড়ালাম)। চেয়ে রইলাম অপরাধীর মতো। 

Advertisement

শিবনাথ মাইতি

শেষ আপডেট: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০১:৫৯
Share:

আমাদের গ্রামে বিড়ালকে ‘বিলি’ বলে। পরীক্ষায় এসেছে ‘বাড়ি বাড়ি চিঠি বিলি করে কে?’ আকাশপাতাল ভাবি— বিড়াল চিঠি নিয়ে কী করবে? চিঠির সঙ্গে তার কি লেনাদেনা? শেষে উত্তর না লিখেই চলে এলাম।

Advertisement

বাড়ি আসতেই মায়ের ধ্যাতানি, ‘‘ওউটা লিখতে পারলুনি? (এইটা লিখতে পারলি না) এটা তো জয়ের (জলের) মতো সহজ। সকা বা (সকাল বেলা) তো পড়াইলি (পড়ালাম)।" চেয়ে রইলাম অপরাধীর মতো।

মান্য বাংলা আর আমাদের গ্রামে চলতি বাংলার মধ্যে ফারাক অনেক। কোনও-কোনও ক্ষেত্রে এতটাই যে, শান্তিপুর বা কলকাতার লোকের পক্ষে বোঝা মুশকিল। এক বার এক বন্ধু কাঁধ ঝাঁকিয়ে বড়াই করেছিল, 'এনি কাইন্ড অব বাংলার মানে' সে বলে দিতে পারে। তাকে আমাদের চলতি ভাষায় বললাম, ‘‘টকা মেইঝি গেড়িয়া ঘাটে টিঁ টিঁয়া খরা বা ঝাপা ঝুয়েটে — বলো দেখি, কী মানে?’’ বন্ধুটি বলল, ‘এটা আদৌ বাংলা নয়।’

Advertisement

কথাটা সর্বাংশে ভুল নয়। আমি বা আমাদের অঞ্চলের সকলেই পড়েছি, লিখেছি, শিক্ষকের প্রশ্নে উত্তর দিয়েছি মান্য বাংলায়। তাই আমাদের গ্রামে মান্য বাংলার আলাদা কদর। মহানগর বা মফস্সলে যেমন ইংরেজির। সকলেই যে ভাল মান্য বাংলা বলতে পারেন, তা কিন্তু নয়। বললেও তাতে আঞ্চলিকতার টান থাকে। এক বার এক সহপাঠিনীর কাছে খাতা চেয়েও পায়নি এক বন্ধু। টিউশনে স্যর তাকে কারণ জিজ্ঞাসা করায় সে বলে, ‘‘আমি তো ওকে খাতা মাগথিলি। কিন্তু ও দিবে কওয়াও দিলনি।’’ স্যর বললেন, ‘‘উহু, শুদ্ধ বাংলায় বলো!’’টিউশনের ব্যাচে সেই বন্ধুর কথা শুনে সকলে গড়াগড়ি। মেগেছিলাম! সে আবার কেমন শব্দ? সেই থেকে আমার বদ্ধমূল ধারণা হয়েছিল ‘মাগা’ শব্দটি আঞ্চলিক। পরে সেই ভুল ভাঙে, এটি সংস্কৃত থেকে নিঃসৃত। আমার মান্য বাংলায় কথা বলা শুরু কলকাতায় পড়তে এসে। গাঁয়ের লোকজন আশঙ্কা করেছিলেন, ‘টকা অখঁ এঠিকার কথা ভুলিয়া না যায়’ (ছেলে এখন এখানকার কথা ভুলে না যায়)! সত্যি হয়েছে আশঙ্কাটা। এখন গ্রামে গেলে কথা বলার সময়ে কথ্যের মাঝে-মাঝে মান্য ভাষা চলে আসে। তখন উল্টো দিকের লোকটির চোখে-মুখে অস্বস্তি। অনেকে আবার চেষ্টা করেন, আমার সঙ্গে মান্য ভাষায় কথা বলে ব্যাপারটা ঝালিয়ে নিতে। হাসি পায়, কষ্টও হয়। এখন গাঁয়ে ফিরে যখন দেখি বাচ্চারা পুকুরে সাঁতার কাটছে, সেই কথাটা মনে পড়ে— ‘টকা মেইঝি গেড়িয়া ঘাটে টিঁ টিঁয়া খরা বা ঝাপা ঝুয়েটে’। মান্য বাংলায় যার অর্থ, ছেলেমেয়েরা পুকুরঘাটে ঝাঁ-ঝাঁ রোদে সাঁতার কাটছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন