পদক্ষেপ নেই, দূরশিক্ষা সুদূর কল্যাণীতে

২০১৭ সালে স্নাতকোত্তর প্রথম বর্ষে ভর্তি হওয়া পড়ুয়াদের ফাইনাল ডিগ্রি পাওয়া নিয়েও সমস্যা হতে পারে। কারণ, কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের দূরশিক্ষা বিভাগে পঠনপাঠন চালানোর অনুমতি রয়েছে ২০১৮ সাল অবধি।

Advertisement

মনিরুল শেখ

কল্যাণী শেষ আপডেট: ১৮ ডিসেম্বর ২০১৭ ০১:৩৮
Share:

স্নাতকোত্তর স্তরের দূরশিক্ষা পাঠক্রম চালানোর জন্য বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) অনুমতি নেওয়ার সময়সীমা পেরিয়েছে আগেই। চলতি বছরের ৩১ অক্টোবরের মধ্যে অনলাইনে আবেদন করে ওই অনুমতি নিতে হত।

Advertisement

কিন্তু কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সেই সময়সীমা লঙ্ঘন করেছে। এরই মধ্যে কেটে গিয়েছে মাস দেড়েক। অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এখনও দিল্লিতে ইউজিসির সদর দফতরে গিয়ে দূরশিক্ষা পাঠক্রমের পঠন-পাঠন চালানোর অনুমতি নেওয়ার জন্য কোনও পদক্ষেপই করছেন না। এর ফলে ২০১৮ সাল থেকে দূরশিক্ষা বিভাগে ছাত্র ভর্তি নেওয়ার প্রক্রিয়া অনিশ্চিত হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল হয়ে উঠেছে।

এমনকী, ২০১৭ সালে স্নাতকোত্তর প্রথম বর্ষে ভর্তি হওয়া পড়ুয়াদের ফাইনাল ডিগ্রি পাওয়া নিয়েও সমস্যা হতে পারে। কারণ, কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের দূরশিক্ষা বিভাগে পঠনপাঠন চালানোর অনুমতি রয়েছে ২০১৮ সাল অবধি। ২০১৭ সালে ভর্তি হওয়া পড়ুয়াদের ডিগ্রি পাবেন ২০১৯ সাল নাগাদ। এরই মধ্যে ওই বিভাগের জন্য ১৭ জন কর্মী নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে রাজ্যের উচ্চশিক্ষা মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের দ্বারস্থ হয়েছেন।

Advertisement

ওই বিভাগের আধিকারিক থেকে শুরু করে সকলেই চুক্তির ভিত্তিতে নিযুক্ত। ফলে দূরশিক্ষা বিভাগ বন্ধ হয়ে গেলে তাঁদের চাকরিতে পাকাপাকি দাঁড়ি পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। প্রতি বছর বিভিন্ন বিভাগে দূরশিক্ষায় স্নাতকোত্তর স্তরে অন্তত হাজার সাতেক পড়ুয়া ভর্তি হন। এমত অবস্থায় সামনের শিক্ষাবর্ষ থেকে ওই বিপুল সংখ্যক পড়ুয়া উচ্চ শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হয়ে যাবেন।

দূরশিক্ষা নিয়ে বিভিন্ন রকম জটিলতা কাটাতে গত ৯ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ চার সদস্যের একটি কমিটি গড়ে। কমিটি দু’দফায় বৈঠকের পরে ২০ নভেম্বর অর্ন্তবর্তী রিপোর্ট জমা দেয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মসমিতির এক সদস্য জানাচ্ছেন, দিনকয়েক আগে কর্মসমিতির বৈঠকে ওই রিপোর্ট নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সেখানে নির্দিষ্ট সময়ে অনুমতি না নেওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে তুলোধোনা করা হয়েছে।

রিপোর্টে উল্লেখ রয়েছে, পর্যাপ্ত সংখ্যক পূর্ণ সময়ের শিক্ষক-অশিক্ষক কর্মী ও পরিকাঠামোগত ঘাটতির কথা উল্লেখ করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কোর্স চালানোর জন্য আবেদনই করেনি। কিন্তু, ঘাটতি মেটানোর জন্য ২০১৮ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত সময় পাওয়া যেত। কর্তৃপক্ষ উদাসীনতার পরিচয় দিয়ে কোর্স চালানোর জন্য আবেদন করেননি। তিন পাতার রিপোর্টের শেষে উল্লেখ রয়েছে, অতি সত্ত্বর দিল্লিতে গিয়ে ২০১৮ সাল থেকে পুনরায় ছাত্র ভর্তির আবেদন জানাতে হবে কর্তৃপক্ষকে। কিন্তু কর্তৃপক্ষ এখনও পর্যন্ত কোনও পদক্ষেপই করছে না। কর্মী সমিতির এক সদস্য বলছেন, উপাচার্য বৈঠকে ব্যর্থতা ঢাকতে নানা সাফাই গাইতে ব্যস্ত ছিলেন। কিন্তু, তিনি উদ্যোগী হয়ে দূরশিক্ষা বিভাগকে রক্ষা করছেন না।

দূরশিক্ষা বিভাগের এক কর্মীর অভিযোগ, তাঁরা বিষয়টি নিয়ে উপর মহলে চিঠি পাঠিয়েছেন বলে রুষ্ট উপাচার্য। তার জন্য তিনি সব কর্মীদের লিখিত ভাবে ক্ষমা চাইয়ে নিয়েছেন। আর কর্মীদের সঙ্গে উপাচার্যের এই লড়াইয়ের মধ্যে পড়ে আরও সুদূর হচ্ছে দূরশিক্ষার ভবিষ্যত। চাপড়ার বড় আন্দুলিয়ার বাসিন্দা অনুফা খাতুন জানাচ্ছেন, সামনের শিক্ষাবর্ষে তিনি দূরশিক্ষা বিভাগে বাংলায় এমএ করার পরিকল্পনা করেছিলেন। এখন যা অবস্থা। সেই সিদ্ধান্তে ইতি টানছেন তিনি। এ ব্যাপারে জানার জন্য উপাচার্য শঙ্করকুমার ঘোষকে ফোন করা হলে তিনি তা ধরেননি। উত্তর দেননি এসএমএস-এরও। ফলে তাঁর প্রতিক্রিয়া মেলেনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন