বহরমপুরে নির্বাচন কমিশনের বিশেষ পর্যবেক্ষক দল।-গৌতম প্রামাণিক
রাতেই এসে পড়েছিলেন তাঁরা। প্রশাসনের তাবড় কর্তাদের তলব করে এক প্রস্ত আলোচনা সেরে হাত নেড়ে সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, ‘‘হমলোগ অভিতক সন্তুষ্ট হ্যায় (আমরা এখনও পর্যন্ত সন্তুষ্ট)।’’ কার প্রতি, কেনই বা— সে সবরে উত্তর মেলেনি। সাদা স্করপিও সেঁদিয়ে গিয়েছিল সার্কিট হাউসে।
দৌড়টা শুরু হল শনিবার সকালে। বহরমপুরের রওনার হওয়ার আগে নদিয়ার প্রান্তিক গ্রাম জুরানপুরে গিয়েই নির্বাচন কমিশনের বিশেষ নজরদারি দলের জেকে রাও-এর হঠাৎই চোখে পড়ে গিয়েছিল স্বাস্থ্যকেন্দ্রের লাগোয়া পুলিশ ক্যাম্পটি। গাড়ি থেমে গেল শব্দ করে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তন্ময় সরকারকে ডেকে নিয়ে শুরু হল কথোপকথন। বছর খানেক আগে পাশের নওদা গ্রামে সংঘর্ষে তিন জন খুন হয়েছিলেন। তা নিয়ে খুঁটিনাটি দীর্ঘ আলোচনায় জেনে নিলেন। তার পর প্রশ্ন ছুড়ে দিলেন, এত বড় ঘটনার পরেও এই সামান্য কয়েক জন পুলিশ কর্মী নিয়ে ক্যাম্প চলছে? খোঁজ নিলেন, স্থানীয় থানার অ-আ-ক-খ। তার পর তাঁদের গাড়ি ছুটল বহরমপুরের দিকে।
মুর্শিদাবাদ জেলা প্রশাসনিক ভবনে সচিত্র ভোটার পরিচয়পত্রের স্থায়ী কেন্দ্র (পার্মানেন্ট এপিক সেন্টার)-এ শনিবার তাঁদের যাওয়ার কথা ছিল সকাল ১০টায়। নির্বাচন কমিশনের বিশেষ পর্যবেক্ষক দলের রাজীবকুমার জৈন বহরমপুরে পৌঁছে যান কাঁটায় কাঁটায় দশটা। তখনও জেলা প্রশাসনের কোনও আধিকারিকের দেখা নেই।
বহরমপুর গার্লস কলেজেও ছবিটা একইরকম। কমিশনের কর্তারা এসে পড়েছেন অথচ ছাত্রীদের দেখা নেই। অবশেষে, প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা অপেক্ষার পরে কলেজের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের ঘরে ছাত্রীদের নিয়ে সচেতনতা শিবিরে বসলেন কর্তারা।
দুপুরে ডোমকলে গিয়েছিলেন তাঁরা। সীমান্তের গ্রামে তাঁদের পা পড়া নিয়ে প্রশাসন ছিল তঠস্থ। রাজীবকুমার জৈনকে সামনে পেয়ে উঠে এল নানা প্রশ্ন। ডোমকল কলেজের ছাত্রছাত্রীরা কেউ জানতে চাইলেন, প্রবাসী ভারতীয়দের ভোটাধিকার কবে হবে? ভোটের দিনে গণ্ডগোল হলে কোথায় জানাব? কারও অভিযোগ, ভোটদানের দিন শুরুতে খোলা থাকলেও দুপুর গড়াতেই প্রশাসনের কর্তা থেকে পর্যবেক্ষকদের ফোন বন্ধ থাকে। সব শুনে মাথা নাড়েন রাজিবকুমার। তিনি বলেন, ‘‘এ বার আমরা চলে এসেছি, দেখুন না কি হয়।’’ ডোমকলের বসন্তপুর কলেজের সভাকক্ষে ছাত্র-ছাত্রীদের সামনে এভাবেই নিজেকে মেলে ধরলেন তিনি। ভোটার কার্ড বা নতুন ভোটার আছে কিনা, ভোটযন্ত্র দেখেছে কি না তাও জানতে চান। এরপর
তিনি জলঙ্গির সাগরপাড়া এলাকার বেশ কয়েকটি গ্রামে গিয়ে সাধারণ মানুষের কাছে জানতে চান ভোটের কার্ড আছে কি না। ‘ভোটের বদলে নোট’— কেউ দেখাচ্ছে কিনা, দেখানো হচ্ছে কিনা ভয়?
এ দিনের বিশেষ নির্বাচনী দলে ছিলেন—জেকে রাও, সুরিন্দর সিংহ, টিসি কম এবং সুনীল দত্ত। তাঁর মধ্যে সুনীল দত্ত (আইপিএস, রাজস্থানের আইজি), জেকে রাও এবং টিসি কম নির্বাচন কমিশনের সচিব পদে ও সুরিন্দর সিংহ নির্বাচন কমিশনের সেকশন অফিসার পদে রয়েছেন।