তাঁতের হাটে ত্রস্ত নবদ্বীপ

হাট বসেছে গুরুবারে। শুক্রবারে নয়, নবদ্বীপে হাটবার কিন্তু বৃহঃস্পতি। আর সে দিন খুব ঠেকায় না পড়লে কেউ সচরাচর উডবার্ন রোড কিংবা দ্বাদশ শিবমন্দির লেনে যেতে চান না।

Advertisement

দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়

নবদ্বীপ শেষ আপডেট: ১৬ জুলাই ২০১৬ ০০:৫০
Share:

রাস্তার উপর ত্রিপল টাঙিয়ে রাতারাতি গজিয়ে উঠেছে দোকান। — নিজস্ব চিত্র

হাট বসেছে গুরুবারে।

Advertisement

শুক্রবারে নয়, নবদ্বীপে হাটবার কিন্তু বৃহঃস্পতি। আর সে দিন খুব ঠেকায় না পড়লে কেউ সচরাচর উডবার্ন রোড কিংবা দ্বাদশ শিবমন্দির লেনে যেতে চান না।

বৃহস্পতিবার গোটা দিন আর শুক্রবারের সকালটুকু সপ্তাহের আর পাঁচটা দিনের চেয়ে আলাদা। রোজকার চেনা বড় রাস্তা, শুনশান গলিপথ জুড়ে ওই এক দিনেই লাখ লাখ টাকার কেনাবেচা। তার জেরে নিত্য দিনের পরিচিত পথ রাতারাতি ভোল বদলে অচেনা এবং অসহনীয়ও!

Advertisement

পথের ধারে পসরা সাজিয়ে বিকিকিনির ঠেলায় রুদ্ধ হয় অ্যাম্বুল্যান্সের গতি। ভিতরে ধড়ফড় করে অসুস্থ রোগী। পথের আশায় হাপিত্যেশ করে মাথা চাপড়ায় বাড়ির লোক। ছাড় মেলেনা স্কুল গাড়িরও।

এক সময়ের দেশের বৃহত্তম হস্তচালিত তাঁত কাপড়ের হাট বলে পরিচিতি ছিল এ’টি। ১৯৫৪ সালে প্রতিষ্ঠিত নবদ্বীপ তাঁত কাপড় হাট এরাজ্য তো বটেই বিহার, ওড়িশা, অসম, ত্রিপুরা সহ গোটা পূর্বভারতের তাঁতের কাপড়ের প্রধান বিপণন কেন্দ্র ছিল। নবদ্বীপ থানা কো-অপারেটিভ মার্কেটিং এন্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল সোসাইটি লিমিটেড দ্বারা পরিচালিত নবদ্বীপ তাঁত কাপড় হাটের সুদিনে সাপ্তাহিক কেনাবাচা কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেত। নবদ্বীপ শহরের প্রথম চারতলা ভবন এই বিরাট তাঁত কাপড় হাট কয়েক দশক আগেও ছিল নবদ্বীপের অর্থনীতির মেরুদণ্ড।

এলাকার প্রবীণ ব্যবসায়ীরা জানান, প্রধানত স্থানীয় বেকার যুবকেরা সামান্য দু-এক হাজার টাকার জিনিস নিয়ে হাটের দিন বসতেন সামনের বড় রাস্তার উপর। তারপর আস্তে আস্তে তাঁদের সংখ্যা বাড়তে লাগল। রাস্তার উপর বসা ব্যবসায়ীরা মূল উডবার্ন রোড ছাড়িয়ে দ্বাদশ শিবমন্দির লেন সমেত কমবেশি প্রায় পাঁচশো মিটার জায়গা জুড়ে ছড়িয়ে পড়লেন।

পথের ধারের ওই হাটে সব ধরনের রেডিমেড পোশাকের বিপুল সম্ভার নিয়ে পথ জুড়েই বসে পড়েন ওঁরা। নবদ্বীপ এবং সংলগ্ন বর্ধমানের বিস্তীর্ণ অঞ্চলের গ্রামীণ ক্রেতা-বিক্রেতার দল হুমড়ি খেয়ে পড়েন তাঁদের উপর। পথের উপরেই লক্ষ লক্ষ টাকার বিকিকিনি।

হাটের কারবারি বাবুলাল সাহা বলেন, “এখানে যে দামে যে মানের জামাকাপড় বিক্রি হয় তা অন্য কোথাও মেলে না।” সুলভে সেই বিকিকিনির গন্ধে ভিড় জমানো হাটুরের দাপাদাপিতে কার্যত সাধারনের জন্য নিষিদ্ধ হয়ে যায় ওই এলাকা। রানিরঘাট, বড়াল ঘাট, রানির চড়া-সহ বিস্তীর্ণ অঞ্চলের মানুষ বাধ্য হন ঘুর পথে যাতায়াত করতে।

এমনীতেই নবদ্বীপ শহরের রাস্তাঘাট অত্যন্ত শুরু। তার উপর রাস্তার দু’ধারে ছড়িয়ে রাখা রেডিমেডের পসরা। বেলা বাড়তেই ভিড়ে দম বন্ধ হয়ে হাঁসফাঁস অবস্থা। সেই সঙ্গে রাস্তার উপর দাঁড়িয়ে টোটো, ভ্যানরিকশার মাল তোলা, নামানো চলতেই থাকে। এই অবস্থায় রোগী নিয়ে অ্যাম্বুল্যান্স বা একটি স্কুলের গাড়ি ঢুকে পড়লে পরিস্থিতি শোচনীয় হয়ে ওঠে।

হাটের দিন ওই পথে যেন অদৃশ্য নো এন্ট্রি বোর্ড ঝোলানো থাকে। নবদ্বীপ ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক নিরঞ্জন দাস বলেন, “বৃহস্পতিবারে ওই পথ কার্যত নিষিদ্ধ হয়ে যায় সকলের জন্য। লোকজন খুব অসুবিধায় পড়লেও কিছু বলতে পারেন না। এত মানুষকে কোথাও নিয়ে গিয়ে স্থায়ী ব্যবস্থা করার মতো জায়গা সমিতির নেই।”

নবদ্বীপ তাঁত কাপড় হাটের পরিচালন সমিতির সম্পাদক বাবুল সাহা বলেন, “হাটের বাইরে যারা বসে ব্যবসা করেন তাঁদের সঙ্গে আমাদের কোন সম্পর্ক নেই। ওখানে যারা ব্যবসা করেন তাঁরা নিজের মতো করেই ব্যবসা করেন। তবে যে ভাবে বাইরে ভিড় বাড়ছে তাতে ভয় পাই। যদি কখন বড় কোনও দুর্ঘটনা ঘটে!”

নবদ্বীপের পুরপ্রধান বিমানকৃষ্ণ সাহা জানিয়েছেন ওই এলাকাতে নবদ্বীপ পুরসভা রাজ্যের ক্ষুদ্র এবং কুটির শিল্প দপ্তরের অর্থানুকূল্যে তৈরি করছেন মার্কেটিং কমপ্লেক্স। যার নাম দেওয়া হয়েছে ‘তাঁতিবাজার’। একবিঘা জমির উপর অত্যাধুনিক পাঁচতলা ভবনের নির্মাণ কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। সে দিকেই তাকিয়ে রয়েছেন নবদ্বীপের মানুষ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন